আগামী বছরের মাধ্যমিক পরীক্ষার সূচি ঘোষণা করা হয়েছে সোমবার। আর মঙ্গলবারই মধ্যশিক্ষা পর্ষদের আধিকারিকরা হলফ করে বলতে পারছেন না যে ২০২৫ সালে সেই সূচি মেনেই মাধ্যমিক পরীক্ষা হবে। এমনকী শিক্ষামন্ত্রী ব্রাত্য বসু সোমবার সাংবাদিক বৈঠকে আগামী বছরের মাধ্যমিকের পূর্ণাঙ্গ সূচি ঘোষণা করলেও মঙ্গলবার তিনি জানিয়েছেন যে ২০২৫ সালের পরীক্ষার রুটিন পালটানো হতে পারে। সেইসঙ্গে পর্ষদের কোর্টে বল ঠেলে দিয়েছেন শিক্ষামন্ত্রী। পুরো বিষয়টি নিয়ে অবশ্য মুখে কুলুপ এঁটেছে পর্ষদ। আর সেই টালবাহানা নিয়ে প্রশ্ন তুলেছেন শিক্ষক মহলের একাংশ। তাঁদের প্রশ্ন, কোনওরকম পরিকল্পনা ছাড়াই কি ২০২৫ সালের মাধ্যমিকের সূচি ঘোষণা করে দেন শিক্ষামন্ত্রী? সেটার ফলে পড়ুয়াদের মধ্যে তো বিভ্রান্তি তৈরি হবে। যা আদতে রাজ্যের শিক্ষা ব্যবস্থাকে হাস্যকর করে তুলবে বলে দাবি করেছেন শিক্ষক মহলের একাংশ।
কিন্তু সোমবার ব্রাত্য মাধ্যমিকের যে সূচি ঘোষণা করেছেন, সেটা মেনে পরীক্ষা আয়োজনের ক্ষেত্রে কী সমস্যা আছে? সংশ্লিষ্ট মহলের বক্তব্য, আগামী বছর ১৪ ফেব্রুয়ারি থেকে মাধ্যমিক পরীক্ষা শুরু হবে বলে জানান ব্রাত্য। কিন্তু রাজ্য সরকারের ছুটির ক্যালেন্ডার অনুযায়ী, সেদিন ছুটি থাকে। সেদিন পঞ্চানন বর্মার জন্মবার্ষিকী। আবার সেদিন শবে বরাতও পড়েছে। ফলে ১৪ ফেব্রুয়ারি স্কুল ছুটি থাকার কথা। আর যদি স্কুল ছুটিই থাকে, তাহলে কীভাবে ২০২৫ সালের ১৪ ফেব্রুয়ারি থেকে মাধ্যমিক পরীক্ষা শুরু হবে?
যদিও শিক্ষা দফতর সূত্রে খবর, সোমবার ব্রাত্য মাধ্যমিকের সম্ভাব্য সূচি ঘোষণা করেছেন। চূড়ান্ত সূচি ঘোষণা করেননি। পরবর্তীতে মধ্যশিক্ষা পর্ষদের তরফে ২০২৫ সালের মাধ্যমিক পরীক্ষার চূড়ান্ত সূচি ঘোষণা করা হবে। সেই কাজটা শীঘ্রই করা হতে পারে বলে সূত্রের খবর। তবে সোমবার ব্রাত্য যখন আগামী বছরের মাধ্যমিকের সূচি ঘোষণা করেন, তখন একবারও জানাননি যে ‘সম্ভাব্য সূচি’ প্রকাশ করছেন। বরং তিনি দাবি করেন যে ২০২৫ সালের মাধ্যমিক পরীক্ষার দিনক্ষণ নিয়ে মুখ্যমন্ত্রীর মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়ের সঙ্গে আলোচনা করা হয়েছে। সেই আলোচনায় ঠিক হয়েছে যে ১৪ ফেব্রুয়ারি থেকে মাধ্যমিক শুরু হবে। চলবে ২৪ ফেব্রুয়ারি পর্যন্ত।
কিন্তু এখন যা অবস্থা, তাতে সেই সূচি পরিবর্তনের প্রবল সম্ভাবনা আছে বলে সংশ্লিষ্ট মহলের তরফে দাবি করা হয়েছে। শিক্ষক মহলের একাংশের বক্তব্য, সাধারণত তো মাধ্যমিকের ফলপ্রকাশের দিনে আগামী বছরের পরীক্ষার সূচি ঘোষণা করা হয়। এবার কোনও অজ্ঞাত কারণে পুরো বিষয়টি খতিয়ে না দেখেই তাড়াহুড়ো করে সূচি ঘোষণা করা হয়েছে। আর সেটার ফলে অহেতুক পড়ুয়াদের মধ্যে বিভ্রান্তি ছড়াচ্ছে বলে উষ্মাপ্রকাশ করেছেন তাঁরা।
বিষয়টি নিয়ে শিক্ষানুরাগী ঐক্যমঞ্চের সাধারণ সম্পাদক কিংকর অধিকারী বলেন, ‘২০২৫ সালের মাধ্যমিক পরীক্ষার রুটিন ঘোষণা করেছেন মাননীয় শিক্ষামন্ত্রী। ভালো করে পর্যালোচনা না করেই এই রুটিন ঘোষণা করা হয়েছে। ১৪ ফেব্রুয়ারি মাধ্যমিক পরীক্ষা শুরুর দিন পঞ্চানন বর্মার জন্মবার্ষিকী এবং শবে বরাত। কীভাবে ওই দিন পরীক্ষার সূচি ঘোষণা করা হল, তা জানি না। কোনও চিন্তাভাবনা না করেই এই ধরনের ঘোষণার মাধ্যমে সার্বিকভাবে শিক্ষাব্যবস্থাকে হাস্যকর করে তোলা হয়েছে। এই রুটিন পরিবর্তন করা হোক।’