পরিবার চেয়েছিল ছেলে নেশা থেকে মুক্ত হোক। স্বাভাবিক জীবনে ফিরে আসুক। তাই নেশামুক্তি কেন্দ্রে ভর্তি করিয়েছিল পরিবারের সদস্যরা। কিন্তু সেখানে যে অত্যাচারের মুখে পড়তে হল ৩৫ বছর বয়সের যুবককে তা দেখে শিউরে উঠবেন সকলেই। পরিবার ওই ছেলেকে হাতে পেলেন যখন দেখলেন তখন ছেলের চোখের নীচে কালশিটে। বাঁ হাতে রক্ত জমাট বাঁধা। হাত নাড়ানোর ক্ষমতা নেই যুবকের। ডান হাতের নানা জায়গায় কাটা দাগ। আবার আঙুল ফুলে পুঁজ বের হচ্ছে। এমনই মর্মান্তিক অত্যাচার করা হয়েছে দমদম এলাকার এক নেশামুক্তি কেন্দ্রে বলে অভিযোগ।
এখানে ভর্তি করা হয়েছিল যুবককে দেড় মাস আগে। আর গত বৃহস্পতিবার দমদম পার্কের এই নেশামুক্তি কেন্দ্রে ছেলেকে এমন ক্ষতবিক্ষত অবস্থাতেই উদ্ধার করলেন তাঁর বাবা–মা। ‘প্রতিশ্রুতি ফাউন্ডেশন’ নামে ওই নেশামুক্তি কেন্দ্রের বিরুদ্ধে ছেলেকে মারধর এবং নির্যাতনের লিখিত অভিযোগ নাগেরবাজার থানায় দায়ের করা হয়েছে। পরিবারের অভিযোগ, ওই নেশামুক্তি কেন্দ্রে তাঁদের ছেলেকে মারধর করা হতো। রড দিয়ে মেরে হাতের আঙুল ভেঙে দেওয়া হয়েছে। শরীরে একাধিক আঘাতের চিহ্ন রয়েছে। আর এমন অবস্থায় যুবকের চিকিৎসা করানো হয়নি। পরিবারের কাছে গোপন করা হয়েছে। বরং যুবককে ভয় দেখানো হতো, বন্ড সই করে দিয়ে গিয়েছে পরিবার। মরে গেলেও কেউ দেখতে আসবে না।
আরও পড়ুন: নরেন্দ্রপুরে ওভারহেডের তার ছিঁড়ে গেল, শিয়ালদা দক্ষিণে বন্ধ ট্রেন চলাচল, ভোগান্তি চরমে
এদিকে প্রায় দু’মাস পরে ছেলেকে দেখতে গেলে বাবা–মাকে জড়িয়ে ধরে কেঁদে সব ঘটনার কথা বলে দেন ওই যুবক। এই অবস্থায় ছেলেকে পেয়ে তড়িঘড়ি বাইপাসের ধারের একটি বেসরকারি হাসপাতালে ভর্তি করা হয়। সেখানে আঙুলের নখ তুলে পচন ধরা জায়গায় অস্ত্রোপচার করা হয়েছে। তারপর থেকে বাড়িতেই চিকিৎসাধীন ওই যুবক। আর আক্রান্ত ওই যুবক বলেন, ‘১২ জানুয়ারি ওখানে যাওয়ার পরই আমার চুল কাটিয়ে দেয়। সব আবাসিকের সঙ্গেই একটা হল ঘরে রাখা হয়। খাটের জন্য বাবার থেকে অতিরিক্ত সাড়ে চার হাজার টাকা নিয়েও মাটিতেই বিছানা পেতে শোয়ানো হতো। একই শার্ট–প্যান্ট যে কত দিন পরেছি মনে নেই।’
অন্যদিকে এই ঘটনা প্রকাশ্যে আসতেই আলোড়ন পড়ে গিয়েছে। তবে অত্যাচার এখানে থেমে থাকেনি। ওই আক্রান্ত যুবকের দাবি, সকলের খাওয়ার থালা তাঁকে মাজতে হতো। ঘর মোছা, ঝাঁট দেওয়া, পোষা কুকুরের মলমূত্র তাঁকে দিয়ে পরিষ্কার করানো হতো। সকলের দাড়ি কামানো হতো একটাই ব্লেডে। আপত্তি করলেই খুব মারধর করা হতো। বাড়ির লোকের সঙ্গে দেখা করতে চাইলে রডের ঘা দেওয়া হতো। চিকিৎসকরা জানান, ওই যুবকের এখন হার্পিস হয়েছে। ওই নেশামুক্তি কেন্দ্রের মালিক সুমন দত্ত এখন বেপাত্তা। তাঁর মা ছায়া দত্ত এবং স্ত্রী পৌলোমী দত্ত মারধরের অভিযোগ স্বীকার করেছেন। সুমনের মা ছায়া বলেন, ‘সকলকে আমরা খুব যত্নে রাখি। ভোলা বেরা নামে এক কর্মী রাগের মাথায় ওই যুবককে মেরেছে। খুবই অন্যায় করেছে। ওকে আমরা কাজ থেকে তাড়িয়েও দিয়েছি।’ পুলিশ মামলা করেছে।