পশ্চিমবঙ্গে করোনা চিকিৎসার পদ্ধতি নিয়ে চরম বিভ্রান্তি। রাত পোহাতে না-পোহাতে বদলে গেল স্বাস্থ্য দফতরের জারি নির্দেশিকা। সোমবার রাতে নির্দেশিকা প্রকাশ করে স্বাস্থ্য দফতর জানিয়েছিল করোনাভাইরাস পজিটিভ হলে হাসপাতালে ভর্তি হওয়া বাধ্যতামূলক। মঙ্গলবার সকালে আরেক নির্দেশিকায় তারা জানাল, হালকা উপসর্গ বা উপসর্গহীন হলে হোম আইসোলেশনেও নেওয়া যেতে পারে চিকিৎসা। বলে রাখি, সোমবার বিকেলে নবান্নে মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যাও একই কথা বলেছিলেন।
মঙ্গলবার বাড়িতে করোনার চিকিৎসা সংক্রান্ত একটি নির্দেশিকা প্রকাশ করে কেন্দ্রীয় স্বাস্থ্য ও পরিবারকল্যাণ মন্ত্রক। এর পরই নিজেদের পুরনো নির্দেশিকা থেকে সম্পূর্ণ উলটো পথে হেঁটে মুখ্যমন্ত্রীর বাড়িতে চিকিৎসার নিদান দিয়ে নির্দেশিকা জারি করে রাজ্য স্বাস্থ্য দফতর।
কী রয়েছে কেন্দ্রের নির্দেশিকায়?
কেন্দ্রের নির্দেশিকায় রয়েছে, কেউ করোনায় আক্রান্ত হলেই তাঁকে আর হাসপাতালে ভর্তি হতে হবে না। চাইলে তিনি বাড়িতে থেকেও চিকিৎসা নিতে পারেন। সেক্ষেত্রে তাঁকে সর্বক্ষণ দেখভালের জন্য একজন ব্যক্তি থাকা বাধ্যতামূলক। বাড়িতে করোনার চিকিৎসা নিতে গেলে মানতে হবে একগুচ্ছ বিধিনিয়ম।
১. রোগীর উপসর্গ খুব সামান্য বা উপসর্গ নেই বলে ঘোষণা করতে হবে কোনও স্বীকৃতিপ্রাপ্ত চিকিৎসককে। তবেই তাঁরা হোম আইসোলেশনে থাকতে পারবেন। তবে সঙ্গে আক্রান্তের গোটা পরিবারকে আইসোলেশনে থাকতে হবে।
২. করোনা রোগীর দেখভালের জন্য সারাক্ষণ একজন ব্যক্তিকে থাকতে হবে। তিনিই স্বাস্থ্য দফতরের সঙ্গে যাবতীয় যোগাযোগ রাখবেন।
৩. যে ব্যক্তি রোগীর দেখভালের দায়িত্বে রয়েছেন তিনি ও রোগীর সংস্পর্শে যারা এসেছেন তাদের সবাইকে হাইড্রক্সিক্লোরোকুইন খেতে হবে।
৪. রোগীর ফোনে আরোগ্য সেতু অ্যাপ ডাউনলোড করে সর্বক্ষণ ডেটা ও ব্লু টুথ অন রাখতে হবে।
৫. রোগীর শারীরিক পরিস্থিতি সম্পর্কে স্বাস্থ্য দফতরের আধিকারিকদের নিয়মিত জানাতে হবে।
৬. রোগী যে স্বেচ্ছায় হোম আইসোলেশনে থাকছেন তা লিখিত ভাবে জানাতে হবে।
রোগীর দেখভালের দায়িত্বে থাকা ব্যক্তিদের জন্যও নির্দেশিকা জারি করেছে কেন্দ্রীয় স্বাস্থ্য মন্ত্রক।
জানানো হয়েছে, দেখভালের দায়িত্বে থাকা ব্যক্তিকেও অত্যন্ত সতর্ক থাকতে হবে। শ্বাসকষ্ট, বুকে ব্যথা, মানসিক চাপ বা অবসাদ ও ঠোঁট বা মুখের রং বদলাতে দেখতেই স্বাস্থ্য দফতরের আধিকারিকদের সঙ্গে যোগাযোগ করতে হবে।
কোনও রোগী হোম আইসোলেশনে থাকাকালীন তাঁর উপসর্গের মাত্রা বৃদ্ধি পেলে তাঁকে হাসপাতালে স্থানান্তরিত করবেন স্বাস্থ্যকর্মীরা।
কিন্তু প্রশ্ন হল, কেন্দ্রীয় সরকারের নির্দেশিকা জারির আগে সোমবার বিকেলে কী করে এই ঘোষণা করলেন মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়? আর মুখ্যমন্ত্রী সঠিক ঘোষণা করে থাকলে কেন রাতে নির্দেশিকা জারি করে ‘করোনার আক্রান্তের চিকিৎসা হাসপাতালেই হবে’ বলতে হল রাজ্য স্বাস্থ্য দফতরকে? ধোঁয়াশা কাটছে না।