রাজ্য জুড়ে ভোট উৎসবের প্রস্তুতি চলছে জোর কদমে। এই উৎসবের মধ্যে দিয়ে মানুষ যাতে তাঁর পছন্দ মতো প্রার্থীকে বেছে নেন, তাঁর আওয়াজ লোকসভার অন্দরে পৌঁছে দিতে পারেন। তার জন্য জোর কদমে চলছে রাজনৈতিক দলগুলির প্রচার। ঢাক-ঢোল পিটিয়ে মানুষের কাছে জাহির করছেন তাঁর পোর্টফোলিও। সেই পোর্টফোলিও দেখে যাচাই করে গণদেবতা বেছে নেবেন তাঁর পছন্দের প্রার্থীকে।
আজ থেকে ১০০ বছর আগে এমনই এক ভোটের মাধ্যমে শহর কলকাতার মানুষ বেছে নিয়েছিলেন মহানগরের প্রথম মহানাগরিককে। তিনি শুধু মহানাগরিক নয় প্রকৃত অর্থে ‘মহান নাগরিক’। একশ বছর আগে ১৯২৪ সালের ১৬ এপ্রিল জনতার ভোটে জিতে কলকাতার প্রথম মেয়র হয়েছিলেন দেশবন্ধু চিত্তরঞ্জন দাস। পরাধীন ভারতে এই জয় ছিল ছিল দেশের স্বাধীনতার জন্য এগিয়ে চলার লক্ষ্যে প্রথম পদক্ষেপ।
১৯২৪ সালের ১৬ এপ্রিল ‘ক্যালকাটা মিউনিসিপ্যাল অ্যাক্ট’, ১৯২৩-এর অধীনে প্রথম নির্বাচিত মেয়র হয়েছিলেন দেশবন্ধু চিত্তরঞ্জন দাস।
আরও পড়ুন। পুকুর ভরাট রুখতে তৎপর পুরসভা, প্রতিটি বরোয় ১০ সদস্যের কমিটি গঠনের নির্দেশ
আগে মেয়র হতেন ব্রিটিশরা
১৭২৬ সালে প্রথম কলকাতা পুরসভা তৈরি হয়। সেই সময় থেকে পুরসভার মেয়র বা চেয়ারম্যান হতেন ব্রিটিশরাই। ব্রিটিশ সরকারই মনোনীত কোনও ব্যক্তিকে মেয়র করতেন। ‘নেটিভদের’ মেয়র বা চেয়ারম্যান হওয়ার কোনও সুযোগ ছিল না। তারপর বিভিন্ন সময় ধাপ ধাপে পুরসভার প্রশাসনিক কাঠামোর পরিবর্তন হয়। ১৯২৩ সালে বাংলার ‘লোকাল সেলফ গভর্নমেন্ট’-এর প্রথম মন্ত্রী সুরেন্দ্রনাথ বন্দ্যোপাধ্যায় ‘ক্যালকাটা মিউনিসিপ্যাল আইনে’ ভোটাধিকার ও বার্ষিক নির্বাচনের মাধ্যমে মেয়র পদে বসার আইন তৈরি করেন।
পরের বছর ১৯২৪ সালে ভোটভুটির মাধ্যমে মেয়র নির্বাচিত হন চিত্তরঞ্জন। সেই ভোটে দেশের মধ্যে প্রথমবার ভোটাধিকার পান মেয়েরা।
লোকসভা নির্বাচনের সব খবর পড়ুন এখানে
কলকাতার সঙ্গে জুড়ল আরও এলাকা
কলকাতা পুরসভার প্রথম মেয়র হন চিত্তরঞ্জন দাস। চিফ এক্সিকিউটিভ অফিসার হলেন সুভাষচন্দ্র বসু। তারপর থেকে প্রতিবছর মেয়র নির্বাচন হতে শুরু করে কলকাতা পুরসভার। মেয়র হন, যতীন্দ্রমোহন সেনগুপ্ত, বিজয়কুমার বসু, সুভাষচন্দ্র বসু, বিধানচন্দ্র রায় থেকে তারকা খচিত সেই তালিকা দীর্ঘ হতে থাকে। জেলে বন্দি হওয়ার পরও জেলে বসে মেয়রের কাজকর্ম সামলাতেন সুভাষচন্দ্র।
কলকাতা ছাড়াও পুর পরিষেবার আওতায় আসে কাশীপুর, মানিকতলা, গার্ডেনরিচ ও চিৎপুর। পরিবর্তন হয় পুর আইনেরও। ১৯৪৮ সালের মার্চ মাস পর্যন্ত আগের পুর আইন চলত। সেই আইন সংশোধন হয়ে ১৯৫২ সাল থেকে চালু হল, ‘ক্যালকাটা মিউনিসিপ্যাল অ্যাক্ট ১৯৫১’। পরবর্তী কালে পুরসভার ওয়ার্ডের সংখ্যা বেড়ে হল ৪৪ থেকে ১০০।
১৯৫১ সালের পুর আইন অনুযায়ী একজন নির্বাচিত মেয়র, একজন ডেপুটি মেয়রের এবং পাঁচজন অল্ডারম্যানের পদও তৈরি হয়।
সরকারের অধিগ্রহণ
১৯৭২ সালে রাজ্য সরকার পুরসভাকে অধিগ্রহণ করে। তারপর ১৯৮৪ সালের জানুয়ারি মাস থেকে চালু হয়, ‘মিউনিসিপ্যাল অ্যাক্ট ১৯৮০’। পরবর্তীকালে ওয়ার্ড সংখ্যাও বেড়েছে। বর্তমানে মোট ওর্য়াডের সংখ্যা ১৪৪।
পুরশ্রীরও শতবর্ষ
একই বছর কলকাতা মিউনিসিপ্যাল গেজেটও প্রকাশ পায়। বাম আমলে যার নাম হয় পুরশ্রী। সেই পুরশ্রীরও এ বছর শতবর্ষ। পুরসভার পক্ষ থেকে পুরশ্রীর বিশেষ সংখ্যা প্রকাশে উদ্যোগ শুরু হয়েছে।
তিন ইঞ্জিনিয়ারকে শোকজ, অতঃপর সাসপেন্ড করে গার্ডেনরিচে ভেঙে পড়া বেআইনি বহুতলের ধ্বংসস্তুপে সরিয়ে যখন মেয়র ফিরহাদ হাকিম ঘুরে দাঁড়াতে চাইছেন, ঠিক সেই বছর শতবর্ষে পা দিল প্রথম ভারতীয় হিসাবে চিত্তরঞ্জন দাসের মেয়র হওয়ার।
তথ্য সূত্র: বর্তমান ও উইকিপিডিয়া