হিন্দু পঞ্জিকা অনুযায়ী, কৃষ্ণ পক্ষের চতুর্দশী তিথিতে শিবরাত্রি ব্রত পালিত হয়। আজ, ১১ মার্চ, বৃহস্পতিবার মহাশিবরাত্রি। পুরাণ অনুযায়ী, এ দিন শিব-পার্বতীর বিয়ে হয়েছিল। শিবের আশীর্বাদ লাভের জন্য এদিন উপবাস ও পুজো করা হয়। এদিন নিয়ম ও নিষ্ঠার সঙ্গে পুজো করলে জীবনের নানান কষ্ট দূর হয়। বিশেষ বিশেষ মনস্কামনা পূরণের জন্য মন্ত্র জপেরও বিধান রয়েছে। আবার মহাশিবরাত্রির চার প্রহরের পুজোর জন্য পৃথক পৃথক মন্ত্র রয়েছে। এগুলি হল--
প্রথম প্রহর- পুজোর সংকল্প গ্রহণ করে শিবলিঙ্গকে দুধ দিয়ে স্নান করিয়ে ‘ওম হীং ঈশানায় নমঃ’ মন্ত্র জপ করা উচিত।
দ্বিতীয় প্রহর- শিবলিঙ্গকে দই দিয়ে স্নান করিয়ে ‘ওম হীং অঘোরায় নমঃ’ মন্ত্র জপ করুন।
তৃতীয় প্রহর- শিবলিঙ্গকে ঘি দিয়ে স্নান করিয়ে ‘ওম হীং বামদেবায় নমঃ’ মন্ত্র জপ করা উচিত।
চতুর্থ প্রহর- মধু দিয়ে অভিষেকের পর ‘ওম হীং সাধ্যোজাতায় নমঃ’ জপ করুন।
এর পাশাপাশি মহাশিবরাত্রির দিনে রোগ ও গ্রহ দোষ থেকে মুক্তি লাভের জন্যও মন্ত্র জপ করা যায়।
মহাশিবরাত্রির পুজোয় গ্রহ শান্তির জন্যও মন্ত্র জপ করতে পারেন:
এদিন শিবের পুজো করলে শনি, রাহু ও চন্দ্রের অশুভ দশা থেকে মুক্তি পাওয়া যায়। এদিন শিবের রুদ্রাভিষেক করলে অন্য গ্রহের দোষ থেকেও মুক্তি লাভ সম্ভব হয়। শনির সাড়ে সাতির প্রভাব খর্ব করার জন্য ‘হৃীং ওম নমঃ শিবায় হৃীং’ মন্ত্র জপ করা উচিত।
শিবের রুদ্র গায়েত্রী মন্ত্র রাহু-কেতু ও শনির কষ্ট থেকে মুক্ত করে। কারও কুষ্ঠিতে কালসর্প দোষ থাকলে রুদ্র গায়েত্রী মন্ত্রের জপ করা উচিত। মন্ত্রটি হল, ‘ওম তৎপুরুষায় বিদ্মহে, মহাদেবায় ধীমহি তন্নো রুদ্রঃ প্রচোদয়াৎ।।’
রোগ ও অকালমৃত্যুর ভয় থেকে মুক্তির জন্য:
মহামৃত্যুঞ্জয় মন্ত্র জপ করলে কঠিন রোগ দূর হয়। এর পাশাপাশি অকাল মৃত্যু, গ্রহ দোষ থেকেও মুক্তি সম্ভব।
মহামৃত্যুঞ্জয় মন্ত্র-
ওম ত্র্যম্বকম যজামহে সুগন্ধিম পুষ্টিবর্ধনম্।
উর্বারুকমিব বন্ধনান্ মৃত্যোর্মুক্ষীয় মামৃতাত্।।
মহামৃত্যুঞ্জয় গায়েত্রী মন্ত্র-
ওম হৌং জূং সঃ ওম ভূর্বুবঃ স্বঃ ওম ত্র্যম্বকম যজামহে সুগন্ধিম পুষ্টিবর্ধনম্। উর্বারুকমিব বন্ধনান্ মৃত্যোর্মুক্ষীয় মামৃতাত্ ওম স্বঃ ভুবঃ ওম সঃ জূং হৌং ওম।।
শিবের আশীর্বাদ লাভের জন্য:
শিবের মূলমন্ত্রকে পঞ্চাক্ষরী মন্ত্র বলা হয়। এই মন্ত্র অত্যন্ত প্রভাবশালী। মহাশিবরাত্রিতে শিবলিঙ্গে গঙ্গা জলের অভিষেকের সময় এই মন্ত্র জপ করা উচিত। এর ফলে জীবনের সমস্ত সমস্যা দূর হয় এবং জীবনে সুখ-সমৃদ্ধির আগমন ঘটে। মন্ত্রটি হল, ওম নমঃ শিবায়।
পৃথক পৃথক মনস্কামনা পূরণের জন্য মহাশিবরাত্রির দিনে পৃথক পৃথক মন্ত্র জপ করলে সুফল মেলে—
আয়ু বৃদ্ধির জন্য- শং হৃীং শং।
বিবাহে আগত বাধা দূর করার জন্য- ওম এং হৃীং শিব গৌরী মব হৃীং এং ওম।
শত্রুকে পরাজিত করার জন্য- ওম সং শিব স্বরূপায় ফট।
কোনও পুরনো রোগ দূর করতে- ওম হৌং সদাশিবায় রোদ মুক্তায় হৌং ফট।
কোনও মামলা মোকদ্দমা থেকে মুক্তির জন্য- ওম ক্রীং নমঃ শিবায় ক্রীং।
পরীক্ষায় সাফল্য লাভের জন্য- ওম এং গে এং ওম।
বিপথগামী সন্তানকে সঠিক পথে আনতে- ওম গং এং ওম নমঃ শিবায় ওম।
সুখ সম্পদ লাভের দন্য- ওম হৃৌং শিবায় শিবপরায় ফট।
রোজগার বা চাকরি লাভের জন্য- ওম শং হৃীং শং হৃীং শং হৃীং শং হৃীং ওম।
এদিন রাশি মেনেও মন্ত্র জপ করে শিবের আশীর্বাদ লাভ করতে পারেন। কোন রাশির জাতকরা কোন মন্ত্র জপ করলে সুফল পাবেন, জেনে নিন--
মেষ- ওম বিশ্বরূপায় নমঃ।
বৃষ- ওম উপেন্দ্র নমঃ।
মিথুন- ওম অনন্তায় নমঃ।
কর্কট- ওম দয়ানিধি নমঃ।
সিংহ- ওম জ্যোতিরাদিত্যায় নমঃ।
কন্যা- ওম অনিরুদ্ধায় নমঃ।
তুলা- ওম হিরণ্যগর্ভায় নমঃ।
বৃশ্চিক- ওম অচ্যুতায় নমঃ।
ধনু- ওম জগৎগুরুবে নমঃ।
মকর- ওম অজয়ায় নমঃ।
কুম্ভ- ওম অনাদিয় নমঃ।
মীন- ওম জগন্নাথায় নমঃ।