চন্দ্রকোনায় তৃণমূল কংগ্রেস কর্মীকে নৃশংসভাবে কুপিয়ে খুন করার অভিযোগ উঠল। নাম বটকৃষ্ণ পাল (৫৫)। বাড়ি পুড়শুড়ি গ্রামে। রাতে তাঁকে ঘুমন্ত অবস্থায় খুন করা হয়েছে বলে অনুমান করা হচ্ছে। বিষয়টি জানাজানি হতেই এলাকায় তীব্র চাঞ্চল্য ও উত্তেজনা ছড়ায়। স্থানীয় বাসিন্দারা খুনের প্রকৃত তদন্তের দাবি তুলে পুলিশকে দেহ তুলতে বাধা দেন। তাঁদের দাবি মতো পুলিশ কুকুর আসে। তারপরে দেহ পুলিশ তুলে নিয়ে যায়। নিজের বাড়িতেই গলাকাটা দেহ মেলে তৃণমূল কংগ্রেস কর্মীর। পুলিশের প্রাথমিক অনুমান, খুনই করা হয়েছে তৃণমূল কংগ্রেস কর্মীকে।
এদিকে শ্যামদেব–বেউড়গ্রাম প্রধানমন্ত্রী সড়ক যোজনার রাস্তার পাশেই বটকৃষ্ণবাবুর আদি বাড়ি। সেই বাড়ি থেকে প্রায় ৭০০–৮০০ মিটার দূরে আরও একটি নতুন পাকা বাড়ি হচ্ছে। সেই নির্মীয়মাণ বাড়িতে এখনও পলেস্তরা হয়নি। জানালা–দরজাও বসেনি। বটকৃষ্ণবাবুর পরিবারের প্রচুর জমি। ধান–সহ চাষের ফসল ওই নতুন বাড়িতে থাকে। পারিবারিক সূত্রে খবর, বাড়ির ছাদ হওয়ার পর থেকেই বটকৃষ্ণবাবু নির্মীয়মাণ বাড়ির একটি খাটে একাই রাতে ঘুমোতেন। মৃতের স্ত্রী সরস্বতী বাগ বলেন, ‘প্রত্যেক দিন রাত ৯টা নাগাদ আমার স্বামী নতুন বাড়িতে ঘুমোতে চলে যেতেন। খুব সকালে উঠে পুরনো বাড়িতে চলে আসতেন।’
অন্যদিকে শনিবার তৃণমূল কংগ্রেস কর্মী বটকৃষ্ণ পালের গলাকাটা দেহ দেখতে পান স্থানীয় বাসিন্দারা। মৃতের ছেলে এবং গ্রামবাসীরা দাবি করেন, পুলিশের কুকুর এনে ঘটনাস্থল পরিদর্শন করতে হবে। এমনকী মৃতের ছেলে সিআইডি তদন্তের দাবি করেন। পুলিশ দাবি মতো কুকুর নিয়ে এসে তদন্ত করে। আর বেশকিছু তথ্যপ্রমাণ জোগাড় করে। ঘাটাল মহকুমা পুলিশ আধিকারিক অগ্নিশ্বর চৌধুরী বলেন, ‘বটকৃষ্ণবাবুকে ধারালো অস্ত্র দিয়ে কুপিয়ে খুন করা হয়েছে বলে অনুমান করা হচ্ছে। পুলিশ ঘটনার তদন্ত শুরু করেছে। আপাতত দেহ উদ্ধার করে ময়নাতদন্তের জন্য পাঠানো হল। ময়নাতদন্তের রিপোর্ট এলে বাকি প্রক্রিয়া করা হবে।’
পুলিশ কী তথ্য পেয়েছে? পুলিশ সূত্রে খবর, রাতে বটকৃষ্ণের সঙ্গে শেষবারের মতো কথা হয়েছিল তাঁর ছেলে গোবিন্দপ্রসাদ পালের। শনিবার সেই পাকা বাড়ি থেকে তাঁর রক্তাক্ত দেহ উদ্ধার হয়। কোনও ধারালো অস্ত্র দিয়ে বটকৃষ্ণবাবুর প্রথমে মাথায় কোপ মারা হয়েছে। তারপর মৃত্যু নিশ্চিত করতে গলার নলি কেটে দেওয়া হয়েছে। বটকৃষ্ণ বাবুর এক ছেলে এবং এক মেয়ে আছে। মেয়ের বিয়ে হয়ে গিয়েছে। ছেলে গোবিন্দ পাল কর্মসূত্রে কলকাতায় থাকেন। গোবিন্দবাবু বলেন, ‘শুক্রবার রাতে বাবার সঙ্গে আমার কথা হয়। তিনি আমাকে এদিন সকালে বাড়ি আসতে বলেন। পুরনো বাড়িতে পৌঁছনোর কয়েক সেকেন্ড পরেই বাবার মৃত্যু সংবাদ পাই।’ স্থানীয় বিধায়ক অরূপ ধাড়া বলেন, ‘উনি দলের পুরনো কর্মী। সমবায় নির্বাচনে প্রতিদ্বন্দ্বিতা করে জয়ী হয়েছিলেন। দলের কোনও পদে না থাকলেও দায়িত্ব নিয়ে কাজ করতেন। মৃতদেহ দেখে মনে হচ্ছে খুন করা হয়েছে। তদন্ত করে দোষীদের গ্রেফতার করতে হবে।’