পুর নিয়োগ দুর্নীতির তদন্তে রাজ্যের পুর ও নগরোন্নয়ন দফতর-সহ একাধিক পুরসভায় হানা দিল সিবিআই। একাধিক দলে বিভক্ত হয়ে কেন্দ্রীয় গোয়েন্দা সংস্থার আধিকারিকরা এই অভিযান চালায়। সিজিও কমপ্লেক্স থেকে চারটি গাড়ি যায় সল্টলেকের পুর ও নগোরন্নয়ন দফতরে। সেই গাড়ির সঙ্গে ছিল একটি সিআরপিএফ-এর গাড়িও। এই দফতরেই বসেন পুর ও নগোরন্নয়ন মন্ত্রী ফিরহাদ হাকিম।
পুর দফতর ছাড়াও একাধিক পুরসভায় তল্লাশি চালাচ্ছে কেন্দ্রীয় গোয়েন্দা সংস্থা। এই পুরসভাগুলির মধ্যে রয়েছে টিটাগড়, শান্তিপুর, পানিহাটি, দক্ষিণ দমদম, হালিশহর ,বরানগর, টাকি পুরসভা।
নিয়োগ দুর্নীতি মামলায় ইতিমধ্যেই একাধিক পুরসভায় নাম উঠে এসেছে। এই মামলায় অন্যতম অভিযুক্ত অয়ন শীলের সূত্রে ধরে এই পুরসভারগুলির নাম উঠে এসেছে। তা খতিয়ে দেখতে বুধবারের এই তল্লাশি বলে সিবিআই সূত্রে জানা গিয়েছে। এই তদন্তে চুঁচুড়ায় জগুদাস লেনের অয়ন শীলের ফ্ল্যাটে হানা দেয় পাঁচ সদস্যের সিবিআই প্রতিনিধি দল।
এ দিন সকাল ১১টা নাগাদ টিটাগড় পুরসভায় সিবিআই আধিকারিকরা হাজির হন। সঙ্গে ছিল সিআরপিএফ জওয়ানদের একটি গাড়ি। সূত্রের খবর পুরসভার বিভিন্ন আধিকারিকদের সঙ্গে কথাও বলেন সিবিআই আধিকারিকরা। জানতে চান, এই দুর্নীতি সংক্রান্ত বিভিন্ন প্রশ্নের উত্তর। পাশাপাশি পুরসভাতে তল্লাশিও চালানো হয়।
সূত্রের খবর, দক্ষিণ দমদম পুরসভার এক্সিকিউটিভ অফিসার অলোক মৌলিকে জিজ্ঞাসাবাদ করে। এ ছাড়াও পুরসভার একাধিক আধিকারিককে এই নিয়োগ দুর্নীতি সংক্রান্ত নানা প্রশ্ন জিজ্ঞাসাবাদ করে।
তল্লাশিতে কামারহাটি পুরসভাতেও যান সিবিআই আধিকারিকরা। পুরসভা রেকর্ড রুমের বিভিন্ন নথি খতিয়ে দেখে। সেই সঙ্গে জিজ্ঞাসাবাদ করেন পুরসভার আধিকারিকদেরও।
প্রায় ১৫ মিনিট ধরে পুর ও নগোরন্নয়ন দফতরে তল্লাশি চালান সিবিআই আধিকারিকরা। দফতর থেকে বেরনোর সময় দু'জন আধিকারিককে সঙ্গে নিয়ে গাড়ি উঠতে দেখা যায় সিবিআই আধিকারিকদের।
পুরমন্ত্রীর প্রতিক্রিয়া
মন্ত্রী ফিরহাদ হাকিম এই তল্লাশি নিয়ে কোনও মন্তব্য করতে চাননি। তবে এই পিছনে যে রাজনীতি রয়েছে সেটা স্পষ্ট করে জানিয়ে দিয়েছেন। তিনি বলেন. ‘ আমরা নিয়োগ সংক্রান্ত সমস্ত তথ্য খতিয়ে দেখছিলাম। এখনও পর্যন্ত কোনও অনিয়ম পা়ইনি। কেন এই তল্লাশি তা নিয়ে আগে থেকে কিছু বলা ঠিক হবে না। তবুও আবারও বলছি পুরোটাই রাজনীতি হচ্ছে।’
মামলার প্রেক্ষাপট
নিয়োগ দুর্নীতি মামলায় গত ১৯ মার্চ অয়ন শীলকে গ্রেফতার করে ইডি। কেন্দ্রীয় তদন্তকারী সংস্থা দাবি করে, অয়নের সল্টলেকের অফিসে তল্লাশি চালিয়ে রাজ্যের একাধিক পুরসভার বিভিন্ন পদে চাকরিপ্রার্থীদের উত্তরপত্র পাওয়া গিয়েছে।
তদন্তকারীদের সূত্রে খবর, অয়ন ‘এবিএস ইনফ্রোজোন’ নামে একটি সংস্থার মাধ্যমে একাধিক পুরসভায় চাকরি দেওয়া হয়েছে। মামলাটি কলকাতা হাই কোর্টের বিচারপতি অভিজিৎ গঙ্গোপাধ্যায়ের এজলাসে উঠে। তিনি পুরসভায় দুর্নীতির মামলায় সিবিআই তদন্তের নির্দেশ দেন। পরে এই মামলার এজলাস বদল হলেও বিচারপতি গঙ্গোপাধ্যায়ের রায়ই বহাল রাখে হাই কোর্ট। এর বিরুদ্ধে ডিভিশন বেঞ্চে আবেদন করেছে রাজ্য। একাধিক ডিভিশন বেঞ্চের হাত ঘুরে শেষে মামলাটি বিচারপতি তপোব্রত চক্রবর্তীর ডিভিশন বেঞ্চে এসেছে। চলতি সপ্তাহে এই মামলার শুনানি হতে পারে। এরই মধ্যে একাধিক পুরসভা ও নগোরন্নয়ন দফতরে তল্লাশি চালাল সিবিআই।