১২ জুলাই জগন্নাথ রথযাত্রা। রথযাত্রা উপলক্ষে পুরীর জগন্নাথ মন্দিরে বিশেষ ব্যস্ততা লক্ষ করা যায়। এখানে প্রতিষ্ঠিত জগন্নাথকে বিষ্ণুর দশম অবতার মনে করা হয়। পুরাণে জগন্নাথ ধামকে মর্ত্যের বৈকুন্ঠ অর্থাৎ স্বর্গ আখ্যা দেওয়া হয়েছে। হিন্দু ধর্মের চারটি পবিত্র ধামের মধ্যে অন্যতম। জগন্নাথের প্রধান মন্দির বক্ররেখার আকারে। এর চূড়ায় অষ্টধাতু নির্মিত বিষ্ণুর সুদর্শন চক্র রয়েছে, একে নীলচক্রও বলা হয়। জগন্নাথ দর্শনের জন্য পূর্ব, পশ্চিম, উত্তর ও দক্ষিণের দ্বার খোলা থাকে। এই চার প্রবেশ দ্বারেই বজরংবলী বিরাজমান।
মন্দিরে প্রবেশের আগে ডান দিকে আনন্দ বাজার ও বাঁ দিকে জগন্নাথ মন্দিরের বিশাল রান্নাঘর রয়েছে। প্রসাদ রান্নার জন্য সাতটি বাসন একে অপরের উপর রেখে আগুনের আঁচে রাখা হয়। মাটির বাসনে ও কাঠের সাহায্যেই এই প্রসাদ রান্না করা হয়। এ সময় সবার ওপরে রাখা বাসনের খাবার সবার আগে তৈরি হয়ে যায়। তার পর এক এক করে নীচে রাখা বাসনের খাবার তৈরি হয়। রোজ প্রায় ২৫ হাজার ভক্ত এই প্রসাদ খেয়ে থাকেন। এই প্রসাদ কখনও বেঁচেও যায় না আবার কখনও কম হয় না।
জগন্নাথ মন্দিরে সকালে জগন্নাথকে খিচুড়ির বালক ভোগ নিবেদন করা হয়। এর পিছনে একটি পৌরাণিক কাহিনি রয়েছে।
কথিত আছে, জগন্নাথের ভক্ত কর্মাবাঈ পুরীতে বসবাস করতেন এবং জগন্নাথকে নিজের পুত্র স্নেহে ভালোবাসতেন। পুত্র রূপে জগন্নাথের বালরূপের পুজো করতেন তিনি। একদিন কর্মাবাঈর মনে ইচ্ছা জাগল যে তিনি ফল ও শুকনোফলের স্থানে নিজের হাতে কিছু রেঁধে জগন্নাথকে ভোগ নিবেদন করেন। তিনি জগন্নাথকে নিজের ইচ্ছা সম্পর্কে জানান। তখন জগন্নাথ বলেন, ‘মা যা-ই বানিয়েছ, তাই খাইয়ে দাও। খুব ক্ষিদে পেয়েছে।’ কর্মাবাঈ খিচুড়ি বানিয়ে ছিলেন এবং জগন্নাথকে তা-ই খেতে দেন। জগন্নাথ খুব ভালোবেসে খিচুড়ি খেতে শুরু করেন। তখন কর্মাবাঈ জগন্নাথকে পাখা করতে শুরু করেন। গরম খিচুড়িতে জগন্নাথের মুখ না-পুড়ে যায়, সে জন্য পাখা করতে শুরু করেন তিনি। জগন্নাথ খুব ভালোবেসে খিচুড়ি খান এবং কর্মাবাঈ তাঁকে আদর করতে থাকেন।
জগন্নাথ বলেন, ‘মা খিচুড়ি খুব ভালো লাগল। আমার জন্য আপনি রোজ খিচুড়ি রান্না করুন। আমি রোজ এখানে এসে এমনই খিচুড়ি খাব।’ এবার কর্মাবাঈ রোজ স্নান না-করে প্রাতঃকালে জগন্নাথের জন্য খিচুড়ি বানান। কাহিনি অনুযায়ী বালক রূপে কর্মাবাঈ খিচুড়ি খেতে আসতেন। তবে একদিন কর্মাবাঈর বাড়িতে এক সাধু আসেন। তিনি যখন জেখেন, কর্মাবাঈ স্নান ছাড়াই খিচুড়ি বানিয়ে জগন্নাথকে ভোগ নিবেদন করছেন, তখন তিনি কর্মাবাঈকে এমন করতে বারণ করে দেন। জগন্নাথের ভোগ রান্না ও নিবেদনের বিশেষ নিয়ম জানান ওই সাধু।
পরের দিন কর্মাবাঈ এই নিয়ম অনুযায়ী জগন্নাথের জন্য খিচুড়ি বানান, যাঁর ফলে দেরি হয়ে যায় এবং তিনি দুঃখী হন যে, আমার ঠাকুর ক্ষুধার্ত রয়েছে। জগন্নাথ যখন খিচুড়ি খেতে আসেন, তখন মন্দিরে দুপুরের ভোগের সময় হয়ে গিয়েছিল। পুরোহিতরা দেখেন যে জগন্নাথের মুখে খিচুড়ি লেগে রয়েছে। তখন জগন্নাথকে জিগ্যেস করলে তিনি সমস্ত কাহিনি শোনান জগন্নাথ। এই কথা জানার পর পুরোহিতের পশ্চাতাপ হয়। কর্মাবাঈয়ের কাছ থেকে ক্ষমা প্রার্থনা করেন তিনি। বলেন, আগের মতোই স্নান না-করেই জগন্নাথের জন্য খিচুড়ি রান্না করুন এবং ভোগ নিবেদন করুন। তাই আজও পুরীর জগন্নাথ মন্দিরে সকালে বালক ভোগে খিচুড়ির ভোগ লাগানো হয়। মনে করা হয় এটি কর্মাবাঈয়ের খিচুড়ি।