থানার পাশেই রয়েছে অস্ত্র কারখানা! আর সেই অস্ত্র কারখানায় জোর কদমে চলছে বিভিন্ন ধরনের অস্ত্র তৈরির কাজ। তবে সেই অস্ত্র সাধারণ কোনও অস্ত্র নয়, সেগুলি হল দেবদেবীর অস্ত্র। দুর্গাপুজো, কালীপুজো, জগদ্ধাত্রী পুজোকে কেন্দ্র করে সারা বছর ধরেই দেব দেবীর অস্ত্র তৈরি হয় এই কারখানায়। আর যে কোনও পুজোর আগে সেখানে অস্ত্র তৈরির ব্যস্ততা আরও বেড়ে যায়। এমনই ছবি দেখা গেল নদিয়ার নবদ্বীপের ওই অস্ত্র কারখানায়। কালীপুজো ও জগদ্ধাত্রী পুজোকে ঘিরে এখন ওই অস্ত্র কারখানায় কর্মীদের ব্যস্ততা তুঙ্গে।
আরও পড়ুন: শতাধিক পুরনো মাজদিয়ার কৃষ্ণগঞ্জের ডাকাত কালী, পুজোর বিশেষ প্রথা কী?
নবদ্বীপ থানার একেবারে পাশেই এই অস্ত্র কারখানাটি অবস্থিত, যেখানে বিভিন্ন ধরনের পিতলের অস্ত্র তৈরি হয়। ছেনি, হাতুড়ি দিয়ে লাগাতার পিটিয়ে এবং কারুকার্যের মাধ্যমে এই অস্ত্রগুলি তৈরি করছেন কর্মীরা। অস্ত্র কারখানার কর্মীরা জানান, আগে সেখানে সাধারণত অন্য ধাতু যেমন টিন সহ অন্যান্য ধাতু দিয়ে দেবদেবীর অস্ত্র তৈরি হত। তবে বর্তমানে সেখানে শুধুমাত্র পিতল দিয়ে অস্ত্র তৈরি করা হয়। কর্মীরা জানিয়েছেন, তারা সকলেই পূর্বপুরুষদের সূত্র ধরে অস্ত্র তৈরির কাজের সঙ্গে যুক্ত রয়েছেন।তবে অস্ত্রের চাহিদা নিয়ে কর্মীদের বক্তব্য, এ বছর অস্ত্রের চাহিদা ভালই রয়েছে। তবে অস্ত্র তৈরির জন্য কাঁচামালের দাম বেশি রয়েছে এবছর। ফলে তাতে একটু অসুবিধা হচ্ছে। কিন্তু, চাহিদা বেশি থাকার ফলে তাতে বিশেষ কোনও অসুবিধা হবে না বলেই মনে করছেন তারা।
জানা গিয়েছে, এই কারখানায় মা কালীর অস্ত্রের জন্য ছোট খাঁড়া থেকে শুরু করে বড় খাঁড়া এবং অন্যান্য অস্ত্র তৈরি হচ্ছে। এ বছর এখনও পর্যন্ত ৭ ফুট উচ্চতার খাঁড়া তৈরি হয়েছে এই অস্ত্র কারখানায়। সে ক্ষেত্রে অস্ত্রের মূল্য ১০০ টাকা থেকে শুরু করে ৮০০০ টাকা পর্যন্ত রয়েছে। সেক্ষেত্রে দাম নির্ধারণ করা হয় অস্ত্রের আকারের ওপর নির্ভর করে। জানা গিয়েছে, বর্তমানে ওই কারখানায় ১৫ জন কর্মী রয়েছেন। তারা সকলেই অস্ত্র তৈরিতে দক্ষ।
কারখানা কর্মীরা জানান, সমস্ত পুজোতেই দেবদেবীর প্রতিমার জন্য অস্ত্রের প্রয়োজন হয়। যেহেতু সারা বছরই ধরে পুজো চলতে থাকে সেই কারণে তারা সারা বছর ধরে অস্ত্র বানিয়ে থাকেন। তবে পুজোর আগে চাহিদা বেশি থাকায় অস্ত্র তৈরির পরিমাণ বাড়িয়ে দেন তারা। এখন যেহেতু কালীপুজো আছে তাই তারা কালী প্রতিমার অস্ত্র তৈরিতে ব্যস্ত। কর্মীদের বক্তব্য, তাদের অস্ত্রের জনপ্রিয়তা শুধু বাংলা নয়, বিহারেও রয়েছে। বিহার থেকেও অনেক ক্রেতা দেবদেবীর জন্য তাদের কাছ থেকে অস্ত্র কিনে নিয়ে যান।