লোকসভা নির্বাচনের নির্ঘণ্ট প্রকাশ করে দিয়েছে জাতীয় নির্বাচন কমিশন। কিন্তু তার পরও তারা বসে নেই। দু’দফায় বাংলার ডিজিকে সরিয়ে দেওয়া থেকে শুরু করে গোটা নির্বাচনের কাজে শ্যেন দৃষ্টি রেখেছে। প্রত্যেক মুহূর্তের খোঁজ নেওয়া হচ্ছে নয়াদিল্লি থেকে। তাও যেন সন্তুষ্ট নয় জাতীয় নির্বাচন কমিশনের কর্তারা। আর তাই লোকসভা নির্বাচনের প্রাক্কালে চলতি সপ্তাহেই রাজ্যে আসছেন তিনজন আয়–ব্যয় পর্যবেক্ষক। লোকসভা নির্বাচনে অর্থশক্তির ব্যবহার ঠেকাতে ওই তিন পর্যবেক্ষককে রাজ্যে পাঠাচ্ছে নির্বাচন কমিশন। তাঁদের বলে দেওয়া হয়েছে, বাংলার ৪২টি কেন্দ্রের মধ্যে বেশিরভাগ কেন্দ্রই আর্থিকভাবে স্পর্শকাতর। এই তথ্য হাতে নিয়েই তাঁরা আসছেন বলে সূত্রের খবর।
এদিকে নির্বাচন কমিশন সূত্রে খবর, আয়–ব্যয় পর্যবেক্ষকরা লোকসভা নির্বাচনে টাকার অপব্যবহার ঠেকাতে নানা পদক্ষেপ করবেন। পেশীশক্তির পাশাপাশি নির্বাচনে অর্থশক্তিকেও কোনওভাবে বরদাস্ত করা হবে না। প্রার্থীদের প্রত্যেকটি আর্থিক পদক্ষেপের উপর কড়া নজর রাখা হবে। এই তিন পর্যবেক্ষকরা সেই কাজই করবেন। প্রথম দফার নির্বাচনে ১৯ এপ্রিল কাজ করবেন এই তিন পর্যবেক্ষক। প্রার্থীরা নিয়ম মেনে অর্থ খরচ করছেন কি না, সেটাতেও নজরদারি চালাবেন তাঁরা। স্পষ্ট বার্তা হল— টাকা উদ্ধার বেড়ে যাওয়া। ২০১৪ সালের লোকসভা নির্বাচনে বাংলা থেকে উদ্ধার হয়েছিল ১৮ কোটি ৯৩ লক্ষ টাকা। এই অঙ্ক ২০২১ সালের বিধানসভা নির্বাচনে বেড়ে হয় ৩০০ কোটি ১১ লক্ষ টাকা। আর তাই নির্বাচন কমিশনের ধারণা, পশ্চিমবঙ্গ আর্থিকভাবে স্পর্শকাতর।
আরও পড়ুন: ‘যে বুথ বেশি লিড দেবে সেখানে বরাদ্দ বাড়বে’, সুভাষের মন্তব্যের বিরুদ্ধে কমিশনে তৃণমূল
অন্যদিকে কোচবিহার লোকসভা কেন্দ্রের জন্য নির্বাচন কমিশন আয়–ব্যয়ের পর্যবেক্ষক হিসাবে পাঠাতে চলেছে ইন্ডিয়ান রেভিনিউ সার্ভিসের (আইআরএস) অফিসার সঞ্জয় কুমারকে। আইআরএস মদনমোহন মীনাকে দায়িত্ব দেওয়া হয়েছে জলপাইগুড়ি কেন্দ্রের জন্য। আর আলিপুরদুয়ারের আয়–ব্যয়ের পর্যবেক্ষকের দায়িত্বে থাকবেন আইআরএস অফিসার শালম কে দুর্গেশ যাদব। সুতরাং শুরু থেকেই উত্তরবঙ্গ থেকে কাজ করবেন তাঁরা। এটা কিন্তু তাৎপর্যপূর্ণ। ইতিমধ্যেই রাজ্যের অফিসার সরানো এবং নির্বাচন কমিশন নিরপেক্ষভাবে কাজ করছে না বলে অভিযোগ তুলে সুপ্রিম কোর্টের তত্ত্বাবধানে নির্বাচনের দাবি তুলেছেন তৃণমূল কংগ্রেসের রাজ্যসভার সাংসদ ডেরেক ও’ব্রায়েন।
এছাড়া রাজ্যের ৪২টি কেন্দ্রের মধ্যে বেশ কয়েকটি আসনকে আর্থিকভাবে অতি স্পর্শকাতর বলে চিহ্নিত করেছে নির্বাচন কমিশন। তাই লোকসভা নির্বাচনের অনেক আগে থেকেই আয়কর, ইডি, শুল্ক দফতর–সহ মোট ২২টি এজেন্সি কাজে নেমেছে। এমনকী এই প্রথমবার রাজ্যের বিধানসভা ভিত্তিক ‘অতিরিক্ত ব্যয় পর্যবেক্ষক’ নিয়োগ করতে চলেছে নির্বাচন কমিশন বলে সূত্রের খবর। যা নিয়ে জোর চর্চা শুরু হয়েছে। আগামী ১৯ এপ্রিল প্রথম দফায় রাজ্যের তিনটি লোকসভা কেন্দ্রে ভোটগ্রহণ হবে। আলিপুরদুয়ার, জলপাইগুড়ি এবং কোচবিহারের বাসিন্দারা ভোট দেবেন।