সন্তান এবং স্ত্রীকে রেখে স্বামী দূর দেশে, যুদ্ধক্ষেত্রে যেতেন। সৈন্য স্বামীর জন্য চিন্তায় থাকতেন স্ত্রী। তাঁর মঙ্গল কামনায় বিশেষ উপবাস ব্রত করতেন স্ত্রী। কার্তিক মাসের প্রথম পূর্ণিমার পর কৃষ্ণপক্ষের চতুর্থী তিথিতে এই ব্রত করা হয়। এখন সার্বিকভাবেই বিবাহিত মহিলারা স্বামীর মঙ্গল কামনায় এই ব্রত পালন করেন।
আরও পড়ুন: এই মিষ্টি ফলের রস খেলেই নাকি কমবে ডায়াবিটিস! কী বলছে বিজ্ঞান
স্বামীর দীর্ঘায়ু কামনায় উত্তর ও পশ্চিম ভারতের বিবাহিত মহিলাদের এই ব্রত অনেকেই পালন করে থাকেন। ‘করওয়া’ অর্থাৎ মাটির পাত্র, ‘চৌথ’ অর্থাৎ চতুর্থী। এই দুইয়ে মিলে ব্রতের নামকরণ। এই ব্রতে কড়াইয়ের ভূমিকা গুরুত্বপূর্ণ। যাঁরা ব্রত রাখেন, তাঁরা নতুন কড়াই কেনেন। সেখানে নতুন কাপড় রাখেন। কাচের চুড়ি পরেন। বাড়িতে তৈরি হয় মুখরোচক খাবার ও মিষ্টি। এই সময়েই রবি শস্যের চাষ শুরু হয়। বপন করা হয় গমের দানা। যে বড় পাত্রে গমের দানা রাখা হয়, তাকে ‘করওয়া’ বলা হয়। এই ব্রতর রীতি হল, সূর্যোদয় থেকে সূর্যাস্ত পর্যন্ত কিছু খাওয়া যাবে না। এমনকি, জলপানও নিষিদ্ধ। তাই অনেক রাজ্যেই সূর্যোদয়ের আগে বিবাহিতারা খেয়ে নেন। সাধারণত সেই খাবার বানিয়ে দেন শাশুড়ি।
আরও পড়ুন: ক্লাসের ফাঁকে ফাঁকে খাবার খেতে পারবে পড়ুয়ারা, কেন এমন ছাড় মহারাষ্ট্রে
সন্ধ্যা হলে শুরু হয় আসল উৎসব। গয়না আর নতুন পোশাকে সেজে এক জায়গায় জড়ো হন সবাই। করওয়া চৌথ -এর পোশাক সাধারণত লাল, হলুদ বা সোনালি রঙের হয়। কোনও প্রবীণা বা পুরোহিত ব্রতকথা পাঠ করেন। আকাশে চতুর্থীর চাঁদ দেখা গেলে তা চালুনির মধ্যে দিয়ে দেখতে হয়। সঙ্গে থাকে প্রদীপ। চাঁদের কাছে স্বামীর মঙ্গল কামনা করেন স্ত্রী। তারপর সেই প্রদীপের আলোয় স্বামীর মুখ দেখতে হয়। বরণডালা থেকে জলের পাত্র নিয়ে স্ত্রীর মুখে ধরেন স্বামী। সেই জল পান করেই উপবাস ভাঙে।
উৎসব শুরুর ধারণা বিভিন্ন মতভেদ রয়েছে। একটি কাহিনিতে রয়েছে রানি বীরবতীর কথা। কথিত আছে, রানি বীরবতী তাঁর পিতৃগৃহে এই ব্রত পালন করছিলেন। কিন্তু উপবাসরত বোনের কষ্ট হচ্ছে ভেবে তাঁর সাত দাদা অশ্বত্থ গাছে আয়না রেখে দিলেন। যাতে মনে হয়, আকাশে চাঁদ উঠেছে। আয়নাকে চাঁদ ভেবে ভুল করে উপবাস ভঙ্গ করেন বীরবতী। তার পরেই স্বামীর মৃত্যুর খবর পান। শোকে মুহ্যমান হলেও বীরবতী আবার করওয়া চৌথ পালন করে তাঁর স্বামীর প্রাণভিক্ষা করেন। প্রার্থনায় তুষ্ট হয়ে যমরাজ ফিরিয়ে দেন তাঁর স্বামীর প্রাণ। আবার কোনও লোককথা মতে, ‘করওয়া’ নামের এক পতিব্রতা নারী ছিলেন। তিনি যমরাজের মুখোমুখি হয়ে কুমিরের গ্রাস থেকে উদ্ধার করেছিলেন স্বামীকে। তাঁর নামেই নাকি এই ব্রতের নামকরণ। আসলে স্বামীর মঙ্গল কামনায় এবং দীর্ঘ আয়ুর জন্য এই ব্রত পালনই মূল উদ্দেশ্য।