দিল্লি নির্বাচনের ফল বেরনোর পর থেকেই রাজনীতিতে চরম বিজেপি বিরোধিতার রাজনীতি থেকে নিজেকে সরিয়ে এনেছেন তিনি, মাঝে কেন্দ্রীয় প্রতিনিধিদলের সফরপর্ব বাদ দিলে কেন্দ্রের সঙ্গে যুক্তরাষ্ট্রীয় কাঠামো অনুসারে সম্পর্ক বজায় রেখে চলেছেন তিনি। এমনকী আমফান বিধ্বস্ত এলাকায় প্রধানমন্ত্রীর সফরসঙ্গী হয়েছেন গত ২২ মে। তার পর পক্ষকাল ঘুরতে না ঘুরতেই মুখ্যমন্ত্রীর মুখে শোনা গেল, অবাক করা কথা। বললেন, ‘কই, আমি তো বলছি না নরেন্দ্র মোদীকে সরিয়ে দেও।’
শুক্রবার নিজের বাড়ির কাছেই হরিশ পার্কে বিশ্ব পরিবেশ দিবস উপলক্ষে এক সবুজায়ন অনুষ্ঠানে এই কথা বলেন মমতা। মূলত নাম না করে এদিন বিজেপির বিরুদ্ধে দুর্যোগের সময়ও রাজনীতি করার অভিযোগ করেন তিনি। পাশে মুখ্যসচিব ছিলেন, তাই বিজেপির নাম করার উপায়ও ছিল না। তবে কেন্দ্রীয় সরকারকে নাম করেই সমালোচনা করেন মুখ্যমন্ত্রী। পাশে দাঁড়িয়ে সেই বক্তব্য শোনেন মুখ্যসচিব রাজীব সিনহা।
মমতা এদিন বলেন, ‘আমর একটা জিনিস খুব খারাপ লাগে। একদিকে আমরা যখন লড়াই করছি, কী করে দুর্যোগ থেকে রক্ষা করা যাবে, দুর্ভোগ থেকে রক্ষা করা যাবে। কভিডের বিপর্যয় থেকে রক্ষা করা যাবে। সব কিছু থেকে রক্ষা করা যাবে। তখন একটা রাজনৈতিক দল বলে বেড়াচ্ছে বাংলায় আগে এদের তাড়াও। কারণ বাংলা আমাদের ভোট দেয়। এটা কি রাজনীতি করার টাইম! বলুন তো বাংলার মানুষ? আমি তো কই বলছি না, যে নরেন্দ্র মোদীকে দিল্লি থেকে তাড়িয়ে দেও? কারণ আমি মনে করি দিস ইজ নট দ্য টাইম। পলিটিক্স পলিটিক্সের টাইমে হবে। তাহলে আপনারা কেন করছেন এসব?’
সুর চড়িয়ে মমতার নিদান, ‘যান গিয়ে মানুষকে সেবা করুন। যান গিয়ে গাছ পুঁতুন। যান গিয়ে পুকুর পরিষ্কার করুন। কেউ তো তিন মাস রাস্তায় বেরোননি ভয়ে। ভয়ে তো সবাই মুখে লিউকোপ্লাস্টার দিয়ে চুপ করে বাড়ির পিছনে ভিডিয়ো কর্নারে বসে ছিলেন। কাউকে দেখা যায়নি রাস্তায়।‘
সম্প্রতি সংবাদমাধ্যমকে দেওয়া সাক্ষাৎকারে ২০২১ বিধানসভা নির্বাচনে বিজেপি নিরঙ্কুশ সংখ্যাগরিষ্ঠতা নিয়ে ক্ষমতায় আসবে বলে দাবি করেন অমিত শাহ। তার কিছুদিন আগে মমতা আবার বলেছিলেন, ‘অমিত শাহকে বলেছিলাম, করোনা পরিস্থিতি সামলাতে পারছি না বলে মনে হলে আপনারা দায়িত্ব নিন।’ তার জবাবে অমিত শাহ বলেছিলেন, ‘২০২১ সালে মমতার ইচ্ছে পূর্ণ করে বিজেপি পশ্চিমবঙ্গের ক্ষমতায় আসবে।’ এদিন অমিত শাহের সেই জবাবের এদিন মমতা উত্তর দিলেন বলে মনে করা হয়েছে।
লোকসভা নির্বাচনে দিল্লি থেকে মোদীকে হঠানোর ডাক দিয়ে নিজেকে মুখ্যমন্ত্রী হিসাবে তুলে ধরতে চেয়েছিলেন মমতা। নরেন্দ্র মোদীর কোমরে দড়ি পরানোর হুঁশিয়ারি দিয়েছিলেন তিনি। ফল হয়েছে উলটো, কেন্দ্রে তো বিজেপি আরও শক্তিশালী হয়ে ফিরেছেই। পশ্চিমবঙ্গেও মমতার অর্ধেক রাজ্যপাট উজাড় হয়ে গিয়েছে। তার পর বিজেপিকে রুখতে প্রশান্ত কিশোরকে ভাড়া করতে হয়েছে মমতাকে। সেই প্রশান্ত কিশোরের পরামর্শেই দিল্লিতে বিজেপি বধ করেছেন কেজরিওয়াল। সেখানে তাঁর মন্ত্র ছিল, রাজনৈতিক লড়াইকে গৌন করে মানুষের কাছে পরিষেবা ও সুশাসন পৌঁছনে। বিশেষজ্ঞদের মতে, বিধানসভা নির্বাচনের আগে নিজেকে তেমনই সুশাসক প্রমাণ করতে চাইছেন মমতা।