সুপ্রিম কোর্টের ছাড়পত্র নিয়েই পশ্চিম মেদিনীপুর জেলায় প্রবেশ করতে চলেছেন প্রাক্তন মন্ত্রী ও দাপুটে সিপিএম নেতা সুশান্ত ঘোষ। ২০১১ সালে তৃণমূল কংগ্রেস ক্ষমতায় আসার পর বেনাচাপড়া কঙ্কাল–কাণ্ডে তাঁর নাম জড়িয়ে পড়েছিল। তখন থেকেই তিনি গড়বেতায় প্রবেশ করতে পারেননি। এবার বিধানসভা নির্বাচনের প্রাক্কালে তাঁর প্রত্যাবর্তন ঘিরে জেলা বামফ্রন্ট নেতৃত্ব উজ্জীবিত। ২০১৪ সালের লোকসভা নির্বাচনে রাজ্য থেকে কার্যত মুছে যাওয়া সিপিএম কর্মীদের পোস্টারে এখন ছেয়ে যাচ্ছে এই বিধানসভা কেন্দ্র।
সূত্রের খবর, আগামী ৬ ডিসেম্বর ১০,০০০ কর্মী–সমর্থক নিয়ে মিছিল করে গড়বেতায় ঢুকবেন তিনি। সুশান্তবাবুর বিরুদ্ধে কঙ্কাল কাণ্ডের কোনও অভিযোগ এখনও প্রমাণ হয়নি। এই বিষয়ে সিপিএম নেতার দাবি, ‘আগামী ৬ ডিসেম্বর পশ্চিম মেদিনীপুরের চন্দ্রকোনা রোডে জনসভায় সরকারের মুখোশ খুলব।’ সুতরাং ২০২১ সালের বিধানসভা নির্বাচনের আগে সুশান্ত ঘোষের প্রত্যাবর্তন বড় প্রভাব ফেলতে পারে বলে মনে করছেন রাজনৈতিক পর্যবেক্ষকরা।
জানা গিয়েছে, কলকাতায় দলীয় রাজ্য দফতর মুজফ্ফর আহমেদ ভবনে রাজ্য নেতৃত্বের সঙ্গে দেখা করেছেন সুশান্ত ঘোষ। তাঁর উপর থেকে সাময়িক সাসপেনশন তুলে নিয়েছে সিপিএম। সুশান্তবাবুকে পশ্চিম মেদিনীপুর জেলা সম্পাদকমণ্ডলীর দায়িত্ব দেওয়া হয়েছে বলেই খবর। জঙ্গলমহলে লোকসভা নির্বাচনে বিজেপির সাফল্য ভাবিয়ে তুলেছে শাসক দল তৃণমূলকে। সেখানে সুশান্ত ঘোষ সক্রিয় হয়ে উঠলে ভোট কাটাকাটিতে তৃণমূলের বেনিফিট হবে বলেই মনে করা হচ্ছে।
সিপিএম পশ্চিম মেদিনীপুর জেলা কমিটি সুশান্ত ঘোষের প্রত্যাবর্তন ঘিরে চন্দ্রকোনা রোডে বিরাট জমায়েতের প্রস্তুতি নিয়েছে। আগামী ৬ ডিসেম্বর সেখানেই জনসভা করবেন তিনি। তারপর যাবেন গড়বেতা। সুশান্ত ঘোষের ফেরার খবরে পশ্চিম মেদিনীপুরের সব বিধানসভা এলাকায় পড়ছে পোস্টার। কোথাও লেখা আছে, কর্মীদের দাবি মেনে সুশান্ত ঘোষকে দলের সামনের সারিতে আনা হোক। আবার কোথাও লেখা, ‘টাইগার ইজ ব্যাক’। তবে কোনও পোস্টারেই সরাসরি সিপিএম পার্টির নাম নেই। তবে বিধানসভা নির্বাচনে পশ্চিম ও পূর্ব মেদিনীপুরের সবকটি–সহ ঝাড়গ্রাম, পুরুলিয়া, বাঁকুড়ার বিভিন্ন বিধানসভার দায়িত্ব পেয়েছেন সুশান্তবাবু। তিনি বলেন, ‘সুপ্রিম কোর্টের নির্দেশে এটা প্রমাণিত হয়েছে যে, এই সরকার বদল নয়, বদলা নিতে ক্ষমতায় এসেছিল। যেভাবে তাঁরা বিরোধীশূন্যের খেলায় মেতে উঠেছিলেন, এখন ওঁদের সঙ্গে তাই হচ্ছে।’
উল্লেখ্য, বাম জমানায় মন্ত্রী থাকার সময় পশ্চিম মেদিনীপুরের নেতাইতে গণহত্যার ঘটনা ঘটে। এতে নাম জড়ালেও তৃণমূল কংগ্রেস সরকার অভিযোগ প্রমাণ করতে পারেনি। বেনাচাপড়া কঙ্কাল কাণ্ডে নাম জড়ায় সুশান্তবাবুর। এতেও অভিযোগ প্রমাণ হয়নি। বাম সরকার পতনের পর গ্রেফতার হয়েছিলেন তিনি। পরে সুশান্তবাবু তাঁর আত্মজীবনীমূলক বই ‘বামফ্রন্ট জমানার শেষ দশ বছর’— বুদ্ধবাবুর প্রশাসনিক দূর্বলতা নিয়ে লিখেছেন। তাই দলের ভেতরেই তাঁকে সমালোচিত হতে হয়।