এবার আসামীকে স্বয়ং কাঠগড়া থেকে কাতর আর্জি জানিয়ে কান মুলতে দেখা গেল। ভরা এজলাসে সেটা দেখল সকলে। যদি নেপথ্যে রয়েছে ছেলেমানুষি। কাঠগড়ায় আসামী যখন দাঁড়িয়ে তখন শিয়ালদা আদালতের বিচারক আইনজীবীকে জিজ্ঞাসা করলেন, ‘কী করেছেন আপনার মক্কেল?’ আইনজীবী তখন উত্তরে বলেন, ‘হুজুর, উনি ট্রেনের পাখা ধরে ঝুলে দোল খাচ্ছিলেন। একেবারে নিরীহ খেলা। অপরাধ নেবেন না। দয়া করে ক্ষমা করে দিন।’ এই কথা শুনে এজলাসে থাকা অন্যরা হাসির রোল তোলেন। তখন বিচারককে বলতে শোনা যায়, অর্ডার অর্ডার। এমন ঘটনা যে ঘটতে পারে তা কেউ কল্পনাও করতে পারছেন না। কিন্তু সেটাই ঘটেছে।
তারপর ঠিক কী ঘটল? আইনজীবীর এই কথা শুনে বিচারক তখন মাথা নীচু করে আইনের বইতে ধারা দেখছিলেন। আর ওই আইনজীবীর মক্কেল তখন কাঠগড়ায় তীব্র স্নায়ুর লড়াই করছিলেন। কিছুক্ষণের জন্য চুপচাপ এজলাস। এমন সময়ে আসামীর কাঠগড়ায় দাঁড়িয়ে থাকা মক্কেল বিচারকের উদ্দেশে বললেন, ‘মাই লর্ড, কান মুলছি, আর করব না। জীবনে কোনওদিন পাখা ধরে ঝুলব না। এবারের মতো আমাকে ক্ষমা করে দিন।’ এই কথা শুনে আবার এজলাসে হাসির রোল উঠল। কেউ কেউ বললেন, দেখ কি বলছে। আর বিচারক আবার বললেন, ‘অর্ডার অর্ডার। এটা আদালত। বাড়ির দালান নয়।’
আর কী জানা যাচ্ছে? বিচারক তখন আইনজীবী এবং তাঁর মক্কেলের সব কথা শুনে মাথা নীচু করে বইয়ের পাতায় চোখ রাখেন। সব পক্ষের কথা শোনার পর, সরকারি সম্পত্তি নষ্টের অভিযোগে ওই ব্যক্তিকে জরিমানা করেন বিচারক। এমনকী একই অপরাধ আবার করলে হাজতবাস হবে বলেও জানিয়েও দেন বিচারক। সব শুনে আসতে ধীরে আদালত ছাড়েন দোষী সাব্যস্ত। তবে এমন মক্কেল একা নন। একাধিক ব্যক্তি রয়েছেন এমন অপরাধের সঙ্গে জড়িত। কেউ রেলের হোর্স পাইপ খুলে জল ছড়িয়ে আনন্দ করেছেন। কেউ চেন টেনে ট্রেন থামিয়ে দিয়েছেন। কেউ ট্রেনের শৌচালয়ের কল খুলে জলে থইথই করেছেন ট্রেনের কামরা। তবে তাঁরা প্রত্যেক সাবালক যাত্রী।
আরও পড়ুন: বিজেপির জেলা সভাপতিকে জুতোপেটা মহিলা কর্মীর, কলকাতা হাইকোর্টে তুলকালাম
তাহলে শাস্তি দেওয়া হল কেন? কিন্তু এটা যাত্রীদের কাছে খেলা হলেও আইনের চোখে সরকারি সম্পত্তি নষ্ট করা। আর সেই অপরাধে বেশ কয়েকজনকে ধরে জেলে পুড়েছিল রেল পুলিশ। শিয়ালদা আদালতে এমন ৩০০ জনের বিচার হয়েছে। প্রত্যেকেই অবশেষে ছাড়া পেয়েছেন। কিন্তু হ্যাঁপা পোহাতে হয়েছিল। আদালতে দাঁড়িয়ে প্রত্যেকেই নিজের দোষ কবুল করেছেন। এটাও ঠিক। তার জন্য এক–আধ দিনের জেল এবং জরিমানা গুণতে হয়েছে। যদিও এটা ফৌজদারি অপরাধ নয়। তাই শেষে ছাড়া পেয়েছেন। এই সব আসামীদের আদালতে দাঁড়িয়ে বলতে শোনা গিয়েছে, ভুল হয়েছে, আর হবে না। স্যার আর করব না। এবারের মতো ছেড়ে দিন। এটা নিতান্তই ছেলে–খেলা ছিল। এটাকে বড় অপরাধ হিসাবে দেখবেন না।