বোলপুরে তৃণমূল কংগ্রেসের পার্টি অফিস দেখলে যে কেউ শপিং মল বলে ভুল করতে পারেন। কারণ এখানের তিন তলা পার্টি অফিসটির বেশিরভাগ ঘর শীতাতপ নিয়ন্ত্রিত। দামি মার্বেল ফ্লোরে পা হরকে যেতে পারে। মাথার উপর রয়েছে ফলস সিলিং। আর চারদিকে সিসি ক্যামেরা রয়েছে। তাই শপিং মল বলে ভুল হতেই পারে। এটাই বোলপুর শহরে তৃণমূল কংগ্রেসের দলীয় কার্যালয়। যে কার্যালয় পাঁচ বছর আগে রথযাত্রার দিন উদ্বোধন করেছিলেন বীরভূম জেলা তৃণমূল কংগ্রেসের সভাপতি অনুব্রত মণ্ডল। এখন তিনি তিহাড় জেলে বন্দি। এই পার্টি অফিস দেখে তখন প্রশ্ন উঠেছিল, কার টাকায় এমন পার্টি অফিস? অনুব্রত মণ্ডল তখন জবাব দিয়েছিলেন, ‘২০১৩ সালে আমি এই বাড়ি ন্যায্য মূল্যে কিনেছিলাম।’ এবার সেটি পড়েছে এনফোর্সমেন্ট ডিরেক্টরেটের (ইডি) নজরে।
এদিকে এই পার্টি অফিসটি তৈরি করতে কোন ব্যক্তি কোটি টাকা খরচ করেছেন তা জানতে চায় ইডি। অর্থাৎ টাকার উৎস ঠিক কী? এই প্রশ্নের উত্তর খুঁজছেন ইডির তদন্তকারীরা বলে সূত্রের খবর। আর তাই অনুব্রতের ‘ঘনিষ্ঠ’ বোলপুর শহরের ২২ নম্বর ওয়ার্ডের পুরপ্রতিনিধি শিবনাথ রায়–সহ চারজনকে নয়াদিল্লিতে তলব করেছে ইডি। ৩ অক্টোবর থেকে এক সপ্তাহের মধ্যে নয়াদিল্লিতে গিয়ে ইডির সদর দফতরে তাঁদের হাজিরা দিতে বলা হয়েছে। এই চারজনকে জিজ্ঞাসাবাদ করা হবে। এই পার্টি অফিসে থাকা মা কালীর বিপুল অঙ্কের গয়নাও তদন্তকারীদের নজরে পড়েছে।
অন্যদিকে প্রশ্ন উঠেছে, কেন এই চারজনকে ডাকা হল? ইডি সূত্রে খবর, বোলপুরের এই বৈভবের পার্টি অফিসটি প্রথমে তৃণমূল কংগ্রেস নেতা তথা পুর–প্রতিনিধি শিবনাথ রায় ও বোলপুর পুরসভার তিন কর্মীর নামে কেনা হয়েছিল। সুতরাং তাঁরা যে পুরো বিষয়টি জানেন সেটা বুঝতে পেরেছে ইডি। তাই এই তলব। এই বিষয়ে শিবনাথ রায় বলেন, ‘ইডির সমন পেয়েছি। তদন্তে সবরকম সহযোগিতাও করব। তবে এত দ্রুততার মধ্যে নয়াদিল্লি যাওয়া সম্ভব নয় বলে ইমেল করেছি।’ তবে তৃণমূল কংগ্রেসের জেলা সহ–সভাপতি মলয় মুখোপাধ্যায় বলেন, ‘বোলপুরের জেলা পার্টি অফিসের ট্রাস্টি নিয়ে জিজ্ঞাসাবাদ করার জন্য ওই চারজনকে ডাকা হয়েছে।’
আরও পড়ুন: ছুটির দিনে অফিসারদের সঙ্গে নবান্নে বৈঠকে মুখ্যসচিব, বন্যা পরিস্থিতির আশঙ্কা
আর কী জানা যাচ্ছে? সম্প্রতি জেলার নানা দলীয় কার্যালয় থেকে মুছে ফেলা হচ্ছে বীরভূমের দোর্দণ্ডপ্রতাপ নেতা অনুব্রত মণ্ডলের নাম ও ছবি। নানুরের হোসেনপুরের পরে সেটা দেখা গিয়েছিল। এবার বোলপুরের বাহিরি পাঁচশোয়া এলাকায় দলীয় কার্যালয়ে একই দৃশ্য দেখা গেল। যদিও তৃণমূল কংগ্রেস সূত্রে খবর, এখানে অনুব্রতের নাম ও ছবি আগেই মোছা হয়েছিল। সেখানে এখন সাঁটানো হয়েছে তৃণমূল কংগ্রেসের সর্বভারতীয় সাধারণ সম্পাদক অভিষেক বন্দ্যোপাধ্যায় এবং নবনির্বাচিত জেলা পরিষদের সভাধিপতি কাজল শেখের ছবি। পরিবর্তনই তো জীবনের নাম।