স্নিগ্ধেন্দু ভট্টাচার্য
বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থা ও কেন্দ্রীয় সরকার করোনা সংক্রমণ রোধে যখন সমস্ত বড় জমায়েত না করতে পরামর্শ দিচ্ছে। করোনাভাইরাস সংক্রমণের আশঙ্কায় যখন ফাঁকা মাঠে খেলানো হচ্ছে ক্রিকেট – ফুটবল। বাতিল হচ্ছে একের পর এক ট্যুর্নামেন্ট, তখনই সমস্ত পরামর্শ উপেক্ষা করে কলকাতার নেতাজি ইন্ডোর স্টেডিয়ামে ‘খেলরত্ন’ পুরস্কার বিতরণ অনুষ্ঠানের আয়োজন করল মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়ের সরকার। সেখানে প্রায় ১০,০০০ মানুষের জমায়েতের সামনে ভাষণ দিলেন মুখ্যমন্ত্রী। এখানেই শেষ নয়, শুক্রবার ওই মঞ্চ থেকে করোনাভাইরাস থেকে কী করে বাঁচা যায় উপস্থিত জনতাকে তার পরামর্শ দিলেন তিনি। নিজে কারও পরামর্শ না মানলেও হাজির জনতাকে সরকারের পরামর্শ মেনে চলার নির্দেশ দিলেন মমতা।
করোনাভাইরাসের আতঙ্কে প্রায় স্তব্ধ হয়ে গিয়েছে গোটা বিশ্ব। ভারতে প্রভাব বেশি না পড়লেও সাবধানতায় কোনও খামতি রাখতে চাইছেন না কেউ। ইতিমধ্যে করোনাভাইরাসকে বিশ্বব্যাপী মহামারি ঘোষণা করেছে বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থা। শুক্রবারই দিল্লিতে IPL-এর কোনও ম্যাচ অনুষ্ঠিত হবে না বলে জানিয়ে দিয়েছেন সেখানকার মুখ্যমন্ত্রী। ৩১ মার্চ পর্যন্ত রাজধানীর যাবতীয় স্কুল, কলেজ ও সিনেমা হল বন্ধ রাখার সিদ্ধান্ত হয়েছে। এমনকী শুক্রবার থেকে বিদেশিদের ভারতে প্রবেশে সম্পূর্ণ নিষেধাজ্ঞা জারি করেছে ভারত সরকার। পরিস্থিতি যখন অত্যন্ত গুরুতর তখন নেতাজি ইন্ডোর স্টেডিয়ামে সরকারি ১০,০০০ মানুষের জমায়েত করল মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়। এই কাজের জন্য সমালোচনার মুখে পড়তে হতে পারে এই আশঙ্কায় মুখ্যমন্ত্রী এদিন তাঁর বক্তব্যে বলেন, ‘অনুষ্ঠান বাতিলের উপায় ছিল না।’ এই অনুষ্ঠান থেকে রাজ্যের ২৬,০০০ ক্লাবকে ক্রীড়া সরঞ্জাম কেনার জন্য ‘অনুদান’ দেয় পশ্চিমবঙ্গ সরকার। মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়ের এহেন কাণ্ডজ্ঞানহীন আচরণের সমালোচনা করেছে বিরোধীরা।
এদিন করোনাভাইরাস নিয়ে কেন্দ্রের নির্দেশিকার একটি প্রতিলিপি পাঠ করেন মমতা। তিনি বলেন, ‘কেন্দ্রীয় সরকার কোনও জমায়েত করতে বারণ করেছে। অনুষ্ঠান আয়োজনের ওপরেও নিষেধাজ্ঞা জারি হয়েছে। কিন্ত আমাদের অনুষ্ঠান বাতিলের উপায় ছিল না। এমন দিন তো রোজরোজ আসে না।’ রাজ্য ক্রীড়া ও যুবকল্যাণ দফতরের তরফে জানানো হয়েছে, ১২,০০০ আসনের যুবভারতীতে এদিন ১০,০০০ মানুষ উপস্থিত ছিলেন। এদিনের অনুষ্ঠানে ইস্টবেঙ্গল ও মোহনবাগান দু’টি ক্লাবকেই সংবর্ধনা দেওয়া হয়। ইস্টবেঙ্গলকে সংবর্ধনা দেওয়া হয় শতবর্ষের জন্য। মোহনবাগান সংবর্ধনা পায় আইলিগ জয়ের জন্য।
কেন্দ্রের উপদেশ না-মেনে হাজার হাজার লোক জড়ো করে এদিন পালটা উপদেশ দেন মমতা। বলেন, ‘করোনাভাইরাস থেকে বাঁচতে আমাদের এক-দু মাস ভিড়ের থেকে দূরে থাকা উচিত। হাত না মিলিয়ে নমস্কার করা উচিত। আর প্রতি ঘণ্টায় অন্তত ২০ সেকেন্ড করে হাত ধোয়া উচিত।’ এদিন অনুদানের চেক পাওয়ার জন্য ক্লাবগুলিকে লাইনে দাঁড়ানোর দরকার নেই বলে জানান মমতা।
করোনাভাইরাস আতঙ্কের মধ্যে এতবড় জমায়েত করায় মমতার তুমুল সমালোচনা করেছে বিরোধীরা। বিজেপির রাজ্য সাধারণ সম্পাদক সায়ন্তন বসু বলেন, ‘এটা মুখ্যমন্ত্রীর কাণ্ডজ্ঞানহীনতার নজির। উনি খয়রাতি করে প্রচারে থাকার কোনও সুযোগ ছাড়বেন না। বিশেষ করে সামনে যখন পুর নির্বাচন।’
কংগ্রেস বিধায়ক মনোজ চক্রবর্তী বলেন, ‘ভিড় না জমিয়েও ক্লাবকে টাকা পাঠানো যেত। কিন্তু নিয়ম-কানুন মানা তো ওনার অভ্যাস নয়।’