কলকাতার ঐতিহ্যবাহী ট্রামকে বাঁচাতে আগেই কমিটি গঠন করার নির্দেশ দিয়েছিল কলকাতা হাইকোর্ট। সেই মতোই কমিটি গঠন করেছে রাজ্য সরকার। পরিবহণ দফতরের ম্যানেজিং ডিরেক্টরের নেতৃত্বে ১২ জন সদস্য নিয়ে গঠিত কমিটিকে আগামী দুই সপ্তাহের মধ্যে প্রথম বৈঠক করতে বলল আদালত। বৈঠকে ট্রাম বাঁচাবে তাদের প্রাথমিক পরিকল্পনার কথা আদালতকে জানাতে হবে বলে নির্দেশ দিয়েছে হাইকোর্টের প্রধান বিচারপতি টিএস শিবজ্ঞানম ও বিচারপতি হিরণ্ময় ভট্টাচার্যের ডিভিশন বেঞ্চ।
আরও পড়ুন: শিয়ালদহ উড়ালপুল বাঁচাতে গেলে তুলে ফেলতে হবে ট্রাম লাইন, রিপোর্ট বিশেষজ্ঞদের
সোমবার এই সংক্রান্ত মামলায় কলকাতা হাইকোর্ট জানিয়েছে, প্রয়োজনে এই কমিটিতে কোনও বিশেষজ্ঞকে নিযুক্ত করা যাবে। মূলত কাজের গতি বাড়ানো এবং সঠিক সিদ্ধান্ত নেওয়ার জন্য সেই বিশেষজ্ঞকে নিয়োগ করা যাবে বলে জানিয়ে দিয়েছে আদালত। সোমবার মামলার শুনানিতে পূর্বের নির্দেশ সংশোধন করে ডিভিশন আরও জানিয়েছে, ট্রাম সংস্থা তাদের কোনও সম্পত্তি বিক্রি করতে পারবে না। শুধু তাই নয়, আদালতের নির্দেশ ছাড়া কোনও জমি দীর্ঘমেয়াদির ভিত্তিতে লিজ দিতে পারবে না। উল্লেখ্য, গত ২১ জুন কলকাতা হাইকোর্টে একটি জনস্বার্থ মামলা হয়। সেই মামলায় ট্রামের জমি বিক্রির উপর অন্তর্বর্তী নিষেধাজ্ঞা দিয়েছিল কলকাতা হাইকোর্ট। সেই সময় প্রধান বিচারপতি মন্তব্য করেছিলেন, ‘হেরিটেজ রক্ষার দায়িত্ব হল রাজ্যের। একাধিক হেরিটেজ রাজ্য সম্পূর্ণ নিজের অর্থে বা আংশিক কেন্দ্রীয় সাহায্যে রক্ষা করে থাকে। দুর্গাপুজো ইউনেস্কোর তরফ থেকে হেরিটেজ তকমা পাওয়ায় রাজ্যের মানুষ গর্বিত হয়েছেন। ট্রাম আধুনিকতার সঙ্গে চললে মানুষ গর্ববোধ করবেন।’
প্রসঙ্গত, ১৫০ বছর ধরে কলকাতার বুকে ট্রাম চলছে । কিন্তু, সময়ের সঙ্গে সঙ্গে এখন সেই ট্রাম প্রায় বিলুপ্ত হতে চলেছে। বর্তমানে কলকাতার রাস্তায় হাতেগোনা কয়েকটি রুটেই ট্রাম চলে। তাও সেগুলির অবস্থা ভালো নয়। এই অবস্থায় কলকাতার এই প্রাচীন পরিবহণকে বাঁচাতে কমিটি গঠন করার নির্দেশ দিয়েছিল কলকাতা হাইকোর্ট। সেই নির্দেশ মেনেই গঠিত হল কমিটি। এই কমিটিতে পরিবহণ দফতরের ৭জন আধিকারিক রয়েছেন। এছাড়াও এই কমিটিতে রয়েছে স্বেচ্ছাসেবী সংগঠনের সদস্য, ট্রাম লাভার সংগঠনের সদস্য, কলকাতা পুরসভার হেরিটেজ কমিটির সদস্য এবং এই দাবিতে মামলা করা সুলগ্না মুখোপাধ্যায়।
পরিবহণ দফতর সূত্রে জানা গিয়েছে, মূলত ট্রামকে কীভাবে বাঁচিয়ে রাখা যায় তাই নিয়ে ভাবনাচিন্তা এবং পদক্ষেপ করবে এই কমিটি। সময়ের সঙ্গে সঙ্গে খাপ খাইয়ে কীভাবে এই ট্রামকে আধুনিক করা যায় তা নিয়ে ভাবনা চিন্তা করবে। দুষণহীন যান হিসেবে ট্রামের গুরুত্বকে অবগত করাবে। প্রভৃতি বিষয়ে কাজ করবে এই কমিটি। পাশাপাশি ট্রামের ফলে শহরের রাস্তায় তৈরি হওয়া যানজটের বিষয়টিও মাথায় রাখবে এই কমিটি।