কলকাতা হাইকোর্টের রায়ে প্রায় ২৬ হাজার শিক্ষক এবং অশিক্ষক কর্মীর চাকরি বাতিল হয়েছে গতকাল। যদিও একজনকেই ওই বাতিলের তালিকায় নেই। বিচারপতি দেবাংশু বসাক এবং বিচারপতি মহম্মদ শাব্বর রশিদির ডিভিশন বেঞ্চের নির্দেশে ক্যানসার আক্রান্ত সোমা দাসের চাকরি টিকে আছে। তবে চাকরি থাকলেও এই রায় নিয়ে তিনি খুশি নন। বরং সোমা সরাসরি সমালোচনা করেছেন এই রায়ের। কারণ তিনিও জানেন এই বিপুল পরিমাণ চাকরিহারাদের মধ্যে অনেকেই যোগ্য রয়েছেন। মানবিক কারণে তাঁর চাকরি থাকলেও গোটা ২০১৬ সালের প্যানেল বাতিল করা ঠিক হয়নি। এমনটাই মনে করেন সোমা। তাই তো সোমার কথায়, ‘হেরেও জিতে আছি, নাকি জিতেও হেরে আছি, জানি না।’
এদিকে একটা বড় সমস্যা তৈরি হয়েছে। সেটা হল—এই বিপুল পরিমাণ চাকরিহারাদের মধ্যে অনেকেই এবারের লোকসভা নির্বাচনে প্রিসাইডিং অফিসার। তাঁরা বাদ পড়লে কাজ কেমন করে হবে? এটা চিন্তা বাড়িয়েছে নির্বাচন কমিশনের। কারণ দ্বিতীয় দফার নির্বাচন আছে ২৬ এপ্রিল। সেক্ষেত্রে হাতে আর তিনদিন। তার মধ্যে সুপ্রিম কোর্ট যদি স্থগিতাদেশ দেয় তো নির্বাচন প্রক্রিয়া ঠিক থাকবে। আর তা না হলে কঠিন পরিস্থিতিতে পড়তে হবে নির্বাচন কমিশনকে। তবে কলকাতা হাইকোর্টের এই রায় নিয়ে সোমা দাস বলেন, ‘এটা অপ্রত্যাশিত। আমি জানি না, আমার চাকরি বেঁচে আছে বলে খুশি কিনা, বরং দুঃখিত বহু যোগ্য প্রার্থী চাকরি হারালেন।’
আরও পড়ুন: লক্ষ্মীর ভাণ্ডার প্রকল্পের চর্চা সিপিএমের বৈঠকে, গ্রামবাংলায় প্রাসঙ্গিক হতে কৌশল
অন্যদিকে এই সোমা দাস ২০২২ সালের ১৮ এপ্রিল বীরভূমের মধুরা হাইস্কুলে যোগ দেন। এই চাকরির নির্দেশ দিয়েছিলেন তখন বিচারপতির আসনে থাকা অভিজিৎ গঙ্গোপাধ্যায়। এখন তিনি বিজেপির প্রার্থী। সোমা দাসের মেডিকেল রিপোর্ট দেখে এই চাকরির বিষয়টি বিবেচনা করেন তিনি। কিন্তু কলকাতা হাইকোর্টের এই রায়ে আরও এক সমস্যা দেখা দিয়েছে। যাঁরা আন্দোলন করছিলেন ২০১৬ সালের প্যানেলের যোগ্য বলে তাঁদের সে আন্দোলন এবার কোন পথে যাবে! কারণ ২০১৬ সালের গোটা প্যানেলটাই তো বাতিল করা হয়েছে। সুতরাং তাঁদের কী হবে? উঠছে প্রশ্ন।
এছাড়া কলকাতা হাইকোর্টের এবারের রায়েও মানবিক কারণে সোমা দাসের চাকরি বহাল রাখা হয়েছে। সেই রায় তিনি নিজে কানেই শুনেছেন। এই বিষয়ে সোমা দাসের বক্তব্য, ‘আমার বহু বন্ধু আছে যারা মেধার ভিত্তিতে লড়াই করে পরীক্ষা দিয়ে নিজেদের যোগ্য প্রমাণ করে চাকরি পেয়েছে। আজ তাদের চাকরি নেই। আদালতের এটা দেখা উচিত। যোগ্যদের চাকরি ফিরিয়ে দিতে রায়ের পুনর্বিবেচনা করা উচিত। আর এটা যত দ্রুত সম্ভব করা উচিত।’