আশ্বিন মাসের কৃষ্ণপক্ষের চতুর্দশী তিথিতে বিশ্বকর্মার উৎপত্তি হয়েছিল বলে মনে করা হয়। এ দিন সমস্ত কারখানায় তাঁর পুজো হয়।
পৌরাণিক ধারণা অনুযায়ী বিশ্বকর্মার হাতেই সমস্ত ব্রহ্মাণ্ড রচিত। ঋগ্বেদের দশম অধ্যায়ের ১২১তম সূক্তে লেখা রয়েছে, বিশ্বকর্মার দ্বারাই ধরিত্রী, আকাশ ও জলের রচনা হয়। আবার বিশ্বকর্মা পুরাণ অনুযায়ী আদি নারায়ণ সবার প্রথম ব্রহ্মা ও তার পর বিশ্বকর্মার রচনা করেন।
দেবতা ও অসুরদের মধ্যে সমুদ্র মন্থনের সময় বিশ্বকর্মার উৎপত্তি হয়েছে বলে মনে করা হয়। পৌরাণিক কালের সমস্ত অস্ত্র-শস্ত্র, ভবন তাঁর দ্বারাই নির্মিত। রাবণের লঙ্কার প্রাসাদ তৈরি করেন তিনি। এ ছাড়াও পাণ্ডবদের জন্য ইন্দ্রপ্রস্থ নগরের নির্মাণ করেছিলেন। কৌরবদের হস্তিনাপুর ও কৃষ্ণের দ্বারকাও তাঁরই কীর্তি।
কথিত আছে, একদা শিব পার্বতীর জন্য একটি প্রাসাদ নির্মাণের কথা চিন্তা করেন। এর দায়িত্ব বর্তায়ে বিশ্বকর্মার ওপর। তখন তিনিই একটি স্বর্ণপ্রাসাদের নির্মাণ করেন। এই প্রাসাদের পুজোর জন্য শিব রাবণকে আমন্ত্রিত করেন। কিন্তু সেই প্রাসাদ দেখে রাবণ এতই মন্ত্রমুগ্ধ হয়ে যান যে, পুজোর পর দক্ষিণাস্বরূপ সেই প্রাসাদই চেয়ে বসেন। পরে সেই প্রাসাদ রাবণকে দিয়ে শিব কৈলাস প্রস্থান করেন।
আবার একটি অন্য ধারণা অনুযায়ী, সৃষ্টিকে আরও উন্নত করার দায়িত্ব ব্রহ্মা বিশ্বকর্মার হাতেই ছেড়ে দেন। নিজের বংশজ ও বিশ্বকর্মার শিল্পের ওপর পূর্ণ আস্থা ছিল ব্রহ্মার। পৃথিবীর রচনার সময় তা ডিম্বাকৃতি ছিল। সেই ডিম থেকেই সৃষ্টির উৎপত্তি হয়। পরে ব্রহ্মা তা শেষনাগের জিহ্বায় রেখে দেন।
শেষনাগের নড়েচড়ে ওঠার ফলে সৃষ্টির ক্ষতি হয়। এ কথায় চিন্তিত হয়ে বিশ্বকর্মার কাছে উপায় জানতে চান ব্রহ্মা। এর পর মেরু পর্বতকে জলে রেখে সৃষ্টিকে স্থির করেন বিশ্বকর্মা। তাঁর নির্মাণ ক্ষমতা ও শিল্পকলা দেখে ব্রহ্মা অত্যন্ত প্রভাবিত হন। তখন থেকেই বিশ্বকর্মাকে ব্রহ্মাণ্ডের প্রথম ইঞ্জিনিয়ার ও বাস্তুকার হিসেবে গণ্য করা হয়।