স্বার্থের সংঘাতের অভিযোগে আরও বড় বিপাকে পড়লেন রাজ্যের অ্যাডভোকেট জেনারেল কিশোর দত্ত। বিচারপতি অমৃতা সিনহার বেঞ্চের পর এবার বিচারপতি তীর্থঙ্কর ঘোষের এজলাসও তাঁকে স্বার্থের সংঘাতে অভিযুক্ত করে রাজ্যের অনুমতিপত্র দেখাতে বলে। সেই অনুমতিপত্র দেখাতে না পারায় এদিন স্থগিত হয়ে যায় পার্থ ও সুজয়কৃষ্ণের জামিনের মামলার শুনানি।
বুধবার বিচারপতি ঘোষের বেঞ্চে পার্থ চট্টোপাধ্যায় ও সুজয়কৃষ্ণ ভদ্রের জামিনের শুনানি ছিল। শুনানিতে অভিযুক্তের পক্ষের আইনজীবী হিসাবে হাজির হন রাজ্যের অ্যাডভোকেট জেনারেল কিশোর দত্ত। প্রথমে শুরু হয় পার্থর জামিনের শুনানি। সেখানে কার্যত ২ সপ্তাহ আগে বিচারপতি সিনহার বেঞ্চের অ্যাকশন রিপ্লে হয়। বিচারপতি ঘোষ কিশোর দত্তকে প্রশ্ন করেন, রাজ্যের আইনজীবী কী করে অভিযুক্তদের হয়ে সওয়াল করতে পারেন? এক্ষেত্রে সরাসরি স্বার্থের সংঘাত তৈরি হচ্ছে। রাজ্যের আইনজীবীকে অভিযুক্তের হয়ে মামলা লড়তে গেলে সরকারের যে অনুমতি নিতে হয় তা কি আপনি নিয়েছেন? সেরকম কোনও অনুমতিপত্র আদালতে পেশ করতে পারেননি কিশোর দত্ত। এর পর এদিনের মতো পার্থ চট্টোপাধ্যায় ও সুজয়কৃষ্ণ ভদ্রের জামিনের মামলার শুনানি স্থগিত করে দেন বিচারপতি ঘোষ।
বলে রাখি, ঠিক ২ সপ্তাহ আগে গত ১০ জানুয়ারি বিচারপতি অমৃতা সিনহা নির্দেশ দেন, স্বার্থের সংঘাত দেখা দেওয়ায় তাঁর এজলাসে নিয়োগ দুর্নীতি মামলায় সরকারি আইনজীবী হিসাবে সওয়াল করতে পারবেন না রাজ্যের অ্যাডভোকেট জেনারেল কিশোর দত্ত। এজলাসে কিশোর দত্তকে ডেকে বিচারপতি সিনহা বলেন, আপনি কি নিয়োগ দুর্নীতি সংক্রান্ত কোনও মামলায় কোনও অভিযুক্তের হয়ে অন্য কোথাও সওয়াল করছেন? জবাবে কিশোর দত্ত জানান, আমি অন্য একটি এজলাসে সুজয়কৃষ্ণ ভদ্রের হয়ে সওয়াল করছি। তখন বিচারপতি জানতে চান, কী করে একই ব্যক্তি রাজ্য ও অভিযুক্তের হয়ে সওয়াল করতে পারেন? এক্ষেত্রে স্পষ্ট স্বার্থের দ্বন্দ তৈরি হয়েছে। আপনি এই মামলায় আর রাজ্য সরকারের হয়ে সওয়াল করতে পারবেন না।
এদিন বিচারপতি সিনহা আরও বলেন, দীর্ঘদিন ধরে নিয়োগ দুর্নীতির বিচারপ্রক্রিয়া চলছে। কবে তা শেষ হবে কেউ জানে না। ওদিকে চাকরিপ্রার্থীদের বয়স বেড়ে যাচ্ছে। তার সঙ্গে নতুন টেট হওয়ায় যোগ্য প্রার্থীদের সংখ্যা বাড়ছে। এই পরিস্থিতিতে নিয়োগে ব্যবস্থাটা কী করে স্বাভাবিক করা যায় সেব্যাপারে রাজ্যের উদ্যোগ গ্রহণ করা উচিত। মামলাকারীদের সঙ্গে আলোচনা করে সমস্যা সমাধানের চেষ্টা করতে হবে রাজ্যকে। এব্যাপারে রাজ্যের আইনজীবীকে মামলাকারীদের আইনজীবীর সঙ্গে কথা বলার নির্দেশ দেন তিনি।
গত নভেম্বরে বিদেশে বসে রাজ্যের অ্যাডভোকেট জেনারেল পদে ইস্তফা দেন সৌমেন্দ্রনাথ মুখোপাধ্যায়। এর পর ডিসেম্বরে কিশোর দত্তকে অ্যাডভোকেট জেনারেল নিয়োগ করে রাজ্য সরকার। কিন্তু তার আগে থেকেই পার্থ চট্টোপাধ্যায় ও সুজয়কৃষ্ণ ভদ্রের আইনজীবী হিসাবে আদালতে সওয়াল করছিলেন কিশোর দত্ত।