বিজেপির সর্বভারতীয় সহ–সভাপতি কি দলের অন্দরে সাইডলাইনে? এখন এই প্রশ্ন উঠতে শুরু করেছে রাজ্য–রাজনীতির অলিন্দে। কারণ পয়লা বৈশাখের ঠিক আগের দিন অমিত শাহ যখন সিউড়িতে সভা করেছেন, তখন বিজেপির সর্বভারতীয় সহ– সভাপতি দিলীপ ঘোষ আন্দামানে। আবার ২৫ বৈশাখেও অমিত শাহের কলকাতা সফরে একবারও দেখা মিলল না দিলীপ ঘোষের। এই দূরত্ব বজায় রেখে চলা নিয়ে দলের অন্দরেই ফিসফাস শুরু হয়েছে। জোড়াসাঁকোয় নেই দিলীপ ঘোষ। পেট্রাপোলে নেই দিলীপ ঘোষ। এমনকী সায়েন্স সিটিতে রবীন্দ্র–সন্ধ্যাতেও অনুপস্থিত দিলীপ ঘোষ। সুতরাং একাধিক অমিত শাহের অনুষ্ঠানে অনুপস্থিত দিলীপ ঘোষ।
এদিকে পয়লা বৈশাখে অমিত শাহের সভা অনুপস্থিত থাকার অজুহাত দিয়ে তিনি সংবাদমাধ্যমে বলেছিলেন, সংসদীয় স্থায়ী কমিটির স্টাডি ট্যুর রয়েছে আন্দামানে। তাই তিনি কেন্দ্রীয় স্বরাষ্ট্রমন্ত্রীর সভায় থাকতে পারছেন না। সংসদীয় স্থায়ী কমিটির স্টাডি ট্যুরে থাকতেই হবে। এটা কার্যত অজুহাত বলে মনে করছেন রাজনৈতিক বিশেষজ্ঞরা। কারণ আগেও তিনি বাংলার সংগঠনের কাজে ব্যস্ত থাকায় সংসদীয় স্থায়ী কমিটির বৈঠকে অনুপস্থিত থেকেছেন। তাহলে এখন এটা এত জরুরি হয়ে পড়ল কেন? উঠছে প্রশ্ন।
অন্যদিকে অমিত শাহ বাংলায় আসছেন আর সর্বভারতীয় বিজেপির সহ–সভাপতি স্থায়ী কমিটির মিটিংয়ের অজুহাত দিয়ে দূরত্ব বজায় রাখছেন—এটা সবার চোখে লেগেছে। এমন ঘটনা ঘটার কথা নয়। তাও আবার একাধিকবার। মঙ্গলবার সায়েন্স সিটির অডিটোরিয়ামে রবীন্দ্র সন্ধ্যার অনুষ্ঠানে দিলীপ ঘোষকে ডাকাই হয়নি বলে সূত্রের খবর। অথচ সেখানে সুকান্ত মজুমদার–শুভেন্দু অধিকারী উপস্থিত ছিলেন। যেটা কিনা সর্বভারতীয় সহ–সভাপতির পদের নীচে। এই ঘটনা নিয়ে রাজ্য বিজেপিতে এখন নানা গুঞ্জন শুরু হয়েছে।
কেন দূরত্ব তৈরি হচ্ছে? দিলীপ ঘোষ সংগঠন বোঝেন। তাঁর হাত ধরেই বাংলায় বিজেপির উত্থান হয়েছে। আর শুভেন্দু–সুকান্ত কেমিস্ট্রিতে হারের ধারা অব্যাহত রয়েছে। এমনকী ২০১৯ সালের লোকসভা নির্বাচন এবং ২০২১ সালের বিধানসভা নির্বাচনে যেটুকু সাফল্য এসেছে তাতে দিলীপ ঘোষের অবদান সবচেয়ে বেশি বলে মনে করেন আদি নেতারা। তবে আর একজনের হাত ছিল। তিনি হলেন, মুকুল রায়। কিন্তু সুকান্ত–শুভেন্দুর বিরাট কোনও হাত ছিল না। এখনও তাঁদের কেমিস্ট্রি কোনও সাফল্য দেখাতে পারেনি। সূত্রের খবর, দিলীপ ঘোষ এঁদের বিরোধী। এঁরা যেভাবে দল এবং সংগঠন চালাচ্ছেন তা দিলীপ ঘোষ মেনে নিতে পারছেন না। তাই নয়াদিল্লিকে নালিশ করেছিলেন। রাজভবন আর আদালত দিয়ে যে রাজনীতি হয় না সেটা প্রথম বলেছিলেন দিলীপ ঘোষই। পাল্টা দিলীপের নামে অভিযোগ যাঁরা জমা দিয়েছেন তাঁদের সামনের সারিতে আনা হয়েছে। তাই এখন দূরত্ব।