লোকসভা নির্বাচনে এখন ভোটব্যাঙ্ক ফেরানোই লক্ষ্য সিপিএমের। কারণ বামেদের ভোটব্যাঙ্ক ট্রান্সফার হওয়াতেই লাভ হয়েছিল বিজেপির। তার জেরেই ১৮ আসন পেয়েছিল বিজেপি ২০১৯ সালের লোকসভা নির্বাচনে। এবার পরিস্থিতি পাল্টেছে। গোটা দেশে এখন বিজেপি বিরোধী হাওয়া বইছে। কিন্তু বাংলায় বিজেপিকে পিছনে ফেলে এগিয়ে আসতে চাইছে সিপিএম। আর তাই এবারও কংগ্রেসের সঙ্গে আসন সমঝোতা করে প্রতিদ্বন্দ্বিতা করতে নেমেছে। তবে একদা ‘বামদুর্গ’ বলে পরিচিত আউশগ্রামে তারা অতীত। সেখান থেকে প্রাসঙ্গিক হয়ে উঠতে মাধ্যম করছে মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়ের প্রকল্প ‘লক্ষ্মীর ভাণ্ডার’–কে। ছোট সভা থেকে শুরু করে বাড়ির উঠোনে চাটাই বৈঠক করছে তারা। সিপিএম সূত্রে খবর, সেখানেই উপস্থিত অনেক মহিলা রাজ্য সরকারের লক্ষ্মীর ভাণ্ডার প্রকল্পের কথা বলছেন। সিপিএম নেতারা পাল্টা তাঁদের আশ্বস্ত করছেন, বামেরা ক্ষমতায় এলে এই প্রকল্প চালু থাকবে।
যে সিপিএম নেতারা বলেছিলেন, এটা ভিক্ষে, দান–খয়রাতি তাঁদের আজ সেই প্রকল্পকে সামনে রাখতে হচ্ছে প্রাসঙ্গিক হয়ে ওঠার জন্য। বিজেপিও এখন বলতে শুরু করেছে ক্ষমতায় এলে তিন হাজার টাকা করে লক্ষ্মীর ভাণ্ডার দেবে। অর্থাৎ ঘুরে ফিরে সেই মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়ের প্রকল্পকেই হাতিয়ার করা হচ্ছে। তাই মহিলাদের প্রশ্ন, এলে দেবে বা বেশি দেবে বলছে। তাহলে যাঁরা দিচ্ছেন তাঁরা থাকলে ক্ষতিটা কোথায়? ২০১৯ সালের লোকসভা নির্বাচনে আউশগ্রাম বিধানসভা এলাকায় মাত্র ৯ শতাংশ ভোট পেয়েছিল বামেরা। ৩৯ শতাংশের বেশি ভোট পেয়ে বিজেপি দ্বিতীয়ের জায়গা নেয়। ২০২৩ সালের পঞ্চায়েত নির্বাচনে কিন্তু আউশগ্রাম ১ ও ২ ব্লকের পাঁচটি জেলা পরিষদ আসনেই বিজেপিকে তিন নম্বরে নামিয়ে দিয়ে বামেরা তৃণমূল কংগ্রেসের প্রধান প্রতিপক্ষ হয়ে ওঠে। সেটাকেই আরও একটু বাড়িয়ে তুলতে লক্ষ্মীর ভাণ্ডারকে চালু রাখার কথা বলছেন সিপিএম নেতারা।
আরও পড়ুন: স্থায়ী উপাচার্য পেল যাদবপুর বিশ্ববিদ্যালয়, রাজ্যের প্রস্তাবে তিন মাস পর সিলমোহর
এদিকে আউশগ্রামের প্রাক্তন সিপিএম বিধায়ক কার্তিক চন্দ্র বাগ, বাসুদেব মেটেরা জোরদার প্রচার চালাচ্ছেন। সিপিএমের গুসকরা পশ্চিম এরিয়া কমিটির সদস্য সুশান্ত ঘোষ, রাজু ধীবররা বলেন, ‘পঞ্চায়েত নির্বাচনের সাফল্যে কর্মীরা বাড়তি অক্সিজেন পেয়েছেন। অনেকেই ফিরেছেন দলে। তৃণমূল কংগ্রেস মানুষকে বোঝাচ্ছে, তাঁরা ক্ষমতায় না থাকলে লক্ষ্মী ভাণ্ডার প্রকল্প বন্ধ হয়ে যাবে। আমরা তাই পাল্টা মানুষকে বোঝাচ্ছি, এই জনমুখী প্রকল্প কখনই বন্ধ হবে না।’ সিপিএম প্রার্থী জিতলে এবং ফের রাজ্যে ক্ষমতায় এলে তা চালু থাকবে। এটাই বোঝানো শুরু হয়েছে। তবে তাতে কতটা কাজ হবে সেটা নিয়ে সন্দিহান সবপক্ষই।
অন্যদিকে সিপিএম–কংগ্রেস–বিজেপি সব দলই মানছে এই প্রকল্পে মানুষের উপকার হচ্ছে। সুতরাং তা চালু রাখার কথা বলাই ভাল। এই বিষয়ে তৃণমূল কংগ্রেসের যুবনেতা শান্তাপ্রসাদ রায়চৌধুরী বলেন, ‘গ্রামবাংলার মহিলাদের আর্থিক ক্ষমতা বেড়েছে। সেটা বিরোধীরা স্বীকার করে নিচ্ছেন। বামফ্রন্টের সময় আউশগ্রামে কোনও উন্নয়ন হয়নি। কিন্তু এখন সব জায়গায় উন্নয়ন পৌঁছে গিয়েছে। আর তাই মানুষের মনে তৃণমূল ছাড়া অন্য কোনও ভাবনা নেই।’ পাল্টা সিপিএমের পূর্ব বর্ধমান জেলা কমিটির সম্পাদক সৈয়দ হোসেনের বক্তব্য, ‘যে সমস্ত সরকারি প্রকল্প জনস্বার্থে হয়েছে সেগুলির উন্নয়ন ঘটবে। মানুষের উন্নয়নে লক্ষ্মীর ভাণ্ডারের থেকে বেশি দরকার কর্মসংস্থানের বিষয়টি সুনিশ্চিত করা।’