গ্রীষ্মের দাবদাহে অতিষ্ঠ বাংলার মানুষ। তাই বরুণদেবকে তুষ্ট করতে ধুমধাম করে ব্যাঙের বিয়ে দেওয়া হল দুর্গাপুর শিল্পাঞ্চলে। মাংস, ভাত, দই, মিষ্টি–সহ একাধিক পদ দিয়ে ভূরিভোজ করেন প্রায় ২০০জন মানুষ। বৃষ্টির দেবতা বরুণদেবের মানভঞ্জনে ব্যাঙের বিয়ে দেখা গেল দুর্গাপুরের স্টিল টাউনশিপে। এটাকে কুসংস্কার বলেন অনেকে। কিন্তু তীব্র গরম সহ্য করতে না পেরে আদিকালের প্রথায় ভরসা করতে বাধ্য হলেন মানুষজন। চাতক পাখির মতো বৃষ্টির অপেক্ষায় এই পথই ধরলেন সকলে।
এদিকে কেরলে বর্ষা ঢুকে পড়েছে। বাংলায় কবে বর্ষা ঢুকবে? এই প্রশ্ন ঘুরপাক খাচ্ছে মানুষের মনে। তার মধ্যেই ব্যাঙের বিয়ে হয়ে গেল। যদি বঙ্গে বৃষ্টিপাত ঘটে এই আশায়। তাই মহা ধুমধাম করে আয়োজন করা হল ব্যাঙের বিয়ের। এই তীব্র দাবদাহে ৪০–৪৫ ডিগ্রির মধ্যে তাপমাত্রা ওঠানামা করছে শিল্পাঞ্চলে। সূর্য যেন শহরের বুকে ঢুকে পড়েছে। এমন সব মিম সোশ্যাল মিডিয়ায় ভাইরাল হচ্ছে। অসহনীয় গরমে হাঁসফাঁস করছে আমজনতা। গরমের দাপট রুখতেই বৃষ্টির আশায় এদিন ৯ নম্বর ওয়ার্ডের নাগরিক সমাজের পক্ষ থেকে ব্যাঙের বিয়ের আয়োজন করা হয়।
অন্যদিকে দুর্গাপুরের শিবমন্দিরে জড়ো হন এলাকার বহু মানুষজন। নির্ধারিত সময়ে শুরু হয় রান্নাবান্না। সেখানে হাজির হন বরযাত্রী এবং কনেযাত্রী। নিয়ম মেনে শুরু হয় বিয়ে। বর কনের বিয়ে দেন পুরোহিত। কনিষ্ক এলাকার বহু মহিলা–পুরুষ একত্রিত হয়ে সেজেগুজে একটি পুরুষ ব্যাঙ নিয়ে এলাকার শিবমন্দিরে হাজির হন। কনেপক্ষ সেকেন্ডারি এলাকা থেকে তত্ত্ব সাজিয়ে একটি স্ত্রী ব্যাঙকে নিয়ে বিয়ে দিতে আসেন ওই মন্দিরে। মন্দির চত্বরে সানাই বেজে ওঠে। মন্ত্র পাঠ করে শুভদৃষ্টি, মালাবদল, সিঁদুর দান সবকিছুই রীতি মেনে হয়। এমনকী মন্দিরের বাইরে চেয়ার টেবিল বসিয়ে এলাহি ভূরিভোজেরও ব্যবস্থা করা হয়।
তারপর ঠিক কী ঘটল? এই বিয়ের পরই অবশ্য খবর আসে কেরলে বর্ষা ঢুকেছে। বঙ্গেও শীঘ্রই ঢুকবে বর্ষা। এই বিষয়ে বিয়ের উদ্যোক্তা কনেপক্ষের বনি সাহা ও বরপক্ষের বুলু মসান এবং অনিমা মিত্র বলেন, ‘ছোটবেলায় আমরা দেখেছি বৃষ্টির জন্য ব্যাঙের বিয়ে দেওয়া হতো। এখনও হয়। এই তীব্র তাপপ্রবাহ থেকে বাঁচতে বরুণদেবকে তুষ্ট করতেই ব্যাঙের বিয়ে দিলাম। বরুণদেব প্রসন্ন হলেই বৃষ্টি হবে।’ বিয়ের পর বর–কনেকে ছেড়ে দেওয়া হয় পুকুরে। টাউনশিপের শিক্ষিত সমাজের মানুষ দাবদাহ থেকে স্বস্তি পেতেই এদিন ব্যাঙের বিয়ে দিয়েছেন বলে মনে করা হচ্ছে।