‘বালিকা বধূ’ নাকি দেশে এখনও ঘটে চলেছে। ভারতে পাঁচজন মেয়ের মধ্যে একজন নাবালিকার বিয়ে এখনও ঘটছে। নাবালিকা বিয়ে আটকাতে প্রশাসন তৎপর হলেও এই তথ্য চিন্তায় ফেলেছে সাধারণ মানুষ থেকে রাজনীতিবিদদের। নাবালকদের ক্ষেত্রে অবশ্য সংখ্যাটা ছ’জনে একজন। ল্যানসেট পত্রিকায় প্রকাশিত রিপোর্ট অনুযায়ী, ভারতে গত তিন দশকে বাল্যবিবাহ কমলেও উল্টো পথে হাঁটছে পশ্চিমবঙ্গ। ১৯৯৩ থেকে ২০২১ পর্যন্ত ‘বালিকা বধূ’র সংখ্যা বেড়েছে। বাংলায় সংখ্যাটা আনুমানিক পাঁচ লক্ষাধিক। এই রিপোর্ট নিয়ে মতপার্থক্যে যে কেউ যেতে পারেন। কিন্তু ল্যানসেট পত্রিকা এই তথ্যই তুলে ধরেছে।
এদিকে ল্যানসেটের সদ্য প্রকাশিত রিপোর্টে বালিকা বধূর তথ্য গভীর উদ্বেগ তৈরি করেছে। আর রাষ্ট্রপুঞ্জের সুস্থায়ী উন্নয়নের লক্ষ্যমাত্রায়, ২০৩০ সালের মধ্যে নাবালিকা বিবাহ একেবারে নির্মূল করার কথা বলা হয়েছে। ল্যানসেট পত্রিকায় প্রকাশ, ১৯৯৩ থেকে ২০২১ সালের মধ্যে ভারতে নাবালিকা বিয়ের হার ৪৯.৪% থেকে ২২.৩% হয়েছে। অর্থাৎ কমেছে। আর ১৮ বছর বয়স পর্যন্ত মেয়েদের বিয়ে না দিলে কন্যাশ্রী বা রূপশ্রী প্রকল্পের মাধ্যমে এককালীন অর্থপ্রাপ্তির সম্ভাবনা নিয়ে এসেছে মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়ের সরকার। এমনকী ১৩ থেকে ১৮ বছরের মেয়েদের পড়াশোনার জন্য একাধিক বৃত্তি ও সুবিধা রয়েছে। শুধু তাই নয়, বাল্যবিবাহ রুখতে মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়ের সরকারের চেষ্টা রাষ্ট্রপুঞ্জেও প্রশংসিত হয়েছে। কিন্তু ল্যানসেট পত্রিকার রিপোর্ট উল্টো কথাই বলছে। তাতেই বাড়ছে বিতর্ক।
অন্যদিকে পশ্চিমবঙ্গে সরকারের কাজের শরিক ইউনিসেফ এই রিপোর্ট দেখেছে। তবে এই রিপোর্টের পরিসংখ্যান যাচাই না করে মুখ খুলতে নারাজ। যদিও শিশু অধিকার সুরক্ষা কমিশনের উপদেষ্টা অনন্যা চক্রবর্তী বাল্যবিবাহ নিয়ে বলেন, ‘পশ্চিমবঙ্গে বাল্যবিবাহ নিয়ে যত রিপোর্ট হয়, ততটা অন্য অনেক রাজ্যেই হয় না।’ ল্যানসেট পত্রিকার রিপোর্ট বলছে, উত্তরপ্রদেশে বালিকা বধূর পরিসংখ্যান ১৯৯৩ সালে ৩৩ লক্ষ থেকে কমেও এখন ১৬–১৭ লক্ষ হয়েছে। ছত্তিশগড়, মধ্যপ্রদেশ, হরিয়ানা, রাজস্থানের পরিস্থিতিও অনেক ভাল। বিহারে নাবালিকা বিয়ের হার বাংলার থেকে কম। এটাই অনেকে মেনে নিতে পারছেন না।
আরও পড়ুন: স্বাস্থ্যসাথী কার্ডে হয় না আয়ুষ চিকিৎসা, রাজ্য সরকারকে আবেদন করে মেলেনি সাড়া
এছাড়া বাল্যবিবাহ শুধুমাত্র শিক্ষা বা আর্থ–সামাজিক পরিস্থিতির উপরে নির্ভর করে না বলে অনেকে মত। এটা জটিল মনস্তত্ত্বের প্রতিফলন বলেও ল্যানসেট মান্যতা দিয়েছে। সরকারি রিপোর্টও বলছে, পূর্ব মেদিনীপুর, পূর্ব বর্ধমানে নাবালিকা বিয়ে বাড়ছে। তবে কম বয়সে প্রেম এবং তার জেরে পালিয়ে বিয়ের প্রবণতা প্রবল। তবে ল্যানসেট পত্রিকার রিপোর্টে করোনাভাইরাসের অতিমারির পরের তথ্য নেই। আর বাল্যবিবাহ বৃদ্ধিতে বড় রাজ্যগুলির মধ্যে এগিয়ে বাংলা। তবে জাতীয় পরিবার স্বাস্থ্য সমীক্ষায় প্রাতিষ্ঠানিক প্রসব বা প্রসূতির পরিচর্যা বাংলায় ভাল।