আজ, বিজয়া দশমী। মঙ্গলবার ভারাক্রান্ত হৃদয়ে মা দুর্গার নিরঞ্জন প্রক্রিয়া শুরু হয়ে গিয়েছে। সিঁদুর খেলা হয়ে ভাসান হতে বিকেল গড়িয়ে যাবে। তবে আজ আবার দশেরা। এই দুটি ঘটনার মাঝে দুঃখের মধ্যে এক চিলতে আনন্দ নিয়ে আসার অভিনব প্রক্রিয়া রাখা হচ্ছে। একদিকে মা ফিরছেন অন্যদিকে রাবণ–বধ। আর এই দুই ঘটনার সন্ধিক্ষণে দুঃখিত মনটাকে আনন্দঘন করে তুলতে শহরের আকাশ আলোকিত হয়ে উঠবে। আর সেটা স্থায়ী হবে টানা ১৫ মিনিট। সেই আলোর ভিতর থেকে বেরিয়ে আসবে রাবণ দহনের শব্দ। রাম–রাবণের যুদ্ধের সেই মহাকাব্যিক বিষয়টি ফুটিয়ে তুলে শহরবাসীকে জানানো হবে শুভ বিজয়া।
এই কাজটি করতে ব্যবহার করা হবে ৬০০টি ড্রোন। যার মাধ্যমে গোটা শহরের আকাশ আলোকিত হয়ে উঠবে। বারণ দহনের ঘটনা ঘটবে। টানা ১৫ মিনিট সেই আলো স্থায়ী হবে আকাশে। সঙ্গে থাকবে সাউন্ড শো। দশমীতে চোখের জলে মাকে বিদায় জানানোর দিন। এই দিনটিকে পালন করা হয় অশুভ শক্তির বিরুদ্ধে শুভ শক্তির বিজয় দিবস হিসেবে। মনে করা হয়, ৯ দিন টানা মহিষাসুরের সঙ্গে যুদ্ধ করার পর এদিনই তাকে বধ করেছিলেন মা। আবার তার সঙ্গে জড়িয়ে রয়েছে ত্রেতা যুগে রাবণের বিরুদ্ধে রামের জয়ের কাহিনীও। দশেরা বা বিজয়া দশমী হল দুর্গাপুজোর শেষ দিন। অশুভ যা কিছু তার বিনাশ এবং শুভ শক্তির জয়ের উদযাপন হল দশেরা। দেশজুড়ে পালিত হয় রাবণ দহন। মানুষের বিশ্বাস, দশেরার দিনেই দশানন রাবণকে পরাজিত করে রামচন্দ্র রাবণকে বধ করে যুদ্ধে জয়ী হন। তাই এই উৎসব আসলে অসত্যের বিরুদ্ধে সত্যের বিজয়। রাবণ বধের মাধ্যমে অধর্মের নাশ করে ধর্মকে প্রতিষ্ঠা করেছিলেন রামচন্দ্র। এটাই কথিত আছে।
এদিকে কলকাতার পার্ক সার্কাসে অবস্থিত ক্লাব ‘উদ্দিপানি’ তাদের ৮৩তম দুর্গাপুজো পালন করছে এই বছর। পার্ক সার্কাস সার্বজনীন দুর্গোৎসব এবার গাঁটছড়া বেঁধেছে নয়াদিল্লির প্রযুক্তি সংস্থা বটল্যাব ডায়নামিক্সের সঙ্গে এই শো করার জন্য। এই বিষয়ে আয়োজক কমিটির সদস্য অর্জুন ধাওয়ান বলেন, ‘এটা ভারতবর্ষের প্রথম লাইট অ্যান্ড সাউন্ড শো রাবণ দহনের। আমরা গত সপ্তাহে এটা করার অনুমতি পেয়েছে কেন্দ্রীয় স্বরাষ্ট্রমন্ত্রকের কাছ থেকে।’ মা দুর্গার প্রতিমা বিসর্জন এবং রাবণ দহন—এই দুইয়ে মিলে দশেরা। এবার সেটাই তুলে ধরতে অভিনব উদ্যোগ নেওয়া হচ্ছে।
আরও পড়ুন: এসএসকেএম হাসপাতালকে চিঠি দিল ইডি, কালীঘাটের কাকুর কণ্ঠস্বরের নমুনা চাইল
অন্যদিকে রাবণের ১০টি মাথাকে মানুষের ১০টি খারাপ মানসিকতার সঙ্গে তুলনা করা হয়। যেমন— রাগ, লোভ, হিংসা, অহংকার, অসহিষ্ণুতা, অসংবেদনশীলতা, ভয়, ঘৃণা, অনুশোচনা এবং লালসা। এই খারাপ স্বভাবগুলির বিনাশ সাধনের প্রতীকই রাবণ দহন। আর এই রাবণ দহন করতে গিয়ে শহরের আকাশে যে লাইট অ্যান্ড সাউন্ড শো করা হচ্ছে সেটার মহড়া চলেছে কয়েকদিন ধরে। সোমবার শেষ মহড়া দেওয়া হয়েছে। এই বিষয়ে নয়াদিল্লির প্রযুক্তি সংস্থার ম্যানেজিং ডিরেক্টর সরিতা অহলাওয়াত বলেন, ‘এটা অনেকটা মুভির মতো ২ডি এবং ৩ডি’র ছবি দিয়ে করা হচ্ছে। প্রত্যেকটি ড্রোনই লাল, নীল এবং সবুজ এলইডি আলো নিয়ে আকাশে উড়বে। সঙ্গে থাকবে উপযুক্ত মিউজিক। সমস্ত ড্রোনই একটি কম্পিউটার থেকে নিয়ন্ত্রণ করা হবে।’