একুশের নির্বাচনের আগে যেসব সিদ্ধান্তকে সঠিক মনে হয়েছিল, একুশের নির্বাচনের ফলাফলের পর সেগুলিকেই ভুল বলে মানছেন বিজেপির শীর্ষ নেতারা। দীর্ঘ আলাপ–আলোচনার পর তাঁদের রণকৌশল উপযুক্ত ছিল না বলে দলীয় বৈঠকে স্বীকার করে নিলেন বিজেপির কেন্দ্রীয় যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক (সংগঠন) শিবপ্রকাশ। কিন্তু এখন আর ভুল স্বীকার করে কি লাভ? উঠছে প্রশ্ন।
জানা গিয়েছে, বিজেপির রাজ্য সভাপতি দিলীপ ঘোষ, রাজ্য দলের সাধারণ সম্পাদক (সংগঠন) অমিতাভ চক্রবর্তী, শিবপ্রকাশ–সহ একাধিক শীর্ষ নেতারা হেস্টিংস কার্যালয়ে দু’দফায় সাংগঠনিক বৈঠক করেন। প্রথম বৈঠকে ডায়মন্ড হারবার, মথুরাপুর এবং দক্ষিণ ২৪ পরগনা (পূর্ব) এবং দ্বিতীয় বৈঠকে কলকাতা উত্তর ও দক্ষিণ এবং উত্তর শহরতলির জেলা নেতৃত্ব ও মণ্ডল সভাপতিদের ডাকা হয়। সেখানে তাঁদের উপর এই হারের দায় চাপিয়ে দেওয়ার কৌশল নেওয়া হয়। তখন পাল্টা জেলা ও মণ্ডল স্তরের নেতাদের অনেকে প্রার্থী বাছাইয়ের ক্ষেত্রে নয়াদিল্লির মত চাপিয়ে দেওয়াকে দায়ী করেন। তাতে বেশ অস্বস্তিতে পড়ে যান বিজেপির প্রথমসারির নেতারা। তখন শিবপ্রকাশ বৈঠকে বলেন, ‘অনেকে বলতেন ‘উত্তরপ্রদেশ মডেলে’ পশ্চিমবঙ্গে ভোট জেতা যাবে না, তখন তাঁরা তা মানেননি। কিন্তু ফলাফলের পরে তাঁরা বুঝতে পেরেছেন, উত্তরপ্রদেশ আর পশ্চিমবঙ্গ এক নয়। এখানে জিততে হলে এখানকার উপযোগী রণকৌশল তৈরি করা দরকার।’
একুশের নির্বাচনে ২০০ আসন নিয়ে সরকার গড়বেন বলে বিজেপি নেতারা সুর চড়িয়েছিলেন। অন্য দল এবং অভিনয় জগৎ থেকে অনেককে বিজেপিতে যোগদান করানো হয়েছিল। সকালে বিজেপিতে যোগ দেওয়া ব্যক্তিকে বিকেলে প্রার্থী করা হয়েছিল। এই সব বিষয়ে তখন বিজেপির ভিতরে–বাইরে প্রশ্ন উঠেছিল। নির্বাচন পর্বে ভিন রাজ্য থেকে যেসব বিজেপি কর্মীরা এসেছিলেন তাঁদের ভাষা এবং সংস্কৃতির সঙ্গে স্থানীয় মানুষ নিজেদের মেলাতে পারেননি। শিবপ্রকাশের স্বীকারোক্তিতে ‘উত্তরপ্রদেশ মডেল’ বলতে এই প্রসঙ্গই বোঝাতে চাওয়া হয়েছে।
বিজেপি সূত্রে খবর, এই বৈঠকে কয়েকজন জেলার নেতা অভিযোগ করেন, নির্বাচনের পরাজয়ের পরে জেলা ও প্রার্থীদের দোষারোপ করা হচ্ছে। অথচ অন্য রাজ্য থেকে আসা নেতাদের এখানকার বিষয় বোঝানোর চেষ্টা হয়েছিল, তখন তাঁরা তা শুনতে চাননি। উলটে নিজেদের মত চাপিয়ে দিয়েছিলেন। এমনকী নির্বাচনের পরে যখন কর্মীদের উপরে হামলা হয়েছে, তখন নেতাদের দেখা পাওয়া যায়নি। এই অভিযোগ তুলতেই অস্বস্তিতে পড়ে গিয়েছেন বিজেপি নেতারা।