পঞ্চায়েত নির্বাচন মিটতেই এবং ফলাফল প্রকাশের পর নানা দুর্নীতি এবং গণনায় কারচুপির অভিযোগ তুলে মামলা করা হয়েছে কলকাতা হাইকোর্টে। যা এখনও নিষ্পত্তি হয়নি। তাই প্রকাশিত পঞ্চায়েত নির্বাচনের ফলাফলকে চূড়ান্ত বলে ধরা যাবে না বলেছিল কলকাতা হাইকোর্ট। সেই নির্দেশ জেলাশাসকদের লিখিত আকারে জানিয়ে দিয়েছিল রাজ্য নির্বাচন কমিশন। কিন্তু সম্প্রতি নবান্ন থেকে বিজ্ঞপ্তি জারি করা হয়েছে পঞ্চায়েতের বোর্ড গঠন নিয়ে। তাই বিরোধীরা প্রশ্ন তুলেছেন, বিচার প্রক্রিয়া শেষ না হওয়া সত্ত্বেও পঞ্চায়েতের বোর্ড গড়ার প্রক্রিয়া শুরু হয়ে যাচ্ছে কী করে? এটা আদালত অবমাননার সামিল। আর পঞ্চায়েত দফতর বলছে, বোর্ড গঠনের ক্ষেত্রে আদালতের কোনও নিষেধাজ্ঞা নেই।
এদিকে বিধানসভায় যখন বাদল অধিবেশন চলছিল তখন মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় বলেছিলেন, বোর্ড গঠন না হওয়ায় পঞ্চায়েতের কাজ গতি পাচ্ছে না। তাই ডেঙ্গি বাড়ছে। আর ১৬ অগস্টের মধ্যে সব পঞ্চায়েতের বোর্ড গঠন করে ফেলা হোক। এই বিষয়ে সিপিএমের কেন্দ্রীয় কমিটির সদস্য সুজন চক্রবর্তী বলেন, ‘আদালতের নির্দেশে প্রশাসন নোটিশ দিল যে, পঞ্চায়েত নির্বাচনে আপাতত কাউকে জয়ী বলা যাবে না। পরের শুনানি আগামী ১৭ অগস্ট। তাহলে তার মধ্যে নির্বাচিত তালিকার গেজেট বিজ্ঞপ্তি হয় কেমন করে? শুনানির আগেই বোর্ড গঠন কেমন করে? এটা বেআইনি কাজও!’ আর বিরোধী দলনেতা শুভেন্দু অধিকারীও বলেন, ‘নিয়মকানুন, সংবিধান কিছুই এই রাজ্য সরকার মানে না!’
অন্যদিকে এবার পঞ্চায়েত নির্বাচনে ব্যাপক সাফল্য পেয়েছে তৃণমূল কংগ্রেস। বিজেপি বহু জায়গায় নিজেদের গড় ধরে রাখতে পারেনি। সিপিএম তুলনামূলকভাবে উঠে এসেছে। কংগ্রেসের অবস্থা মন্দের ভাল। তবে কয়েকটি জায়গায় গোলমাল হয়েছে বলে অভিযোগ উঠেছে। কিন্তু রাজ্যের সর্বত্র তা হয়নি। এই নিয়ে বিরোধীরা কলকাতা হাইকোর্টে মামলা করেছে। সেক্ষেত্রে বিষয়টি বিচারাধীন। যদিও মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় ঘোষণা করেন, আগামী ১৬ অগস্টের মধ্যে শান্তিপূর্ণভাবে বোর্ড গঠনের প্রক্রিয়া সেরে ফেলতে হবে। তারপরই নানা জায়গায় বোর্ড গঠনের তারিখ ঠিক করা হয়। যা নিয়ে এখন আদালতে আবার যেতে চায় বিরোধীরা।
আরও পড়ুন: ‘কান মুলছি, আর করব না’, শিয়ালদা কোর্টের বিচারকের সামনে আসামীর কাতর আর্জি
ঠিক কী বলছেন পঞ্চায়েতমন্ত্রী? এই ঘটনাকে আদালত অবমাননা বলে কলকাতা হাইকোর্টের দরজায় কড়া নাড়তে চাইছে বিরোধীরা। এমন আবহে রাজ্যের পঞ্চায়েত মন্ত্রী প্রদীপ মজুমদার সংবাদমাধ্যমে বলেন, ‘পঞ্চায়েত বোর্ড গঠনে আদালত কোনও নিষেধাজ্ঞা দিয়েছে বলে আমার জানা নেই। কোনও নির্দিষ্ট মামলার ক্ষেত্রে এরকম বলা হয়ে থাকতে পারে। সেই বিষয়টা আলাদা। এখন সময় পেরিয়ে গেলে পঞ্চায়েতের তিন স্তরের কাজকর্মই প্রশাসকের হাতে দিতে হবে। আর পঞ্চায়েত আইনে প্রশাসকের হাতে আর্থিক ক্ষমতা না থাকায় কোনও কাজ করতে পারবেন না।’