রাম মন্দিরের উদ্বোধনের আগে শেষ পর্যায়ের প্রস্তুতি চলছে৷ অযোধ্যায় এই মন্দিরের প্রাণ প্রতিষ্ঠা অনুষ্ঠান হতে চলেছে আগামীকাল ২২ জানুয়ারি। প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদী প্রাণ প্রতিষ্ঠা অনুষ্ঠানে সভাপতিত্ব করবেন, যা লক্ষ্মীকান্ত দীক্ষিতের নেতৃত্বে পুরোহিতদের একটি দল দ্বারা পরিচালিত হবে। কয়েকটি রাজ্য এই উপলক্ষ্যে উদযাপন করার জন্য সোমবারে সরকারি ছুটি বা অর্ধেক কাজের দিন ঘোষণাও করেছে। তবে যে তথ্য আপনাকে চমকে দেবে তার একটি তালিকা দেওয়া হল।
১। ভারতের অন্যতম বড় মন্দির : শীঘ্রই উদ্বোধন হতে যাওয়া রাম মন্দিরটি তার নকশা কাঠামোর উপর ভিত্তি করে ভারতের বৃহত্তম মন্দির হতে প্রস্তুত৷ মন্দিরের নকশার জন্য দায়ী সোমপুরা পরিবার, প্রকাশ করেছে যে ৩০ বছর আগে চন্দ্রকান্ত সোমপুরার ছেলে আশিস সোমপুরার দ্বারা স্থাপত্য পরিকল্পনার পরিকল্পনা করা হয়েছিল। পরিবারের মতে, মন্দিরটি ২৮ হাজার বর্গফুটের একটি বিস্তৃত এলাকা জুড়ে প্রায় ১৬১ ফুট উচ্চতায় দাঁড়াবে বলে আশা করা হচ্ছে।
২। স্থপতিরা : রিপোর্ট অনুসারে, তারা বিখ্যাত সোমপুরা পরিবার থেকে এসেছেন, যা বিশ্বব্যাপী ১০০টিরও বেশি মন্দির তৈরির জন্য পরিচিত, যার মধ্যে রয়েছে শ্রদ্ধেয় সোমনাথ মন্দির। প্রধান স্থপতি চন্দ্রকান্ত সোমপুরার নেতৃত্বে এবং তাঁর ছেলে আশিস ও নিখিল দ্বারা সমর্থিত, তারা মন্দির স্থাপত্যে প্রজন্মের পর প্রজন্মের উত্তরাধিকার তৈরি করেছে।
৩। পবিত্র ভিত্তি : রাম মন্দিরের ভিত্তি গভীর আধ্যাত্মিক তাৎপর্য রাখে, কারণ এটি নির্মাণের জন্য ২৫৮৭টি অঞ্চল থেকে পবিত্র মাটি আনা হয়েছিল৷ কিছু উল্লেখযোগ্য স্থানের মধ্যে রয়েছে ঝাঁসি, বিথুরি, হলদিঘাটি, যমুনোত্রী, চিতোরগড়, স্বর্ণ মন্দির এবং অন্যান্য অনেক পবিত্র স্থান।
৪। থাইল্যান্ডের মাটি : আন্তর্জাতিক আধ্যাত্মিক বন্ধুত্বের অঙ্গভঙ্গি হিসাবে, চলতি বছরের ২২ জানুয়ারি রামলাল্লার অভিষেক অনুষ্ঠানের জন্য থাইল্যান্ড থেকে মাটি পাঠানো হয়েছে। যা ভৌগলিক সীমানার বাইরে ভগবান রামের উত্তরাধিকারের সর্বজনীন অনুরণনকে শক্তিশালী করে।
৫। নদীর অবদান : প্রতিবেদনে যোগ করা হয়েছে যে ৫ অগাস্ট পবিত্র অনুষ্ঠানটিতে ভারত জুড়ে ১৫০টি নদীর পবিত্র জল দিয়ে সম্পন্ন হয়েছিল।
৬। ‘শ্রী রাম’ ইট : এটি লক্ষ্য করা আকর্ষণীয় যে রাম মন্দির নির্মাণে ব্যবহৃত ইটগুলিতে ‘শ্রী রাম’ শিলালিপি রয়েছে। এটি রাম সেতু নির্মাণের সময় একটি প্রাচীন অনুশীলনের প্রতিধ্বনি করে, যা এই ইটগুলির আধুনিক পুনরাবৃত্তির জন্য বর্ধিত শক্তি এবং স্থায়িত্বের প্রতিশ্রুতি দেয়।
৭। লোহা বা ইস্পাত ব্যবহার করা হয়নি : রাম মন্দির ট্রাস্ট অনুসারে, রাম মন্দির সম্পূর্ণরূপে পাথর দিয়ে তৈরি করা হয়েছে এবং কোনও ইস্পাত বা লোহা ব্যবহার করা হয়নি।
৮। উত্তরসূরির জন্য টাইম ক্যাপসুল : মন্দিরের ২০০০ ফুট নীচে সমাহিত একটি টাইম ক্যাপসুলে মন্দির। ভগবান রাম এবং অযোধ্যা সম্পর্কে প্রাসঙ্গিক তথ্য খোদাই করা একটি তামার প্লেট অন্তর্ভুক্ত থাকবে। যা ভবিষ্যত প্রজন্মের কাছে মন্দিরের পরিচয় সংরক্ষণ করে রাখবে।
৯। মন্দিরের বিশেষ বৈশিষ্ট্য : নাগারা শৈলীর উপর ভিত্তি করে তৈরি, যা উত্তর ভারতে প্রচলিত। নবনির্মিত রাম মন্দিরটিতে তিনটি গম্বুজ, পাঁচটি মন্ডপ (হল), ৩৮০ ফুট লম্বা, চওড়ায় ২৫০ ফুট এবং উচ্চতায় ১৬১ ফুট। মন্দিরে মোট ৩৯২টি পিলার ও ৪৪টি গেট রয়েছে। তিনতলা মন্দিরটির প্রতিটি তলার উচ্চতা ২০ ফুট করে। যা এটিকে ভারতের সবচেয়ে উঁচু মন্দিরে পরিণত করবে। মন্দিরটি রাজস্থানের গোলাপী বেলেপাথর দিয়ে তৈরি করা হবে, যা তার স্থায়িত্ব এবং সৌন্দর্যের জন্য পরিচিত। সোমপুরা অযোধ্যার কাছে কারসেবকপুরমের একটি কর্মশালায় পাথর খোদাইয়ের কাজ করা হয়েছে।
১০। রাম মন্দির নির্মাণ খরচ : রামজন্মভূমিতে রাম মন্দির প্রতিষ্ঠা ঘিরে দেশে সাজো সাজো রব। স্রেফ মন্দির তৈরিতে খরচ হচ্ছে প্রায় ১৮ হাজার কোটি টাকা। আর এই টাকার বেশিরভাগটাই অনুদান হিসেবে পাঠিয়েছেন দেশ বিদেশের বিভিন্ন প্রান্তে ছড়িয়ে থাকা মানুষজন। এমনকি তালিকায় রয়েছেন ভিক্ষুকরাও।
শ্রীরাম জন্মভূমি তীর্থক্ষেত্র ট্রাস্ট কর্তৃপক্ষের তরফে জানানো হয়েছে, অনুদান হিসেবে প্রতি মাসে ১ কোটিরও বেশি টাকা জমা পড়েছে মন্দিরের ব্যাঙ্ক অ্যাকাউন্টে। কইয়েক মাস আগে তাঁরা হিসাব করে দেখেছিলেন, মোট ৩৫০০ কোটি টাকা জমা হয়েছে স্রেফ অনুদান হিসেবেই। বর্তমানে সেই টাকা আরও বেড়েছে তা বলাই বাহুল্য।।
উল্লেখ্য, দীর্ঘ আন্দোলনের পর মিলেছিল বিতর্কিত জমিতে রাম মন্দির তৈরির অনুমতি। আর তারপর থেকেই রামজন্মভূমিতে রামমন্দির প্রতিষ্ঠার দিকে নজর গোটা দেশের হিন্দু সম্প্রদায়ের। লোকসভা নির্বাচনের আগেই ভক্তদের জন্য খুলে দেওয়া হবে মন্দিরের দরজা। ২০২০ সালের ৫ অগাস্ট অযোধ্যায় রামমন্দিরের ভিত্তিপ্রস্তর স্থাপন করেছিলেন প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদি। তার পর থেকে আনুষ্ঠানিকভাবে শুরু হয়ে যায় মন্দির নির্মাণের কাজ। ভক্তদের অনুদানের সুবাদে ইতিমধ্যে প্রয়োজনের চেয়েও বেশি অর্থ জমা পড়েছে শ্রীরাম জন্মভূমি তীর্থক্ষেত্র ট্রাস্টে। তবে নজর কেড়েছে দেশের ভিক্ষুকদের অবদান। ভিক্ষা করেই তাঁরা রাম মন্দিরের অনুদান বাক্সে জমা করেছেন কয়েক লক্ষ টাকা। কাশী-প্রয়াগরাজ অঞ্চলের প্রায় ৩০০ জন ভিক্ষুক মিলে জমা করেছেন মোটা সাড়ে চার লক্ষ টাকার অনুদান। খোদ আরএসএস এই টাকা সংগ্রহ করেছে তাঁদের থেকে। এই দান মন্দির কমিটিও বিশেষভাবে দেখছে। যাঁদের নিজেদের পেট চলে ভিক্ষার টাকায়, তাঁরাও রামের নামে দান করেছেন দেখে মুগ্ধ প্রায় সকলেই।
জানা গিয়েছে, রাম মন্দির উদ্বোধনে ওই ভিক্ষুকরাও নিমন্ত্রিত থাকবেন। স্বচক্ষে রামলালার প্রতিষ্ঠা দর্শণ করবেন তাঁরা। শুধু তাই নয়, দেশের বিভিন্ন প্রান্তের মানুষজন রাম মন্দির তৈরির জন্য দু-হাত উজার করে দান করেছেন। তাঁদেরও বিশেষ ধন্যবাদ জানিয়েছে রাম মন্দির কমিটি। একইসঙ্গে জানানো হয়েছে, মন্দির তৈরির মোট খরচের হিসাব। প্রায় ১৮ হাজার কোটির বাজেট ঠিক হয়েছে মন্দির নির্মাণে। এছাড়া উদ্বোধনী অনুষ্ঠানেও নজরকাড়া আয়োজনের পরিকল্পনা রেখেছে মন্দির কর্তৃপক্ষ।