লকডাউনে বন্ধ রয়েছে ফেরি পরিষেবা। বাধ্য হয়ে প্রতিদিন সকাল ও সন্ধ্যায় সাঁতরে হুগলি নদী পেরিয়ে কাজের জায়গায় যাতায়াত করছেন ২৮ বছর বয়েসি বাসিন্দা সঞ্জয় পাল।
নিজে ভালো সাঁতার না জানা সত্ত্বেও রোজগারের তাগিদে গত ২০ দিনে সকাল ও বিকেলে ২ ঘণ্টা সাঁতরে নদী পেরিয়ে নদিয়ায় পৌঁছচ্ছেন পশ্চিম বর্ধমানের বাসিন্দা সঞ্জয়। নদিয়ায় এক সোনার দোকানে তিনি কাজ করেন।
শয্যাশায়ী বাবা-মা সহ পাঁচ সদস্যের পরিবারে একমাত্র রোজগেরে সঞ্জয়। রোজ দোকানে না গেলে মাসিক বেতন ১০,০০০ টাকা রোজগার হবে না। তাই জীবনের ঝুঁকি নিয়ে রোজ এমন দুঃসাহসি্ক কাজ করছেন নিরুপায় তরুণ।
লকডাউনের আগে প্রতিদিন নৌকায় নদী পারাপার করতেন তিনি। কিন্তু করোনা প্রকোপের জেরে নিষেধাজ্ঞার কোপে পড়ে বন্ধ হয়ে গিয়েছে ফেরি পরিষেবা। এ দিকে দোকানের মালিক জানিয়ে দিয়েছেন রোজ কাজে না এলে বেতন মিলবে না। বাদ্য হয়ে তাই সাঁতরে নীদী পারাপারের ঝুঁক্ি নিতে হয়েছে, জানিয়েছেন সঞ্জয়।
জানিয়েছেন, প্রথম দিকে কলাগাছের গুঁড়ি দিয়ে ভেলা তৈরি করে নদী পেরোবার চেষ্টা করেছিলেন। কিন্তু জোয়ারের ঢেউ সেই ভেলাকে টুকরো করে দেওয়ায় আর চেষ্টা করেননি। তাই রোজ সকালে প্রাতরাশ সেরে প্লাস্টিকের ব্যাগে জামাকাপড় নিয়ে কোমরে বেঁধে নদীতে নামেন সঞ্জয়। স্রোতের সহ্গে লড়াই চালিয়ে নদিয়ার ঘাটে পৌঁছতে লেগে যায় ঘণ্টা দুয়েক। তারপর পোশাক পাল্টে হেঁটে পৌঁছান কর্মস্থানে।
সঞ্জয়ের অসহায়তার কথা জানতে পেরে স্থানীয় তৃণমূল পরিচালিত পঞ্চায়েতের তরফে বিষয়টি খতিয়ে দেখার আশ্বাস দেওয়া হয়েছে। এক তৃণমূল নেতা জানিয়েছেন, অত্যাবশকীয় পণ্য পারাপারের ফেরিতে সঞ্জয় যাতে নদী পেরোনোর সুযোগ পান, সে চেষ্টা করা হবে।
ভাগ্য কবে সদয় হবে, জানেন না সঞ্জয়। শুধু প্রতিদিন জলে নামার আগে ঈশ্বরের প্রতি তাঁর আকুল প্রার্থনা, এ যাত্রায় যেন ডুবে না মরি, হে ভগবান!