ভোরের আলো ফুটে উঠতেই স্বস্তির বাতাবরণ তৈরি হল ডুয়ার্সে। এখানের মেটেলি থানার অন্তর্গত নাগেশ্বরী চা–বাগানের শ্রমিক মহল্লায় আতঙ্কের পরিবেশ কাটল। বেশ কয়েকদিন ধরে চিতা বাঘের আতঙ্কে অতিষ্ঠ হয়ে উঠেছিল নাগেশ্বরী চা বাগান সংলগ্ন এলাকা। বাড়ি থেকে বেরতে ভয় পাচ্ছিলেন গ্রামবাসীরা। শীতের মরশুমে গায়ে কাঁটা দিয়ে উঠছিল চা–বাগানের শ্রমিকদের। কারণ এই বুঝি ঘাড়ে থাবা বসল, এমন ভয় কাজ করতে শুরু করেছিল। নিশুতি রাতের সেই গর্জন সকলের কানেই পৌঁছে ছিল। আর তাই চা–বাগানের শ্রমিকরা সাহস করে বাড়ি থেকে বের হননি। ভোরে বাগানের পথ ধরে হাঁটতেই দেখেন চা–পাতার মধ্যে রয়েছে বিশাল খাঁচা। আর তার মধ্যেই বসে হুঙ্কার দিচ্ছে চিতা বাঘ।
এই ঘটনাই চাক্ষুষ করে স্বস্তির নিঃশ্বাস ফেলেন গ্রামবাসীরা। চা–বাগান থেকে একটি পূর্ণবয়স্ক চিতাবাঘ উদ্ধারের ঘটনায় চাঞ্চল্য ছড়িয়ে পড়ল জলপাইগুড়ির মেটেলি ব্লকের নাগেশ্বরী চা বাগানে। বৃহষ্পতিবার ভোর হতেই শ্রমিকরা দেখতে পান চা– বাগানের ১২ এবং ১৩ নম্বর সেকশনের মাঝে পাতা খাঁচায় বন্দি হয়েছে পূর্ণবয়স্ক একটি চিতা বাঘ। বাঘ বন্দির খবর ছড়িয়ে পড়তেই স্বস্তির পরিবেশ তৈরি হয়েছে চা–বাগানে। খবর পেয়ে ঘটনাস্থলে পৌঁছয় বন দফতরের কর্মীরা। গ্রামবাসীরাই এই খবর ফোন করে দিয়েছেন।
স্থানীয় সূত্রে খবর, কয়েক মাস ধরেই চা–বাগানে চিতাবাঘের আতঙ্ক ছড়িয়ে পড়েছিল। সেটাই বড় আকার নেয় সম্প্রতি। এলাকায় চিতা বাঘের পায়ের ছাপ থেকে শুরু করে গর্জন—সবই দেখতে ও শুনতে পাওয়া যাচ্ছিল। তাতেই আতঙ্কের বাতাবরণ তৈরি হয়। এমনকী খাবারে খোঁজে লোকালয়ে চলে আসছিল চিতাবাঘ। সে দৃশ্যও কমবেশি মানুষ দেখেছেন। আতঙ্কে স্থান ত্যাগ করেন গ্রামবাসীরা। ঘনঘন এই ঘটনায় বাড়ি থেকে বের হওয়ার সাহস পাচ্ছিলেন না মানুষজন। আতঙ্কে গৃহবন্দি থাকছিলেন চা–বাগানের কর্মীরা। বিষয়টি বন দফতরকে জানান চা বাগানের শ্রমিকরা। সব শুনে ব্যবস্থা নেওয়ার আশ্বাস দেওয়া হয়েছিল।
আরও পড়ুন: মুরগির মাংস–পোলট্রির ডিমের দাম বাড়ল, বড়দিনের মরশুমে পকেটে চাপ ক্রেতাদের
তারপর বন দফতর থেকে কর্মীরা এসে চা–বাগান এবং সংলগ্ন এলাকা পরিদর্শন করেন। তখনই তাঁরা বুঝতে পারেন চিতা বাঘের উপস্থিতি আছে। তখন দেখা যায়, চা–বাগানের মাঝেই একটি খাঁচা পেতে, টোপ দিয়ে চলে যান বন দফতরের কর্মীরা। বৃহস্পতিবার ভোরে চা–বাগানের শ্রমিকরা বাগানে কাজ করতে এসে দেখেন চিতা বাঘ ফাঁদে পড়ে গর্জন করছে। তখন চা–বাগানের শ্রমিকরা বাগানের ভিতর ঢুকে খাঁচায় পূর্ণবয়স্ক চিতাবাঘ দেখে ফোন করেন। এই খবর চাউর হয়ে যায়। যা শুনে প্রচুর মানুষ ভিড় জমান। খবর পেয়ে ছুটে আসেন বন দফতরের কর্মীরা। চিতাবাঘকে উদ্ধার করে তার শারীরিক পরীক্ষা করে জঙ্গলের ভিতরে গিয়ে ছেড়ে দেওয়া হবে বলে জানান বন দফতরের কর্মীরা।