গত মাসেই বিশ্ব বঙ্গ বাণিজ্য সম্মলনে এক মঞ্চ দু’জনকে গান গাইতে দেখা গিয়েছিল। মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়ের সঙ্গে পাশপাশি দাঁড়িয়ে মঞ্চে গান গেয়েছিলেন মন্ত্রী বাবুল সুপ্রিয় এবং ইন্দ্রনীল সেন। গলা মিলিয়ে গেয়েছিলেন, রাজ্য সঙ্গীত ‘বাংলার মাটি বাংলার জল…।’ তার পর মঞ্চ থেকে নেমে গিয়েছিলেন। সেদিন গলা মিলিয়ে গান গাইলেও দুজনের মধ্যে গলাগলি হয়ননি। সেই গলাগলি হল বিধানসভায় মন্ত্রী অরূপ বিশ্বাসের ঘরে।
দূরত্ব কাটিয়ে বাবুল-ইন্দ্রনীল আড্ডা দিলেন মন্ত্রীর ঘরে। গানও গাইলেন এক লাইন। সেদিন যেমন বিশ্ব বঙ্গ বাণিজ্য সম্মলনের মঞ্চে গান গেয়েছিলেন একসঙ্গে। এ দিন সেই সম্পর্ক আরও নিবিড় হল রবি ঠাকুরের গানে।
ইন্দ্র গাইলেন, ‘তোমায় পাব বলে হারাই বারে বারে…।’ শুনে বাবুল গাইলেন, ‘আমি ক্ষণিকের অতিথি নই…।’ সেই সময় ঘরে ছিলেন, শিক্ষামন্ত্রী ব্রাত্য বসু।
প্রসঙ্গত, তৃণমূলে যোগ দেওয়ার পর ইন্দ্রনীল সেনের হাতে থাকা পর্যটন দফতর বাবুলকে দিয়েছিলেন মুখ্যমন্ত্রী। তার পর থেকেই দু'জনের দূরত্ব বাড়তে থাকে। তবে পর্যটন দফতরে বাবুলের কাজ নিয়ে সন্তুষ্ট ছিলেন না মু্খ্যমন্ত্রী। গত জুলাই মাসে পর্যটন উন্নয়ন নিগমের চেয়ারম্যান পদ থেকে আমলা নন্দিনী চক্রবর্তীকে সরিয়ে দেন তিনি। তাঁর জায়গায় বসানো হয় ইন্দ্রনীল সেনকে। তার পর দুই মন্ত্রীর মধ্যে ফাটল আরও চওড়া হয়।
২৮ অগস্ট দুজনের সংঘাত একেবারে প্রকাশ্যে এসে পড়ে। বিধানসভায় রাজ্য মন্ত্রিসভার বৈঠকের পর মুখ্যমন্ত্রী ঘরের সামনে বাদানুবাদে জড়িয়ে পড়েন বাবুল-ইন্দ্রনীল। দফতরের ফাইল আটকানো নিয়েই দু’জনের মধ্যে তর্ক চলে।
ওই বিতণ্ডার পর বাবুল নিজেই মুখ্যমন্ত্রীর কাছে আর্জি জানান তাঁকে পর্যটন দফতরের দায়িত্ব থেকে অব্যাহতি দেওয়ার জন্য। কারণ, তিনি আর কোনও সংঘাতে যেতে রাজি নন বলেন জানান মুখ্যমন্ত্রীকে।
এরই মাঝে গত ১১ সেপ্টেম্বর মুখ্যমন্ত্রী বাবুলের কাছ থেকে পর্যটন দফতর নিয়ে নেন। তা আবার ফিরিয়ে ইন্দ্রনীল সেনের হাতে। বাবুলকে অপেক্ষাকৃত ‘কম গুরুত্বপূর্ণ’ অচিরাচরিত শক্তির উৎস দফতরের দায়িত্ব দেওয়া হয়। তবে পর্যটনের সঙ্গে তথ্যপ্রযুক্তি দফতরের দায়িত্বও দেওয়া হয়েছিল বাবুল সুপ্রিয়কে। ওই দফতরটি তাঁর হাতেই রেখে দেওয়া হয়।
তার পর তাঁদের সম্পর্কের উন্নতির কোনও লক্ষণ দেখা যায়নি। মুখ্যমন্ত্রীর বিধানসভা কেন্দ্র ভবানীপুরের বিজয়া সম্মিলনীতে গায়ক হিসাবে মঞ্চে ছিলেন ইন্দ্রনীল। কিন্তু দেখা যায়নি বাবুলকে।
তবে সেই দিন ফিকে হয়েছে। বৃহস্পতিবার বিধানসভায় অরূপ রায়ের ঘরের দৃশ্য দেখে অন্তত তেমনটাই মনে হচ্ছে।