প্রায় ২৪ ঘণ্টা অতিক্রান্ত। চাকরির দাবিতে টেট আন্দোলনকারীরা প্রাথমিক শিক্ষা পর্ষদের বাইরে আমরণ অনশনে। থেকে থেকে স্লোগানের সুর চড়াচ্ছেন আন্দোলনকারীরা। সেই আন্দোলনে সামিল হতে সোমবার রাতেই হুগলির তারকেশ্বর থেকে এসেছেন কেয়া দাস।
২০১৪ সালের প্যানেলে ছিলেন। ইন্টারভিউও দিয়েছিলেন। কিন্তু চাকরি মেলেনি। তাঁর কথায়, 'ইন্টারভিউও ভালো হয়েছিল। কিন্তু চাকরি হল না। কেন হল না এখন সিবিআই হওয়ার পর বুঝতে পারছি। যত অযোগ্য ব্যক্তিদের চাকরি দেওয়া হয়েছে। আমাদের যোগ্যতা থাকা সত্ত্বেও চাকরি মেলেনি।' তাই 'হকের চাকরির' দাবি নিয়ে সামিল হয়েছেন আন্দোলনে।
বাড়িতে আড়াই বছরের ছেলেকে স্বামীর কাছে রেখে এসেছেন। মাকে কাছে না পেয়ে সে খাচ্ছে না। তাই স্বামী বারবার ফোন করেছেন। ছেলেকে মায়ের গলা শোনাচ্ছেন। উৎকণ্ঠা বুকে তা সত্ত্বেও দাঁতে দাঁতে চিপে তবু রাস্তা বসে আছেন সহ-আন্দোলনকারীদের সঙ্গে। গলা মেলাচ্ছেন স্লোগানে।
ঝাড়গ্রাম থেকে এসেছেন মিঠু নন্দী। তাঁর নামও ২০১৪-র প্যানেলে ছিল। কিন্তু চাকরি মেলেনি। তাই আন্দোলনে সামিল হতে সোমবার রাতেই চলে এসেছেন সল্টলেকের করুণাময়ীতে। সঙ্গে রয়েছে মেয়ে। পঞ্চম শ্রেণিতে পড়ে। মিঠুর কথায়, 'মেয়ে মাকে একা ছাড়তে চায়নি তাই ও চলে এসেছে।'
'প্রাথমিক শিক্ষা সংসদের সামনের রাস্তা গোটা পশ্চিমবঙ্গ। সব জেলা থেকে লোক এসেছেন', বললেন নদিয়া জেলা থেকে আসা বিশ্বজিৎ দাস। তাঁর অভিযোগ,' পর্ষদের সভাপতি (গৌতম পাল) বলছেন, পুরনো দিনের কথা ভুলে যান। কিন্তু তা ভুলি কী করে। সেই সময় যাঁরা টেট পাশ করেছিলেন তাঁদের কেউ কেউ চল্লিশের দোরগোড়ায় বা চল্লিশ পার করবে। তাঁদের যে অতগুলো বছর নষ্ট হল এর দায় কার?এর দায় পর্ষদের। এর দায় সরকারের। তাই আমাদের দাবি তালিকায় বাদ থাকা প্রত্যেকে নিয়োগ করতে হবে।'
গোটা এলাকা ঘিরে দেয়া হয়েছে ব্যারিকেডে। আন্দোলকারীরা প্রায় প্রত্যেকেই অনশনে। ব্যারিকেডের প্রথম ধাপের বাইরে বসে রয়েছেন পুলিশকর্মীরা। একটি প্রিজন ভ্যান দাঁড় করানো ছিল। রাত বাড়তেই ভ্যানটি চলে গেল। সোমবার চাকরি প্রার্থীদের ওই এলাকা থেকে সরিয়ে দেওয়া চেষ্টা করেছিল পুলিশ। তাই এক চাকরি প্রার্থী মৃদু হেসে প্রশ্ন ছুড়ে দিলেন, ‘ভ্যানটি কি আবার ফিরবে গভীর রাতে কিংবা সকালে?’