আগে দাদা বলেছিলেন, ‘মুখ্যমন্ত্রী আমায় তাড়ায়নি, আমিও দল ছাড়িনি।’ তারপর তাঁর বাবা বলেছিলেন, ‘আমি বেইমান নই। তাই তৃণমূলে ছিলাম, আছি এবং থাকব।’ এবার বাড়ির বড় ছেলে বললেন, ‘তৃণমূলে ছিলাম। তৃণমূলেই থাকব। দলের হয়ে আমি তো কাজ করছি। দুয়ারে সরকার, আমার লোকসভা কেন্দ্রে যে কর্মসূচি পালন করা হচ্ছে, সেখানেও আমি কয়েকটি শিবিরে গিয়েছি।’ হ্যাঁ, এই তিনজন হলেন—শিশির, শুভেন্দু ও দিব্যেন্দু অধিকারী। তাঁদের নিয়েই অধিকারী পরিবার।
তমলুকের তৃণমূলের সাংসদ দিব্যেন্দু অধিকারী বলেন, ‘মেদিনীপুরে কলেজ মাঠে মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়ের সভায় আমার যাওয়ার কথা ছিল। প্রস্তুতিও নিয়েছিলাম। কিন্তু দিল্লি থেকে বিমান অনেক দেরিতে ছাড়ায় সভায় যাওয়া হয়নি। জেলায় থাকলে অবশ্যই যেতাম।’ আর সেদিন শিশিরবাবুর হাঁটুতে ব্যথা ছিল তাই তিনি যাননি। একইসঙ্গে দলের সঙ্গে দূরত্ব বাড়িয়েছেন শুভেন্দু অধিকারী। তাই তিনি যাননি। কিন্তু হঠাৎ করে সবাই বলতে শুরু করলেন কেন তৃণমূলেই থাকবেন? উঠছে প্রশ্ন।
হলদিয়া ডেভেলপমেন্ট অথরিটির চেয়ারম্যানের পদ থেকে কয়েকদিন আগেই ইস্তফা দিয়েছেন সাংসদ শুভেন্দু অধিকারী। তারপরই পূর্ব মেদিনীপুরের জেলাশাসককে চেয়ারম্যানের পদে বসানো হয়েছে। তৈরি করা হয়েছে নতুন বোর্ড। এই বোর্ডের অন্যতম সদস্য করা হয়েছে দিব্যেন্দু অধিকারীকে। সঙ্গে আছেন পাঁশকুড়ার বিধায়ক ফিরোজা বিবি ও শুভেন্দু–ঘনিষ্ঠ হিসেবে পরিচিত আনন্দময় অধিকারী। সদস্যপদ পুনর্নবীকরণ করায় দিব্যেন্দু মুখ্যমন্ত্রীকে ধন্যবাদও জানিয়েছেন। এই আনন্দময় অধিকারী একসময় তৃণমূলের জেলা পরিষদের কর্মাধ্যক্ষ ছিলেন। এলাকায় করিৎ–কর্মা নেতা হিসেবে নামডাক আছে। শিশিরবাবুর বিশেষ স্নেহধন্য। একা ভোট করাতে জানেন। শুভেন্দু দলের সঙ্গে দূরত্ব বাড়ালেও আনন্দময় অধিকারী তা করেননি।
দিব্যেন্দুকে এদিন তাঁর লোকসভা নিয়ে জানতে চাওয়া হলে তিনি বলেন, ‘২০১৬ বিধানসভা নির্বাচনে সাতটি বিধানসভার মধ্যে তিনটিতে জিতেছিল বামফ্রন্ট। তার মধ্যে তমলুক (সিপিআই), হলদিয়া (সিপিএম) ও পাঁশকুড়া পূর্ব (সিপিএম)। বাকি চারটি আসন জেতে তৃণমূল। ২০২১ সালের নির্বাচনে বিজেপি এখানে কিছু করতে পারবে না। আমার দৃঢ় বিশ্বাস, বামফ্রন্ট থেকে তিনটি আসন এবার ছিনিয়ে নিতে পারব।’
গোটা বাংলাজুড়ে যে উন্নয়ন হয়েছে, সেই উন্নয়নের রিপোর্ট কার্ড তৃণমূল ভবন থেকে প্রকাশ করা হয়েছে। জেলায় জেলায় পুস্তিকা ছড়িয়ে দেওয়া হচ্ছে। ইতিমধ্যে তমলুকেও এই পুস্তিকা পৌঁছে দেওয়া হয়েছে। দিব্যেন্দু বলেন, ‘দুয়ারে সরকার এই কর্মসূচি সাড়া ফেলেছে। স্বাস্থ্যসাথী কার্ড দেওয়া হচ্ছে। কয়েকটি শিবিরে আমি উপস্থিত ছিলাম। শিবিরে লোক আসছিল প্রচুর। আমাকে নিয়ে মিথ্যা অপপ্রচার করা হচ্ছে। কারা করছে জানি না। দলের সব কাজই আমি করছি। আমি কিন্তু বসে নেই।’ আর শিশিরবাবু বলেন, ‘প্রতিটি মানুষের কাছে এই কার্ড পৌঁছে দেওয়া হবে। প্রস্তুতিও শুরু করা হয়েছে। আমি সকলকে এই রিপোর্ট কার্ড পৌঁছে দেওয়ার জন্য নির্দেশ দিয়েছি।’ কিন্তু অধিকারী গড়ে দাঁড়িয়ে অধিকারীদেরই আজ বলতে হচ্ছে তাঁরা তৃণমূলে আছেন এটা বেশ তাৎপর্যপূর্ণ বলে মনে করছেন রাজনৈতিক পর্যবেক্ষকরা।