টানটান উত্তেজনায় ৫ ম্যাচের অ্যাশেজ সিরিজ ২-২ ড্রয়ে নিষ্পত্তি হলেও ইংল্যান্ড ও অস্ট্রেলিয়া, উভয় দলকে বিরাট শাস্তির মুখে পড়তে হয়। শুধু আর্থিক জরিমানা গুনতে হয় এমন নয়, বরং ওয়ার্ল্ড টেস্ট চ্যাম্পিয়নশিপের পয়েন্ট টেবিলে বিরাট ধাক্কা খায় উভয় শিবির। কষ্টার্জিত পয়েন্ট কাটা যায় ইংল্যান্ড ও অস্ট্রেলিয়ার।
প্রাথমিকভাবে ৫ ম্যাচের সিরিজ থেকে উভয় দলের সংগ্রহ করার কথা ২৮ পয়েন্ট করে। কেননা উভয় দলই ২টি করে ম্যাচ জিতেছে ও ১টি ম্যাচ ড্র করেছে। প্রতিটি জয়ের জন্য ১২ পয়েন্ট করে ও ড্র ম্যাচে ৪ পয়েন্ট করে পাওয়ার কথা দু'দলের। আইসিসির শাস্তির কবলে পড়ে শেষমেশ ইংল্যান্ডের জোটে মোটে ৯ পয়েন্ট। তাদের কাটা যায় ১৯ পয়েন্ট। অর্থাৎ, ৫ ম্যাচের সিরিজ থেকে যত পয়েন্ট সংগ্রহ করেছে ইংল্যান্ড, কাটা গিয়েছে তার দ্বিগুণেরও বেশি। অন্যদিকে অস্ট্রেলিয়ার খাতায় পড়ে রয়েছে সাকুল্যে ১৮ পয়েন্ট। অর্থাৎ, তাদের কাটা গিয়েছে ১০ পয়েন্ট।
কেন দু'দলের পয়েন্ট কেটে নেওয়া হয়:-
ওয়ার্ল্ড টেস্ট চ্যাম্পিয়নশিপের প্লেয়িং কন্ডিশন অনুযায়ী স্লো ওভার-রেটের শাস্তি হিসেবে কাটা যায় পয়েন্ট। অর্থাৎ নির্ধারিত সময়ে বোলিং কোটা শেষ করতে না পারলে সংশ্লিষ্ট দলকে মাশুল দিতে হয় টেস্ট চ্যাম্পিয়নশিপের পয়েন্ট খুইয়ে। প্রতি ওভার পিছিয়ে থাকার জন্য কেটে নেওয়া হয় ১ পয়েন্ট করে।
সেই সঙ্গে প্রতি ওভার পিছিয়ে থাকার জন্য ক্রিকেটারদের ম্যাচ ফি-র ৫ শতাংশ (আগে ছিল ২০ শতাংশ) হারে সর্বোচ্চ ৫০ শতাংশ জরিমানা করার শাস্তিবিধানও রয়েছে।
অ্যাশেজে কীভাবে কাটা যায় ইংল্যান্ডের পয়েন্ট:-
প্রথম টেস্ট: বার্মিংহ্যামের প্রথম টেস্টে ইংল্যান্ড হারে। সুতরাং, ম্যাচ থেকে তারা কোনও পয়েন্ট পায়নি। তবে তারা নির্ধারিত সময়ে ২ ওভার পিছিয়ে থাকায় তাদের ২ পয়েন্ট কাটা যায়। সুতরাং, ইংল্যান্ডের খাতায় থাকে মাইনাস ২ পয়েন্ট।
দ্বিতীয় টেস্ট: লর্ডসের দ্বিতীয় টেস্টও ইংল্যান্ড হারায় ম্যাচ থেকে তারা কোনও পয়েন্ট পায়নি। তবে এই ম্যাচে তারা ৯ ওভার পিছিয়ে থাকায় তাদের ৯ পয়েন্ট কাটা যায়। সুতরাং দ্বিতীয় টেস্টের পরে ইংল্যান্ডের খাতায় থাকে সাকুল্যে মাইনাস ১১ পয়েন্ট।
তৃতীয় টেস্ট: হেডিংলের তৃতীয় টেস্ট জিতে ইংল্যান্ড ১২ পয়েন্ট সংগ্রহ করে। এই ম্যাচে তাদের স্লো ওভার-রেটের আওতায় পড়তে হয়নি। ফলে আগের ২টি ম্যাচের শাস্তির মাইনাস ১১ পয়েন্ট বাদ দিয়ে তৃতীয় টেস্টের পরে ইংল্যান্ডের খাতায় পড়ে থাকে মাত্র ১ পয়েন্ট।
চতুর্থ টেস্ট: ম্যাঞ্চেস্টারের চতুর্থ টেস্ট ড্র হওয়ায় ইংল্যান্ড ৪ পয়েন্ট সংগ্রহ করে। তবে ৩ ওভার পিছিয়ে থাকায় তাদের ৩ পয়েন্ট কাটা যায়। অর্থাৎ, চতুর্থ টেস্ট থেকে মাত্র (৪-৩) ১ পয়েন্ট পায় ইংল্যান্ড। অর্থাৎ, আগের ১ পয়েন্ট মিলিয়ে সিরিজের চতুর্থ টেস্টের পরে ইংল্যান্ডের খাতায় থাকে সাকুল্যে ২ পয়েন্ট।
পঞ্চম টেস্ট: ওভালের শেষ টেস্ট জিতে ইংল্যান্ড ১২ পয়েন্ট সংগ্রহ করে। তবে ৫ ওভার পিছিয়ে থেকে ৫ পয়েন্ট খোয়ায় তারা। সুতরাং, শেষ টেস্ট থেকে ইংল্যান্ড (১২-৫) ৭ পয়েন্ট সংগ্রহ করে। আগের ২ পয়েন্ট মিলিয়ে অ্যাশেজের পঞ্চম টেস্টের পরে ইংল্যান্ডের খাতায় থাকে সাকুল্যে ৯ পয়েন্ট।
অ্যাশেজে কীভাবে কাটা যায় অস্ট্রেলিয়ার পয়েন্ট:-
প্রথম টেস্ট: বার্মিংহ্যামের প্রথম টেস্ট জিতে অস্ট্রেলিয়া ১২ পয়েন্ট সংগ্রহ করে।
দ্বিতীয় টেস্ট: লর্ডসের দ্বিতীয় টেস্ট জিতে অস্ট্রেলিয়া আরও ১২ পয়েন্ট সংগ্রহ করে। ফলে দ্বিতীয় টেস্টের শেষে তাদের পয়েন্ট দাঁড়ায় সাকুল্যে ২৪।
তৃতীয় টেস্ট: হেডিংলের তৃতীয় টেস্টে অস্ট্রেলিয়া হারে। ফলে কোনও পয়েন্ট পায়নি তারা। সুতরাং, তৃতীয় টেস্টের পরে অস্ট্রেলিয়ার খাতায় থাকে আগের মতোই ২৪ পয়েন্ট।
চতুর্থ টেস্ট: ম্যাঞ্চেস্টারের চতুর্থ টেস্ট ড্র হওয়ায় অস্ট্রেলিয়া ৪ পয়েন্ট পায়। তবে তারা ১০ ওভার পিছিয়ে থাকায় ১০ পয়েন্ট কাটা যায় তাদের। অর্থাৎ, তৃতীয় টেস্টে তাদের সংগ্রহ দাঁড়ায় মাইনাস ৬ পয়েন্ট। আগের ২৪ পয়েন্ট থেকে ৬ পয়েন্ট বাদ দেওয়ার পরে অস্ট্রেলিয়ার খাতায় থাকে ১৮ পয়েন্ট।
পঞ্চম টেস্ট: ওভালের শেষ টেস্ট অস্ট্রেলিয়া হারায় কোনও পয়েন্ট পায়নি তারা। ফলে ৫ ম্যাচের সিরিজ থেকে অস্ট্রেলিয়া সংগ্রহ করে সাকুল্যে ১৮ পয়েন্ট।
দু'দলের ক্রিকেটারদের জরিমানা হয় কত:-
ইংল্যান্ডের ক্রিকেটারদের সিরিজের প্রথম টেস্টে (৫x২) ১০ শতাংশ, দ্বিতীয় টেস্টে (৫x৯) ৪৫ শতাংশ, চতুর্থ টেস্টে (৫x৩) ১৫ শতাংশ ও পঞ্চম টেস্টে (৫x৫) ২৫ শতাংশ ম্যাচ ফি জরিমানা দিতে হয়। অস্ট্রেলিয়ার ক্রিকেটারদের শুধু চতুর্থ টেস্টের জন্য (৫x১০) ৫০ শতাংশ ম্যাচ ফি জরিমানা গুনতে হয়।
ইংল্যান্ড ও অস্ট্রেলিয়ার শাস্তির পরে বিশ্ব টেস্ট চ্যাম্পিয়নশিপ ২০২৩-২৫'এর আপডেটেড পয়েন্ট টেবিল:-
১) পাকিস্তান: ম্যাচ-২, জয়-২, হার-০, ড্র-০, পয়েন্ট-২৪, পয়েন্টের শতকরা হার- ১০০।
২) ভারত: ম্যাচ-২, জয়-১, হার-০, ড্র-১, পয়েন্ট-১৬, পয়েন্টের শতকরা হার- ৬৬.৬৭।
৩) অস্ট্রেলিয়া: ম্যাচ-৫, জয়-২, হার-২, ড্র-১, পয়েন্ট-১৮, পয়েন্টের শতকরা হার- ৩০.০০।
৪) ওয়েস্ট ইন্ডিজ: ম্যাচ-২, জয়-০, হার-১, ড্র-১, পয়েন্ট-৪, পয়েন্টের শতকরা হার- ১৬.৬৭।
৫) ইংল্যান্ড: ম্যাচ-৫, জয়-২, হার-২, ড্র-১, পয়েন্ট-৯, পয়েন্টের শতকরা হার- ১৫.০০।
৬) শ্রীলঙ্কা: ম্যাচ-২, জয়-০, হার-২, ড্র-০, পয়েন্ট-০, পয়েন্টের শতকরা হার- ০।
সুতরাং, ইংল্যান্ড ও অস্ট্রেলিয়ার শাস্তিতে লাভ হয় বাকিদের। অস্ট্রেলিয়ার থেকে ব্যবধান বাড়ে ভারত-পাকিস্তানের। ইংল্যান্ডকে টপকে লিগ টেবিলের চারে উঠে আসে ওয়েস্ট ইন্ডিজ। ৬টি দেশ নতুন টেস্ট চ্যাম্পিয়নশিপ চক্রে নিজেদের অভিযান শুরু করেছে। নিউজিল্যান্ড, বাংলাদেশ ও দক্ষিণ আফ্রিকা এখনও টেস্ট চ্যাম্পিয়নশিপের অধীনে কোনও সিরিজ খেলেনি। তাই ক্রমতালিকায় এখনও তাদের নাম নেই।
রোহিতদের প্রস্তুতির রোজনামচা, পাল্লা ভারি কোন দলের, ক্রিকেট বিশ্বকাপের বিস্তারিত কভারেজ, সঙ্গে প্রতিটি ম্যাচের লাইভ স্কোরকার্ড । দুই প্রধানের টাটকা খবর, ছেত্রীরা কী করল, মেসি থেকে মোরিনহো, ফুটবলের সব আপডেট পড়ুন এখানে।