প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদী ক্ষমতায় আসার সময় বলেছিলেন, বছরে দু’কোটি চাকরি দেবেন। সেই কথা তিনি রাখেননি বলে বাংলার সরকারের অভিযোগ। এমনকী তা নিয়ে তৃণমূল কংগ্রেস ভিডিয়ো তৈরি করে সোশ্যাল মিডিয়ায় বিজেপি এবং কেন্দ্রীয় সরকারকে আক্রমণ করেছে। পাল্টা বিজেপিও রাজ্যের কর্মসংস্থান নিয়ে সরব হয়েছে। এই আবহে কর্মসংস্থান নিয়ে বিরোধীদের ‘উচিত জবাব’ দেওয়ার হুঁশিয়ারি দিয়েছিলেন মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়। এবার সব দফতরকে লিখিত নির্দেশে মুখ্যসচিব বিপি গোপালিকা জানান, আগামী ২২ জানুয়ারির মধ্যে রাজ্য সরকারের সর্বত্র নিয়োগের বিস্তারিত তথ্য দিতে হবে বিভাগীয় প্রধানদের। তারপরই সেটা তুলে ধরে বিজেপি এবং কেন্দ্রীয় সরকারকে আক্রমণ শানাবেন মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় বলে মনে করা হচ্ছে।
এদিকে এই নিয়োগের বিস্তারিত রিপোর্টের মধ্যে মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় ক্ষমতায় আসা থেকে তৃতীয়বার কুর্সিতে আসীন হওয়া পর্যন্ত ধরা হচ্ছে। মুখ্যসচিব বিভাগীয় প্রধানদের যে তথ্য দিতে বলেছেন সেটা— ২০১১ সালের মে মাস থেকে ২০২৩ সালের ৩১ ডিসেম্বর পর্যন্ত কত নিয়োগ করা হয়েছে, সেই তথ্য চেয়েছেন। আর সেটাও রাজ্য সরকারকে নির্দিষ্ট ইমেলে জানাতে হবে। যাতে তথ্য অটুট থাকে। এমনকী সেখানে গ্রুপ–এ, বি, সি এবং ডি বিভাগে নিয়োগের সংখ্যা জানাতে নির্দেশ দেওয়া হয়েছে। চুক্তিভিত্তিক কর্মী থেকে শুরু করে অস্থায়ী কর্মীদের নিয়োগ এবং অধ্যাপক, শিক্ষক, শিক্ষাকর্মী–সহ নানা পদে নিয়োগের বিস্তারিত তথ্য দিতে হবে।
অন্যদিকে মঙ্গলবার নবান্নে সাংবাদিক বৈঠকে মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় মন্তব্য করেন, ‘কাউকে বঞ্চিত করিনি। বিপুল চাকরি দিয়েছি। শুধু এমএসএমই সেক্টরেই ১ কোটি ১৫ লক্ষ লোক চাকরি পেয়েছেন। আর যারা বড় বড় কথা বলছে, তাদের থোঁতা মুখ ভোঁতা করে দেব। কেন্দ্রীয় সরকারকে তো ৪০% বেকারত্ব বেড়েছে। আমাদের ৪০% দারিদ্র কমেছে।’ এটাই প্রমাণ করতে এখন এমন নির্দেশ জারি হয়েছে। এই তথ্য হাতে আসলে লোকসভা নির্বাচনের প্রচারে সেটা তুলে ধরা হবে। আর তাতেই বাংলার মানুষ বুঝে যাবেন কেন্দ্রীয় সরকারের সবটাই প্রচার। কাজের কাজ কিছুই হয়নি। যার জন্য ২২ তারিখের মধ্যে সব তথ্য দিতে বলা হয়েছে। এই তারিখ অত্যন্ত তাৎপর্যপূর্ণ। কারণ সেদিন রামমন্দিরের উদ্বোধন হবে।
আরও পড়ুন: রাজ্যের মুখ্যসচিবের কাছে চিঠি এল রাষ্ট্রপতি ভবন থেকে, কী বার্তা এল নয়াদিল্লি থেকে?
এছাড়া কর্মচারী সংগঠন সূত্রে খবর, রাজ্যে স্থায়ী নিয়োগের সংখ্যা কম। পড়ে রয়েছে অনেক শূন্যপদ। চুক্তিভিত্তিকদের দিয়ে কাজ চালানো হচ্ছে। স্থায়ী নিয়োগের খুব দরকার। যোগ্যতা অনুযায়ী অস্থায়ীদের স্থায়ীকরণের প্রয়োজন রয়েছে। না হলে তাঁদের ভবিষ্যৎ প্রশ্নের মুখে পড়বে। আর নবান্ন সূত্রে খবর, গত বেশ কয়েকটি মন্ত্রিসভার বৈঠকে একাধিক নিয়োগে ছাড়পত্র দেওয়া হয়েছে। এভাবেই বিপুল পরিমাণ শূন্যপদ পূরণ করা যাবে। লোকসভা নির্বাচনের প্রাক্কালে রাজ্য সরকারের এই নিয়োগ তথ্য রাজনৈতিক প্রচারের অন্যতম হাতিয়ার হয়ে উঠবে তৃণমূল কংগ্রেসের।