ভোট-পরবর্তী হিংসা নিয়ে জাতীয় মানবাধিকার কমিশনের সম্পূর্ণ রাজনৈতিক উদ্দেশ্যপ্রণোদিত। এমনই দাবি করল তৃণমূল কংগ্রেস। সেইসঙ্গে যে তৃণমূল নেতাদের নাম ‘কুখ্যাত দুষ্কৃতীর’ তালিকায় রাখা হয়েছে, তাঁরাও কমিশনের বিরুদ্ধে তোপ দেগেছেন।
সেই রিপোর্ট নিয়ে সরাসরি কোনও মন্তব্য করেননি মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়। বরং জানিয়েছেন, বিচারাধীন বিষয়ে নিয়ে কোনও মন্তব্য করবেন না। তবে ঘুরিয়ে তোপ অভিযোগ করেছেন, নরেন্দ্র মোদীর আমলে নিরপেক্ষ সংস্থাগুলির আর নিরপেক্ষতা রাখা হয়নি। কয়েকটি সংস্থার অপব্যবহার করে বাংলাকে বদনাম করার চেষ্টা করছে। এত বাজেভাবে হেরে ‘লজ্জা নেই’। নানারকম চক্রান্ত চলছে। উত্তরপ্রদেশে কতগুলি কমিশন পাঠানো হয়েছে? ভোট-পরবর্তী হিংসার ঘটনার সময় রাজ্যের আইন-শৃঙ্খলার দায়িত্বে ছিল নির্বাচন কমিশন।
রাজ্যে বিধানসভা ভোটের ফলাফল প্রকাশের পর যে হিংসা ছড়িয়েছিল, তা নিয়ে কমিশনের রিপোর্টের ছত্রে ছত্রে শাসক দল তৃণমূলের সমালোচনা করা হয়েছে। রিপোর্টে বলা হয়েছে, ‘রাজ্যের যা অবস্থা, তাতে আইনের শাসনের পরিবর্তে শাসকের আইন চলছে।’ দাবি করা হয়েছে, বিধানসভা ভোটের ফল প্রকাশের পর থেকে রবীন্দ্রনাথের মাটিতে হিংসার শিকার হয়েছেন অসংখ্য মানুষ। খুন, ধর্ষণের মতো ঘটনা ঘটেছে। মানুষকে ভিটেছাড়া হতে হয়েছে। এই ধরনের হিংসার ঘটনায় অবিলম্বে লাগাম টানতে হবে। সেই উদ্বেগজনক পরিস্থিতিতে নিয়ন্ত্রণে আনতে না পারলে ভারতীয় গণতন্ত্রের মৃত্যুঘণ্টা বেজে যাবে। হিংসা ছড়িয়ে পড়বে অন্য রাজ্যেও।
শুধু তাই নয়, মন্ত্রী জ্যোতিপ্রিয় মল্লিক, প্রাক্তন বিধায়ক উদয়ন গুহ, বিধায়ক পার্থ ভৌমিক, তৃণমূল নেতা শওকত মোল্লা, জীবন সাহা, খোকন দাস ও নন্দীগ্রামে মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়ের নির্বাচনী এজেন্ট শেখ সুফিয়ান-সহ একাধিক তৃণমূল নেতাকে ‘কুখ্যাত দুষ্কৃতীর’ তালিকায় রাখা হয়েছে। পুলিশের ভূমিকা নিয়েও প্রশ্ন তোলা হয়েছে। রিপোর্টে বলা হয়েছে, ‘গরিব এবং সাধারণ মানুষ পুলিশের আস্থা হারিয়ে ফেলেছেন। প্রায় সকল ক্ষতিগ্রস্ত মানুষই তদন্ত কমিশনকে জানিয়েছেন যে পুলিশকে ফোন করে পাওয়া যায়নি বা ঘটনাস্থলে এলেও নেহাত দর্শকের ভূমিকায় দাঁড়িয়েছিল পুলিশ। তখন গুন্ডারা এক জায়গা থেকে অন্য জায়গায় হিংসা চালিয়ে যেত।’ সঙ্গে যোগ করা হয়েছে, ‘ক্ষতিগ্রস্তদের বিরুদ্ধেই মিথ্যা মামলায় রুজু করেছে পুলিশ অথবা অভিযুক্তদের দায়ের করা মামলার ভিত্তিতে ক্ষতিগ্রস্তদের বিরুদ্ধে উলটে মামলা দায়ের করেছে পুলিশ। অভিযুক্তদের দায়ের করা মামলায় ক্ষতিগ্রস্তদের গ্রেফতার করেছে পুলিশ। কিন্তু ক্ষতিগ্রস্তদের দায়ের করা মামলায় কিছু করেনি।’
যদিও জ্যোতিপ্রিয়ের বক্তব্য, পুরো বিষয়টিতে তাঁর 'অত্যন্ত দুঃখ এবং লজ্জা লেগেছে'। মানবাধিকার কমিশনের আগে তথ্য নেওয়া উচিত ছিল। দল যেভাবে বলবে, সেভাবেই আগামিদিনে পা ফেলবেন বলে জানিয়েছেন রাজ্যের মন্ত্রী। উদয়নের আবার বক্তব্য, দিনহাটার মানুষ তাঁর বিষয়ে ভালোভাবে অবহিত। মানবাধিকার কমিশন কী বলল, তাতে পাত্তা দিচ্ছেন না।