জল্পনার উপর জল্পনা। দূরত্ব–বৃদ্ধি থেকে মুক্তিসূর্য এবং স্বামী বিবেকানন্দের বাণী। এই পর্যন্ত জল্পনাতে দু’পক্ষের নীরব অবস্থান দেখেছিল রাজ্য–রাজনীতি। কিন্তু এবার যেন একধাপ এগিয়ে খেলে দেওয়া হল। গেরুয়া কার্ডে দেখা গেল বিজয়া সম্মিলনীর আমন্ত্রণ। যা জল্পনা ইন্ধন জুগিয়েছে। তার সঙ্গে রাজস্থানি পাগড়ি মাথায় শুভেন্দু অধিকারীর ছবি। এগুলি থেকে যা বোঝার সবাই তা বুঝতে পারছেন। তিনি রাজ্যের মন্ত্রী তথা তৃণমূলের প্রথম সারির নেতা। অথচ ওই আমন্ত্রণপত্রে এসব পরিচয়ের নামগন্ধ নেই! আর আয়োজকদের পরিচয় হিসেবে লেখা হয়েছে ‘আমরা দাদার অনুগামী’। এখন প্রশ্ন উঠতে শুরু করেছে, দাদার ইচ্ছা ছাড়া কী অনুগামীরা এই কাজ করেছেন?
পুরুলিয়া জেলায় দাদার–অনুগামীদের আমন্ত্রণপত্র ছড়িয়ে পড়েছে। আর তাতেই রাজনৈতিক জল্পনা তুঙ্গে উঠেছে। এই অনুষ্ঠান হওয়ার কথা ৭ নভেম্বর। সুতরাং হাতে এখনও সময় আছে। তার মধ্যে আর কোনও নতুন জল্পনা তৈরি হয় কিনা সেদিকেই তাকিয়ে সবাই। আজ, শনিবার মেদিনীপুর শহরেও একইরকম আয়োজন করেছে ক্লাব সমন্বয় কমিটি। সেখানেও রাজনৈতিক বা সরকারি পরিচয়ের বাইরে তিনি শুধুই শুভেন্দু অধিকারী। দাদার–অনুগামীদের এই কাণ্ডকারখানায় শিবির বদলের ইঙ্গিত প্রকাশ্যে আসছে। যা নিয়ে বিরক্ত শাসক শিবিরও। তবে তাঁরাও মুখে কুলুপ এঁটে পরিস্থিতির দিকে নজর রাখছেন।
এবার গেরুয়া কার্ডে পাগড়ি মাথায় তাঁর ছবি ছাপিয়ে ‘দাদার–অনুগামী’রা যেভাবে বিজয়া সম্মিলনীর জন্য সক্রিয় হয়েছেন, তাতে দাদার আন্দোলনের কীর্তিই ম্লান হচ্ছে বলে মনে করা হচ্ছে। এই বিষয়ে পুরুলিয়ার অনুষ্ঠানের উদ্যোক্তা, জেলা তৃণমূলের সাধারণ সম্পাদক গৌতম রায় বলেন, ‘আমরা তৃণমূলেরই সৈনিক। কিন্তু দলের নামে কর্মসূচি করলে দলের অনুমতি নিতে হয়। সরাসরি দল করেন না, এমন অনেকেই ইচ্ছে থাকলেও সেখানে যেতে পারেন না। তাই বিকল্প পথে দাদার ফ্যান ক্লাবের সদস্যরা এই নামে আয়োজন করেছেন।’
যদিও তৃণমূলের পুরুলিয়া জেলা কমিটির চেয়ারম্যান তথা রাজ্যের মন্ত্রী শান্তিরাম মাহাতো শুক্রবার বলেন, ‘শুভেন্দুবাবুর ছবি দেওয়া আমন্ত্রণপত্র ছড়িয়ে বিজয়া সম্মেলনের আয়োজন হয়েছে বলে আমার কাছে কোনও খবর নেই।’ তৃণমূল নেতৃত্ব যে শুভেন্দুকে ঘিরে এই সব কার্যকলাপ ভাল চোখে দেখছেন না, মন্ত্রী ফিরহাদ হাকিমের প্রতিক্রিয়ায় স্পষ্ট। রবীন্দ্রনাথকে উদ্ধৃত করে তাঁর কটাক্ষ, ‘রথ ভাবে আমি দেব, পথ ভাবে আমি, মূর্তি ভাবে আমি দেব, হাসেন অন্তর্যামী’।