বিজেপি বিরোধিতায় সোমবার ফের একবার নিয়মমাফিক মুখ খুলেছেন মমতা। বাংলা ও বাঙালির দল বলে দাবি করা তৃণমূলের সর্বময়ী নেত্রী এদিন সাংবাদিকদের প্রতিক্রিয়া জানানোর সময় একটা লাইনও বাংলা বলেননি। এদিন তাঁর গোটা বক্তব্যই ছিল হিন্দি ও ইংরাজিতে।
এদিন মমতা বলেন, ‘যদি কেউ কোথাও শান্তিপূর্ণ আন্দোলন করে তাহলে কোনও সমস্যা নেই। সেকথা তো সুপ্রিম কোর্টও জানিয়ে দিয়েছে। আমাদের এখানেও পার্ক সার্কাসে ওরা বসে রয়েছে। আমরা তাদের কোনও ভাবে বিরক্ত করিনি। শান্তিপূর্ণ আন্দোলন করার অধিকার সবার আছে।‘
বলেন, ‘কিন্তু ভয় দেখাতে কখনো বিশ্ববিদ্যালয়ের ভিতরে ঢুকে পড়ে। কখনো মহিলার পাশে গুলি চালায়।‘
শাহিনবাগ ও জামিয়া মিলিয়ায় গুলি চালনার নিন্দা করে এদিন বিজেপির সামনে নিজের যে উদাহরণ তুলে ধরতে চাইলেন মমতা, ইতিহাস কি তা সমর্থন করে? একের পর এক ঘটনাক্রম মনে করলেই বোঝা যাবে, বিজেপিকে শান্তিপূর্ণ আন্দোলনকে পরিসর দেওয়ার পাঠ পড়ালেও নিজে কখনোই তা মানেনি পশ্চিমবঙ্গের মুখ্যমন্ত্রী। বরং এব্যাপারে বিজেপির দিদিমণি হতে পারেন তিনি।
চাকরির দাবিতে পথে নেমে গত কয়েকবছরে লাগাতার পুলিশের লাঠির মুখে পড়েছেন এরাজ্যের বেকাররা। পুলিশের লাঠির মুখে পড়েছেন বামপন্থীরাও। এমনকী তাদের কর্মসূচি পালনের অনুমতি পর্যন্ত দেওয়া হয় না বলে অভিযোগ বিজেপির। সেই মমতার মুখে সোমবার শোনা গেল সহিষ্ণুতার বাণী।
এর মধ্যে সব থেকে নৃশংস ঘটনাটি ঘটেছিল গত বছর ১৭ অগাস্ট রাতে। কল্যাণী স্টেশনের কাছে চাকরির দাবিতে আন্দোলনরত বেকারদের রাতের অন্ধকারে আলো বন্ধ করে পিটিয়েছিল কল্যাণী থানার পুলিশ। লাঠির ঘায়ে গুরুতর আহত হন বেশ কয়েকজন চাকরিপ্রার্থী। সেদিন মহিলাদের শ্লীলতাহানির অভিযোগও উঠেছিল পুলিশকর্মীদের বিরুদ্ধে। ঘটনাস্থল থেকে ৫ জন আন্দোলনকারীকে গ্রেফতার করে নিয়ে যায় পুলিশ।
পরদিন সকালে কল্যাণী স্টেশন চত্বর ছেয়ে যায় পুলিশে। পার্শ্বশিক্ষকদের অভিযোগ ছিল, তাদের অবস্থান তুলতে চাপ দিচ্ছে পুলিশ। এমনকী আন্দোলনে যোগ দিতে যে পার্শ্বশিক্ষকরা ট্রেনে করে কল্যাণী পৌঁছচ্ছেন তাদের সেই ট্রেনেই ফেরত পাঠিয়ে দেওয়া হচ্ছে বলেও অভিযোগ উঠেছিল।
তার আগে ১ অগাস্টও পুলিশের লাঠির মুখে পড়তে হয়েছে চাকরিপ্রার্থীদের। SSC-র প্যানেলভুক্ত চাকরিপ্রার্থীরা নিয়োগপত্রের দাবিতে ওই দিন বিধাননগরের করুণাময়ী বাস স্ট্যান্ডের কাছে জমায়েত শুরু করেন। পুলিশ এলাকা খালি করার নির্দেশ দেয়। কিন্তু নির্দেশ না মেনে জমায়েত চালিয়ে যান চাকরিপ্রার্থীরা। অভিযোগ, সেই সময় চাকরিপ্রার্থীদের ওপর লাঠি চালান বিধাননগর পূর্ব থানার পুলিশকর্মীরা। সেদিন বেশ কয়েকজনকে আটক করে থানায় নিয়ে গিয়ে আটকে রেখেছিল পুলিশ।
এতো গেল শান্তিপূর্ণ আন্দোলনে মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়ের সহিষ্ণুতার কিছু নজির। এবার বিশ্ববিদ্যালয়ে ঢুকে ভয় দেখানোর প্রসঙ্গে ইতিহাস ঘাঁটলেও বিজেপির সামনে নজির হতে পারেন মমতা।
২০১৩ সালের ১০ এপ্রিল দুপুরে প্রেসিডেন্সি বিশ্ববিদ্যালয়ে তৃণমূলের পতাকা নিয়ে ঢুকে মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় জিন্দাবাদ স্লোগান দিয়ে যথেচ্ছ ভাঙচুর করে একদল দুষ্কৃতী। ভেঙে তছনছ করে দেওয়া হয় শতাব্দীপ্রাচীন বেকার ল্যাবরেটরি। যে ল্যাবরেটরিতে কখনো গবেষণা করেছেন বাঙালির তিন গর্ব আচার্য জগদীশচন্দ্র বসু, আচার্য প্রফুল্লচন্দ্র রায় ও প্রশান্তচন্দ্র মহালানবিশ। তার পরেও তৃণমূল, বাংলা বাঙালির।