কারও বিরুদ্ধে কোনও অভিযোগ নেই তাঁর। নিজের অবস্থান থেকে ১৮০ ডিগ্রি ঘুরে এমনটাই দাবি করল সন্দেশখালির তৃণমূলি মাফিয়া শেখ শাহজাহান। রবিবার স্বাস্থ্যপরীক্ষার জন্য তাঁকে জোকা ESI হাসপাতালে নিয়ে গেলে এই দাবি করে সে। শাহজাহানের এই মন্তব্যে প্রশ্ন উঠছে, তবে কি তার সঙ্গে দূরত্ব বাড়ছে তৃণমূলের।
শাহজাহানের ভোলবদল
রবিবার শাহজাহানকে সাংবাদিকরা প্রশ্ন করেন, কারা আপনাকে ফাঁসাচ্ছে? নাম বলুন। জবাবে শাহজাহান বলে, কোনও অভিযোগ নেই। যদিও গতদিনই এই জোকা ESI হাসপাতালে সে বলেছিল, বিজেপির দালালরা তাকে ফাঁসাচ্ছে।
শাহজাহানের এই ভোলবদলে প্রশ্ন উঠছে, তবে কি তৃণমূলের সঙ্গে দূরত্ব বাড়ছে তার? সন্দেশখালির গণঅভ্যুত্থানের পর স্থানীয়দের মনে ফের জায়গা করে নিতে শাহজাহানের ঘাড়েই কাঁঠাল ভেঙেছে তৃণমূল। গ্রেফতারির পরই তাকে বহিষ্কার করেছে দল। ওদিকে কেলে রয়েছে তার অনুগামী বলে পরিচিত ব্লক প্রেসিডেন্ট শিবু হাজরা ও জেলা পরিষদ সদস্য উত্তম সরদার। এছাড়াও শাহজাহানের ভাইসহ একাধিক অনুগামী ও ঘনিষ্ঠকে গ্রেফতার করেছে CBI.
দূরত্ব বাড়ছে দলের সঙ্গে?
গ্রেফতারির আগে পর্যন্ত শাহজাহানের পাশেই ছিল তৃণমূল। কিন্তু শাহজাবানের গ্রেফতারির পর দ্রুত বদলে যেতে থাকে ছবিটা। শাহজাহান গ্রেফতার হতেই সন্দেশখালিতে ফিরেছেন তৃণমূলে তার বিপক্ষ গোষ্ঠীর নেতারা। তৃণমূলের শীর্ষনেতারা হাত ধরে তাদের বাড়িতে পৌঁছে দিচ্ছেন। শাহজাহানের ত্রাসে যারা এলাকায় ঢুকতেন না, তারাই ক্রমশ সর্বেসর্বা হয়ে উঠছেন সেখানে। ইডি হেফাজতে থাকা শাহজাহানের কাছে সম্ভবত সেই বার্তা পৌঁছেছে।
গত ৫ জানুয়ারি সন্দেশখালিতে EDর ওপর হামলার পর থেকে বেপাত্তা ছিলশ শাহজাহান। ওদিকে রাজ্য পুলিশের ওপর তাকে গ্রেফতার করার চাপ ক্রমশ বাড়তে থাকে। এর মধ্যে ফেব্রুয়ারির শুরুতে সন্দেশখালি থেকে শাহজাহানের বাহিনীর বিরুদ্ধে মহিলাদের ওপর নির্যাতন করার অভিযোগ ওঠে। ওদিকে সন্দেশখালিতে EDর ওপর হামলার ঘটনায় রাজ্য পুলিশ ও CBIএর যৌথ সিট গঠন করে তদন্তের নির্দেশ দেয় নিম্ন আদালত। সেই রায়কে চ্যালেঞ্জ করে ED হাইকোর্টে গেলে তদন্তপ্রক্রিয়ায় স্থগিতাদেশ দেয় কলকাতা হাইকোর্ট। সেই স্থগিতাদেশকে শাহজাহানের গ্রেফতারির ওপর স্থগিতাদেশ বলে চালানোর চেষ্টা করে রাজ্য পুলিশ ও তৃণমূল। যদিও কলকাতা হাইকোর্ট স্পষ্ট করে দেয়, অন্য মামলাগুলিতে শাহজাহানকে গ্রেফতার করতে কোনও বাধা নেই।
এর পর গত ২৯ ফেব্রুয়ারি বাধ্য হয়ে শাহজাহানকে গ্রেফতার করে রাজ্য পুলিশ। এর পর শাহজাহানকে হেফাজতে চেয়ে হাইকোর্টের দ্বারস্থ হয় CBI. হাইকোর্ট শাহজাহানকে হস্তান্তরের নির্দেশ দিলেও রাজ্য পুলিশ সেই নির্দেশ কার্যকর করতে গড়িমসি করে বলে অভিযোগ। আদালতের চাপে অবশেষে শাহজাহানকে CBIএর হাতে তুলে দিতে বাধ্য হয় তারা।