অন্ন দিয়ে যিনি সকলের দুঃখ, দারিদ্র্য দূর করেন তিনিই দেবী অন্নপূর্ণা। অন্নপূর্ণার এক হাতে অন্নপাত্র, আর অন্য হাতে দর্বি বা হাতা। তাঁর মাথায় নবচন্দ্র, একপাশে ভূমি ও অন্যপাশে শ্রী। দেবী পার্বতীরই আর এক রূপ হলেন অন্নপূর্ণা। তাঁর অপর নাম অন্নদা। দেবী পার্বতী ভিক্ষারত শিবকে অন্নপ্রদান করে এই নাম পান।
পুরাণ মতে চৈত্র মাসে শুক্লা অষ্টমী তিথিতে কাশীতে আভির্ভূতা হয়েছিলেন দেবী অন্নপূর্ণা। সেই সূত্রে এই তিথিতেই দেবীর বাৎসরিক পুজো হয়। আগমবাগীশের তন্ত্রসার গ্রন্থে অন্নপূর্ণা পুজোর বিশদ বিবরণ রয়েছে। তাঁর মাহাত্ম্য নিয়ে রায়গুণাকর ভারতচন্দ্র রচনা করেছিলেন ‘অন্নদামঙ্গলকাব্য’।
কীভাবে এই পুজো শুরু হল, তার পিছনে রয়েছে পুরাণের কাহিনি।
জেনে নিন, সেই পৌরাণিক কাহিনি:
হিন্দু ধর্ম অনুসারে, ভগবান শিবের সঙ্গে ঝগড়ার পরে এই দিনে দেবী পার্বতী কালশা পর্বত থেকে চলে গিয়েছিলেন। সঙ্গে ছিল নিজের প্রয়োজনের খাবারটুকু। তাঁর অনুপস্থিতি পৃথিবী জুড়ে দুর্ভিক্ষ শুরু হয়। এটি দেখে ভগবান শিব খাবারের গুরুত্ব টের পান এবং বারাণসীর উদ্দেশে রওনা হন। বারাণসীই তখন পৃথিবীর একমাত্র জায়গা, যেখানে খাবার পাওয়া যায়। শিব সেখানে ভিক্ষার বাটি নিয়ে দেবী দেবী পার্বতী সামনে হাজির হন। দেবী তাঁকে খাদ্য দেন। সেই থেকেই দেবী পার্বতী পরিচিত হন অন্নপূর্ণা নামে।
অন্য এক কাহিনি অনুসারে, ভগবান শিব বিশাল দুর্ভিক্ষের পরে ভিক্ষুক হিসাবে আবির্ভূত হন। তখন দেবী পার্বতী সকলকে খাবারের আশীর্বাদ করার জন্য অন্নপূর্ণার অবতার গ্রহণ করেছিলেন।
বাংলায় অন্নপূর্ণা পুজোর প্রচলন:
শোনা যায়, অন্নপূর্ণা দেবীর পুজো বঙ্গদেশে সূচনা করেন মহারাজা কৃষ্ণচন্দ্র রায়ের পূর্বজ ভবানন্দ মজুমদার। দেবী অন্নদার কৃপা পেয়ে সম্রাট জাহাঙ্গীরের থেকে তিনি রাজা উপাধি লাভ করেন।
যদিও অন্নদামঙ্গলে অন্য গল্প বলা হয়েছে। বলা হয়েছে, নবাব মুর্শিদকুলি খাঁয়ের কাছে নির্ধারিত দিনে কর বা রাজস্ব মেটাতে না পারার কারণে দুর্গাপূজা চলাকালীন মহারাজা কৃষ্ণচন্দ্র রায় মুর্শিদাবাদে কারারুদ্ধ হন। কৃষ্ণচন্দ্রর দুর্গাদর্শন না হওয়ার কারণে, অন্নপূর্ণা সাক্ষাৎ দর্শন দিয়েছিলেন তাঁকে। সেই থেকে বাংলায় অন্নপূর্ণা বা অন্নদা পুজোর সূত্রপাত বলেই মনে করেন অনেকে।