মঙ্গলগ্রহে পাড়ি দিল নাসার চার স্বেচ্ছাসেবক। তবে বাস্তবে তাঁরা মঙ্গলের মাটিতে পা দেবে না। গত ২৫ জুন চারজন স্বেচ্ছাসেবকের একটি দল একটি সিমুলেটেড মঙ্গলগ্রহে প্রবেশ করেছেন, যেখান থেকে তাঁরা এক বছরেরও বেশি সময় ধরে বসবাস করবেন। তাদের মূল লক্ষ্য অন্য গ্রহে দীর্ঘমেয়াদী বসবাসের জন্য অভিজ্ঞতা সঞ্চয় করা। তাই তাঁরা কোনও বিরতি না নিয়েই এক বছর টানা এই কৃত্রিম মঙ্গলে বসবাস করবে। এই মিশনটিকে CHAPEA (ক্রু হেলথ অ্যান্ড পারফরম্যান্স এক্সপ্লোরেশন এনালগ) বলা হচ্ছে। ২০২৬ সালের মধ্যে আরও দুটি সিমুলেশন প্রকল্পের ভাবনা রয়েছে যার মাধ্যমে মহাকাশচারীদের প্রাথমিক ধারণা হবে দীর্ঘদিন মহাকশে থাকার ব্যাপারে।
CHAPEA টেক্সাসের হিউস্টনে নাসার জনসন স্পেস সেন্টারে অবস্থিত। মার্স ডিউন আলফা নামক আবাসস্থলটি একটি 1700 বর্গফুট থ্রি-ডি-প্রিন্টেড থাকার জায়গা। এখানে ক্রুরা বাস করবে, কাজ করবে, ব্যায়াম করবে, ঘুমাবে এবং পরীক্ষা-নিরীক্ষার কাজ করবে। ভার্চুয়াল রিয়েলিটি প্রযুক্তিকে কাজে লাগিয়ে মিশনে অতিরিক্ত যানবাহনের ক্রিয়াকলাপও অন্তর্ভুক্ত করা হবে, যেখানে ক্রু সদস্যরা তাদের আবাসস্থল ছেড়ে লাল বালি বেছানো অংশে প্রবেশ করবে। তাদের এই সিমুলেটেড স্পেসওয়াকের জন্য স্পেস স্যুট ব্যবহার করতে হবে।
চার-সদস্যের ক্রুবাহিনী প্রত্যেকেই বিভিন্ন বিষয়ে সাবলম্বি। এই দলে রয়েছেন কেলি হ্যাস্টন, যিনি একজন একজন জীববিজ্ঞানী। এছাড়া রস ব্রকওয়েল রয়েছেন, যিনি একজন স্ট্রাকচারাল ইঞ্জিনিয়ার, নাথান জোন্স এই ক্রু দলের একমাত্র চিকিৎসক। নেভি মাইক্রোবায়োলজিস্ট আঙ্কা সেলারিউ রয়েছেন এই দলে। একটি মিশনের জন্য অনুমোদিত হওয়ার আগে তাদের মহাকাশচারী প্রার্থীদের মতোই একটি পরীক্ষায় উত্তীর্ণ হতে হয়েছিল।
স্বেচ্ছাসেবকদের তাদের আবাসস্থলে প্রবেশের ঠিক আগে CHAPEA-এর প্রধান পরিদর্শক গ্রেস ডগলাস বলেছেন, ‘এখানে আমরা যে জ্ঞান অর্জন করেছি তা আমাদের মঙ্গলে মানুষকে পাঠাতে এবং তাদের নিরাপদে বাড়িতে আনতে সাহায্য করবে। মিশনটির মাধ্যমে আসলেই এক বিচ্ছিন্ন জগতে বসবাসের অভিজ্ঞতা করবেন বিজ্ঞানীরা। ক্রু সদস্যরা শুধুমাত্র নির্দিষ্ট সময় অন্তরই বাইরের বিশ্বের সাথে যোগাযোগ করতে সক্ষম হবে। এই বার্তাগুলি পৃথিবীতে পৌঁছতে ২২ মিনিট পর্যন্ত সময় নিতে পারে এবং সেই নিষেধাজ্ঞাটি CHAPEA-তে প্রয়োগ করা হচ্ছে।
ক্রুরাও হিমায়িত-শুকনো খাবারের ওপর নির্ভর করেই জীবন যাপন করবে, যা মঙ্গলগ্রহের নভোচারীদের খেতে হবে এবং একটি বাস্তব মিশনের মতোই নানান ক্রিয়াকলাপ করবেন ক্রু সদস্যরা। এমনকি বাসস্থানটি মহাকাশ মিশনের কথা মাথায় রেখে ডিজাইন করা হয়েছে। পৃথিবী থেকে মঙ্গল গ্রহে আপনার যা কিছু প্রয়োজন তা আনা নিষেধ, তাই ইন-সিটু রিসোর্স ইউটিলাইজেশন প্রযুক্তি পরীক্ষা করার জন্য তাদের বাসস্থান 3D প্রিন্ট করা হয়েছিল।
বাসস্থানে এয়ারলক, হ্যাচ এবং একটি মেডিকেল স্টেশন রয়েছে। যদিও ক্রুরা চিকিৎসার জন্য জরুরী ভিত্তিতে রওনা হতে পারে, তাঁরা আশা করেন ছোটখাটো স্বাস্থ্য সংক্রান্ত সমস্যাগুলি ক্রু সদস্যরা নিজেরাই সামলে নিতে পারবে। অবশ্যই CHAPEA এর এই অভিযানে মঙ্গল অভিযানের সবকিছু অনুকরণ করা সম্ভব হবে না। ক্রুদের মঙ্গলগ্রহের মাধ্যাকর্ষণ মোকাবেলা করতে হবে ন। কিন্তু বেশ কিছু অবাক করা চ্যালেঞ্জ থাকবে, যেমন যন্ত্রপাতির ব্যর্থতা বা পানির ঘাটতি মোকাবিলা করতে হবে তাদের।
CHAPEA1 অভিযানের ক্রু সসদ্যরা ২০২৪ সালের জুলাই মাসে তাদের মঙ্গল অভিযানের মহড়া শেষে বেরিয়ে আসবেন।