প্রকৃতি পরিবেশ সম্পর্কে মানুষের জ্ঞান হওয়ার পর থেকেই দূর আকাশের উজ্জ্বল চাঁদের প্রতি তার আগ্রহ জন্মেছি। সময় যত এগিয়েছে চাঁদের মাটি স্পর্শ করা থেকে চাঁদ সম্পর্কে বহু অজানা তথ্য সামনে এসেছে আমাদের। আরও একবার চমকে দেওয়ার মত তথ্য সামন এল সাম্প্রতিক অনুসন্ধানের ফল।
এর আগে মহাকাশ বিজ্ঞানীদের ধারণা ছিল চাঁদের অধিকাংশ অংশের গড় বয়স প্রাক্য ২০ কোটি বছরের কাছাকাছি। কিন্তু সাম্প্রতিক তথ্য বলছে আরও প্রাচীন এই উপগ্রহের জন্মবৃত্তান্ত। আমাদের নিকটতম উপগ্রহ চাঁদের গর্তগুলি গবেষণা করে গবেষকরা বলছেন চাঁদের বয়স আসলে আগের ধারনার থেকে অনেকটাই পুরোনো। নরওয়ে এবং ফ্রান্সের বিজ্ঞানীরা চন্দ্র পৃষ্ঠের সময় জানার জন্য বিভিন্ন সিস্টেমের সমন্বয় এবং ক্রমাঙ্কন করার একটি নতুন উপায় খুঁজে বের করেছেন। চাঁদের পৃষ্ঠের বেশিরভাগ অংশই আমরা আগে যা ভেবেছিলাম তার থেকে প্রায় 200 মিলিয়ন বছর পুরনো, বিজ্ঞানীরা ঘোষণা করেছেন।
অধ্যাপক স্টেফানি ওয়ার্নার বলেন, "চাঁদের উপর প্রাকৃতিক প্রভাব বা চিহ্নগুলি অধ্যয়ন করলে মনে হবে প্লেট টেকটকিন প্রকিয়া ছাড়া পৃথিবীর সদৃশ্য। আমরা গবেষণা থেকে বুঝতে পারছি চন্দ্র ভূত্বকের উল্লেখযোগ্য অংশগুলি ২০ কোটি বছরেরও পুরোনো। এতদিনের চাঁদ সম্পর্কে বিজ্ঞানীদের ধারণা বদলাতে চলছে বলেই মন করা হচ্ছে। চাঁদের ক্রেটার অংশগুলির শিলাপরীক্ষা করার পরেই বিভ্রান্তিতে পড়েন বিজ্ঞানীরা। অ্যাপেলো অভিযানে প্রান্ত তথ্যের সাথে ক্রেটার কাউন্টিং পদ্ধতিতে প্রাপ্ত চাঁদের ভূপৃষ্ঠের বয়সের মধ্যে গড়মিল দেখা যায়। পুনরায় ক্রেটার কাউন্টিং করা হয়। এতেই নতুন তথ্য পান বিজ্ঞানীরা।
বিভিন্ন চন্দ্র অভিযানে সংগৃহীত তথ্যের সাথেও তুলনামূলক পরীক্ষা করে দেখে ক্রেটার কাউন্টিংয়ের তথ্য। বিশেষ করে ভারতের চন্দ্রযান- ওয়ান ও অ্যাপোলো অভিযানের নমুনা তুলনা করে বিজ্ঞানীরা সিদ্ধান্তে পৌঁছেছেন চাঁদের বয়স ২০ কোটি বছরেরও বেশি। এখন দেখার এই গবেষণায় সিলমোহর পড়তে কত সময় লাগে।
চাঁদের ক্রেটার বা গর্তটিতে আমরা চন্দ্র কলঙ্ক নাম দিলেও চাঁদের জন্মলগ্নের রহস্য লুকিয়ে আছে এই গর্তগুলির উৎপত্তিকালের মধ্যেই। লাভা দ্বার গঠিত এই ক্রেটারগুলির শিলা পরীক্ষা করেই তাই অনেকখানি ধারণা পাওয়া সম্ভব হয় চাঁদের উৎপত্তি ও বিবর্তন সম্পর্কে। যত গবেষণার কাজ এগোবে, আমাদের আশ্চর্য করেই নিত্যনতুন তথ্য সামনে আসবে আমাদের। চাঁদের দক্ষিণ মেরুর শীতল পাহাড়ি অঞ্চলে এখনও গিয়ে পৌঁছতে পারেনি কোনও চন্দ্রযান। এই মেরু প্রদেশের কী রহস্য অপেক্ষা করে আসে, তাও জানা নেই কারও। আপাতত ক্রেটার ডেটিং পদ্ধতিতে জানা গেল চাঁদের জন্মইতিহাস আমাদের আগের ধারণার থেকেও অনেকটাই পুরোনো।