শেষ ট্রেনে ঘরে ফেরা এখন বিপদের হয়ে উঠেছে নিত্যযাত্রীদের। কারণ শেষ ট্রেন ধরার আগে শিয়ালদা স্টেশনে সাফাইয়ের কাজ চলে। তার জেরে স্টেশন–সহ প্ল্যাটফর্ম জলে থইথই অবস্থা হয়ে থাকে। বনগাঁ এবং রানাঘাটের শেষ ট্রেন শিয়ালদা থেকে সময়েই প্ল্যাটফর্মগুলিতে জল ঢেলে সাফাইয়ের কাজ চলতে থাকে। আর তার জেরে ট্রেন ধরতে যাওয়া যাত্রীদের বিপদে পড়তে হচ্ছে বলে অভিযোগ। নিত্যযাত্রীদের অভিযোগ, এই সাফাই কাজ করার কারণে ভেসে যায় প্ল্যাটফর্মগুলি। সুতরাং দৌড়ে বা জোর পা চালিয়ে ট্রেন ধরতে গেলে একাধিক যাত্রী পড়ে যান। এটা রোজকার ঘটনা হয়ে দাঁড়িয়েছে শিয়ালদায়।
বিকল্প সময়ে সাফাইয়ের কাজ কেন হয় না? এই প্রশ্ন তুলতে শুরু করেছেন শেষ ট্রেনের নিত্যযাত্রীরা। এই ঘটনার ফলে অনেকে পড়ে গিয়ে চোট পেয়েছেন বলেও অভিযোগ উঠেছে। শেষ ট্রেন চলে যাওয়ার পর কেন সাফাই করা হয় না? রেলের কাছে এই প্রশ্নই রেখেছেন যাত্রীরা। আর রেলের পক্ষ থেকে জবাব দেওয়া হয়েছে, ট্রেন চলে যাওয়ার পরই তো সাফাই হওয়ার কথা। কেন হচ্ছে না খতিয়ে দেখা হবে। রাত ১১টা ৫০ মিনিটে শিয়ালদা থেকে ছাড়ে শেষ আপ রানাঘাট লোকাল। আর এটা ধরতেই যাত্রীরা হুড়োহুড়ি করেন। এই ট্রেন চলে গেলে বাড়ি ফেরা কার্যত কঠিন। তাই পা চালিয়ে আবার কেউ ছুটে এসে এই ট্রেন ধরতে যান। আর তখনই জলে পা পিছলে প্ল্যাটফর্মেই পড়ে যান নিত্যযাত্রীরা।
এদিকে একই সময়ে ছাড়ে আপ বনগাঁ লোকালও। সেটাও অনেকে ধরতে ছোটেন। কিন্তু পরিস্থিতি একই। যাত্রীদের আর্তনাদ শোনা যায়, ‘বাঁচাও’। ‘আ, কি জোর লাগল’। এখানে অনেক সময়ই ডাউন লালগোলা প্যাসেঞ্জারকে শেষ আপ রানাঘাট লোকাল হিসাবে পাঠানো হয়। এই ট্রেনটি ১, ৬ অথবা ৭ নম্বর প্ল্যাটফর্ম থেকে ছাড়ে। যাত্রীদের অবশ্য অভিযোগ, প্ল্যাটফর্মে ওঠার মুখেই জলে থইথই অবস্থা হয়ে থাকে। তাই শিয়ালদা স্টেশন দিয়ে ঢুকে ১ নম্বর প্ল্যাটফর্মে যেতে গেলেই পা পিছলে পড়ে যান যাত্রীরা। আর যাঁরা একটু তাড়াহুড়ো করেন তাঁদের অবস্থা আরও খারাপ হয়।
আরও পড়ুন: স্বাস্থ্য বিশ্ববিদ্যালয়ের উপাচার্যের কৈফিয়ত তলব করলেন রাজ্যপাল, পাঠালেন চিঠি
আর কী জানা যাচ্ছে? যাত্রীদের পিছলে পড়ে যাওয়ার ঘটনা নিত্যনৈমিত্তিক হয়ে পড়ায় রেলের অফিসারদের কানে সে খবর পৌঁছেছে। বেশ কয়েকজন যাত্রীর কথায়, ‘এত জল থাকে যে পড়ে যান অনেকে। সাফাইকর্মীদের বিষয়টি নিয়ে কিছু বলতে গেলে ওঁরা পাল্টা চোখ রাঙায়। তাই রোজই এক–দু’জন করে আছাড় খান। শেষ ট্রেন তো ধরতেই হবে।’ এই পরিস্থিতিতে একজন মহিলা যাত্রীকে পড়ে যেতে দেখা যায়। তিনি চিৎকার করে বলে ওঠেন, ‘ও মা গো বাঁচাও’। তারপরই তিনি আছাড় খেয়ে পড়লেন প্ল্যাটফর্মে। এই বিষয়ে পূর্ব রেলের মুখ্য জনসংযোগ আধিকারিক কৌশিক মিত্র সংবাদমাধ্যমে বলেন, ‘এমন অভিযোগ আগে কেউ করেননি। তবে এবার অভিযোগ পেয়ে আমরা বিষয়টি খতিয়ে দেখছি। তবে সাফাইয়ের কাজ শেষ ট্রেন চলে যাওয়ার পরই করার কথা। আগে হয়ে থাকলে সেটা বন্ধ করতে বলা হবে।’