তপন দত্তের স্ত্রী। নিজস্ব ছবি।
সিবিআই দফতরে গেলেন তপন দত্তের স্ত্রী এবং কন্যা। বালির পরিবেশ কর্মী তপন দত্ত হত্যা মামলায় সিবিআই তাঁদের ডেকে পাঠিয়েছিল। সেখানে এই খুন নিয়ে নানা তথ্য তুলে ধরতেই তাঁরা গেলেন। আর কেন্দ্রীয় তদন্তকারী সংস্থা একাধিক বিষয়ে তাঁদের জিজ্ঞাসাবাদ করে। সেইসব প্রশ্নের উত্তর তাঁরা দিয়েছেন বলে সূত্রের খবর। তবে এদিন তপন দত্তের স্ত্রী–মেয়ে ছাড়া উপস্থিত ছিলেন তাঁর ভাই দীপক দত্ত। সিবিআই দফতরে এই খুন নিয়ে তাঁদের বয়ান নেওয়া হয়েছে বলে সূত্রের খবর। এই হত্যা মামলার তদন্ত করছে সিবিআই। আর সিবিআই খুনের ঘটনার তদন্ত করুক প্রথম থেকে চেয়ে আসছিলেন তপন দত্তের পরিবার।
এদিন তাঁরা তপন দত্তের খুন নিয়ে একাধিক তথ্যপ্রমাণ দিয়েছেন বলে জানা যাচ্ছে। এর আগে সিবিআই তদন্তকারীরা তাঁদের বাড়ি গিয়েছিলেন। তখনও নানা তথ্য দিয়েছিলেন তাঁরা। এবার বাড়তি কোনও তথ্য দিয়েছেন কিনা তা নিয়ে মুখ খোলেনি সিবিআই। তবে সিবিআই দফতর থেকে বেরিয়ে তদন্তে অসহযোগিতার অভিযোগ তুলেছেন তাঁরা রাজ্য সরকারের দিকে। তপন দত্তের স্ত্রী প্রতিমা দত্ত জানান, তদন্তের নানা বিষয়ে সিবিআই জিজ্ঞাসাবাদ করেছে। আমাদের কাছে থেকে যা কিছু জানতে চেয়েছিলেন সেসব জানিয়ে দিয়েছি। ওঁদের কাগজপত্র দিচ্ছিল না রাজ্য সরকার। তাই ওঁদের তদন্তে অনেকটা দেরি হয়ে গেল।
ঠিক কী বলছেন তপন দত্তের ভাই? তপন দত্রে ভাই দীপক দত্ত রাজ্যের বিরুদ্ধে একই ভাবে অসহযোগিতার অভিযোগ করেন। এই হত্যাকাণ্ডের বিষয়ে দীপক দত্ত বলেন, ‘আজ আমরা সিবিআইয়ের কাছে আসতে পেরে খুশি। সিবিআইয়ের কয়েকটি নথি দেখে বুঝতে পারছি সিবিআইকে রাজ্য সরকার, রাজ্য পুলিশ সহযোগিতা করছিল না। আর তাই ওঁরা সমস্ত তথ্য নিয়ে নতুন করে তদন্ত করছে। রাজ্য পুলিশের সম্পূর্ণ গাফিলতি রয়েছে। এরপরও আমাদের আশা, বিশ্বাস সিবিআই সঠিক পথে তদন্ত করছে। যারা অন্যায় করেছে তারা শাস্তি পাবেই।’ তবে সিবিআই তাঁদের ঠিক কী জিজ্ঞাসা করেছে? সেটা নিয়ে কিছু বলতে চাননি দীপকবাবু।
এই হত্যাকাণ্ড নিয়ে আগে অনেক জলঘোলা হয়েছে। কারণ তপন দত্তের পরিবার তৃণমূল কংগ্রেসের বিধায়কের বিরুদ্ধে অভিযোগ তুলেছিলেন আগে। তিনি এই খুনের পিছনে রয়েছে বলে মনে করেন তপন দত্তের পরিবার। সিবিআই তদন্ত নিয়ে মেয়ে প্রিয়াঙ্কা দত্ত জানান, দীর্ঘ ১১ বছর পর রায় মিলেছে সিবিআই তদন্ত হবে। তদন্তকারী অফিসারদের সঙ্গে কথা বলে বুঝতে পারলাম ওনারা আদালতের রায় পাওয়ার পরেও আট মাস পর হাতে অর্ডারের কপি পেয়েছে। এই খুনের ঘটনা নিয়ে আগে অনেকবার তথ্য প্রমাণের নথি চাওয়া হয়েছিল। কিন্তু তা ওঁদের দেওয়া হয়নি রাজ্যের পক্ষ থেকে। তাই অনেকটা দেরি হল। এত যখন অপেক্ষা করেছি একটা সুরাহা পাবই।
ঠিক কী ঘটেছিল তপন দত্তের? ২০১১ সালের ৬ মে। এই তারিখে রাতে মোটরবাইকে বাড়ি ফিরছিলেন বালির পরিবেশ কর্মী তপন দত্ত। তখন তাঁকে কয়েকজন দুষ্কৃতী ঘিরে ফেলে। আর একাধিক গুলি চালানো হয় তাঁর শরীরের উপর। সেই গুলির আঘাতে ঘটনাস্থলেই তাঁর মৃত্যু হয়। এই খুনের ঘটনায় প্রথমে সিআইডির হাতে তদন্তভার যায়। জলাভূমি ভরাটের বিরুদ্ধে তপন দত্ত আন্দোলন করছিলেন। যা অনেকের পছন্দ ছিল না। কিন্তু তৃণমূল কংগ্রেসের নেতার নাম উঠে আসায় পরিবার সিবিআই তদন্ত চেয়ে কলকাতা হাইকোর্টে যান। আর এই হত্যাকাণ্ডের তদন্তভার তুলে দেওয়া হয় সিবিআইয়ের হাতে।