তাঁর মুখে কোনও ফিল্টার নেই! বরাবরই অকপট, অনয়াস মৌসুুমী চট্টোপাধ্যায়। কিছুদিন আগেই এক অনুষ্ঠানের রেড কর্পেটে বলে বসেছিলেন, ‘আমি জয়া বচ্চনের থেকে অনেক ভালো’। পাপারাৎজিদের সঙ্গে জয়ার ঝামেলাকে কটাক্ষ করেই এহেন মন্তব্য করেন মৌসুমী। আরও পড়ুন-দেবের চেয়ে উচ্চশিক্ষিত,রয়ছে PhD ডিগ্রি! ঘাটালের BJP প্রার্থী হিরণের মাথায় কোটি টাকার দেনা
১৯৬৭ সালে তরুণ মজুমদারের ‘বালিকা বধূ’র হাত ধরেই সিনেমায়র জগতে আত্মপ্রকাশ করেন অভিনেত্রী। তখন তিনি আক্ষরিক অর্থেই ছিলেন বালিকা। পুতুল খেলার বয়স থেকে সিনেমার পর্দায় দাপিয়ে কাজ করেছেন, অথচ তারকা হওয়ার কোনও তাগিদ তাঁর মধ্যে ছিল না। কৈশোরেই হেমন্ত মুখোপাধ্যায়ের বড় ছেলে জয়ন্তর সঙ্গে বিয়ে হয়েছিল মৌসুমীর। তারপর থেকে তিনি মুম্বই নিবাসী। কলকাতার মেয়ে, মুম্বইয়ের বউমা। বাংলার সঙ্গে তাঁর নাড়ির টান আজও অটুট প্রায় এক দশক আগে ঋতুপর্ণ ঘোষ সঞ্চালিত ‘ঘোষ অ্যান্ড কোম্পানি’তে হাজির হয়েছিলেন অভিনেত্রী।
বাংলা আর মুম্বই ইন্ডাস্ট্রির ফারাক থেকে বাঙালি জাতি, সবকিছু নিয়ে মন খুলে কথা বলেছিলেন অভিনেত্রী। অপর্ণা সেন পরিচালিত ‘গয়নার বাক্স’-এ অভিনয় তাঁর কেরিয়ারের ‘পরম পাওয়া’ জানান মৌসুমী। বম্বে ইন্ডাস্ট্রি কতটা আলাদা? তাঁর কথায়, ‘যখন শুরু করি তখন বুঝতে পারিনি, ওতো বোধবুদ্ধি হয়নি। অনেক আলাদা। ওটা একটা বিশাল জিনিস, বাংলা ছবি ছোট একটা মার্কেট। ধরো নানুবাবুর বাজার আর লেক মার্কেট। অনেক বেশি পরিচিতি পাওয়া যায় ওখানে। প্রতিযোগিতা (মুম্বইতে) বেশি।’
এরপর কলকাতা ইন্ডাস্ট্রির ভালো দিক-খারাপ দিক দুই বলেন। জানান, ‘কলকাতার লোকেরা পয়সা না দিতে পারুক, বড়লোক না হতে পারুক ভিতরে তারা সবাই বড়লোক। আবার বিপরীতও আছে। কলকাতার লোকেদের বড্ড ইগো প্রবলেম। ওর সঙ্গে কথা বলছে না। জানাল, আমার সঙ্গে বড্ড দুর্ব্যবহার করেছে। বললাম কী হয়েছে? না আমাকে চা খেতে বলেনি। এতেই ইগোতে ঘা লেগে গেল!’ এই সব ছোটখাটো ব্যাপার নিয়ে বলিউডে কারুর মাথা ঘামনোর সময় নেই বলে উল্লেখ করেন অভিনেত্রী।
অল্প বয়সেই মা হয়েছিলেন মৌসুমী। কাজ করতে করতে সন্তানদের মানুষ করতে কোনও অসুবিধা হয়নি জানান নায়িকা। স্মৃতির পাতা উলটে অভিনেত্রী জানান, একবার মহেশ ভাট তাঁকে বলেছিলেন ‘ভুল সময়ে’ মা হয়েছেন তিনি। সন্তানরা তাঁর কেরিয়ারের ‘বাধা’ এমন কথাও জানিয়েছিলেন আলিয়ার বাবা। স্পষ্টভাবে মৌসুমী বলেছেন, ‘না, ওরা আমার জীবনকে সমৃদ্ধ করেছে’।
তিনি বয়সে ছোট ঋতুপর্ণক জীবনে পাঠ দিয়ে বলেছিলেন, 'তুমি জীবনে কুইন ভিক্টোরিয়া হয়ে যাও। তোমার যতই নাম-যশ হোক। তোমার পরিবারে যদি শান্তি না পাও, তাহলে তুমি খুঁজতেই থাকবে। আর যখন নাম-যশ থাকবে না, তখন কী হবে? পরিবারই পাশে থাকবে'।
বর্ষীয়ান অভিনেত্রীকে শেষবার পিকু ছবিতে দেখা গিয়েছিল। সুজিত সরকারের এই ছবিটি ২০১৫ সালে মুক্তি পেয়েছিল। মৌসুমী চট্টোপাধ্যায়ের কিছু উল্লেখযোগ্য কাজের মধ্যে রয়েছে অনুরাগ (১৯৭২), রোটি কাপড়া অর মকান (১৯৭৪), মঞ্জিল (১৯৭৯), আঙ্গুর (১৯৮২), এবং ঘর এক মন্দির (১৯৮৪)। ২০১৫ সালে ফিল্মফেয়ার লাইফটাইম অ্যাচিভমেন্ট অ্যাওয়ার্ড পেয়েছিলেন অভিনেত্রী।