নরেন্দ্রপুরে স্কুলের স্টাফ রুমে ঢুকে তৃণমূলি গুন্ডাদের দ্বারা শিক্ষক নিগ্রহের ঘটনায় আদালতের বেঁধে দেওয়া সময়সীমার মধ্যে কেন কাউকে গ্রেফতার করতে পারল না পুলিশ? এই প্রশ্ন তুলে বারুইপুর পুলিশ জেলার পুলিশ সুপারের কাছে রিপোর্ট তলব করলেন কলকাতা হাইকোর্টের বিচারপতি বিশ্বজিৎ বসু। মঙ্গলবার দুপুর ২টোর মধ্যে সেই রিপোর্ট জমা দিতে হবে আদালতে। একই সঙ্গে এই ঘটনায় স্কুল শিক্ষা দফতরের ভূমিকাকে তীব্র ভর্ৎসনা করেছেন বিচারপতি বসু।
এদিন বিচারপতি বসু দৃশ্যত ক্ষুব্ধ হয়ে বলেন, আদালতের নির্দেশের পরেও কেন গ্রেফতার করা গেল না কোনও অভিযুক্তকে? কেন অভিযুক্তদের গ্রেফতার করতে পারল না পুলিশ? অভিযুক্তরা কতটা প্রভাবশালী? না কি তাদের মাথার ওপর কারও হাত রয়েছে? পুলিশকে বলব, এটা অত্যন্ত গুরুতর ঘটনা। রাজনৈতিক রং না দেখে গ্রেফতার করুন।
এর পর বিচারপতি বসু বলেন, কেন আদালতের বেঁধে দেওয়া সময়সীমার মধ্যে অভিযুক্তদের পুলিশ গ্রেফতার করতে পারল না তা দুপুর ২টোর মধ্যে রিপোর্ট দিয়ে জানাতে হবে পুলিশ সুপারকে। এছাড়া আদালতে হাজির স্কুল শিক্ষা দফতরের ২ আধিকারিককে ভর্ৎসনা করে বিচারপতি বসু বলেন, ‘স্কুল শিক্ষা দফতর তৎপর হলে এই ঘটনা ঘটত না। কেন আপনাদের নাম FIR-এ যুক্ত করা হবে না? কেন অপরাধমূলক ষড়যন্ত্রের ধারা আপনাদের বিরুদ্ধে প্রয়োগ করা হবে না?’
সোমবার নরেন্দ্রপুরে শিক্ষক নিগ্রহে দায়ের মামলায় বিচারপতি বিশ্বজিৎ বসু মঙ্গলবার সকালের মধ্যে অভিযুক্ত প্রধান শিক্ষক ইমতেয়াজ আহমেদসহ FIRএ নাম থাকা ৪ জনকে গ্রেফতারির নির্দেশ দিয়েছিলেন। রাত পোহালেও তাদের কাউকে গ্রেফতার করেনি পুলিশ। সঙ্গে বিচারপতি বসু নির্দেশ দেন, আদালতের পরবর্তী নির্দেশ না আসা পর্যন্ত ইমতেয়াজ আহমেদ স্কুলে ঢুকতে পারবেন না। বিচারপতি প্রশ্ন করেন, পঞ্চায়েত সদস্যরা শিক্ষা ব্যবস্থা নিয়ে এত উদ্বিগ্ন হয়ে উঠলেন কবে থেকে? একই সঙ্গে মাধ্যমিক পরীক্ষার জন্য ওই স্কুলে মধ্যশিক্ষা পর্ষদকে নতুন সেন্টার ইনচার্জ নিয়োগের নির্দেশ দিয়েছেন বিচারপতি বসু। সঙ্গে আক্রান্ত শিক্ষকদের নিরাপত্তা দিতে নির্দেশ দিয়েছেন পুলিশকে।
শনিবার নরেন্দ্রপুরের বলরামপুর মন্মথনাথ বিদ্যামন্দিরে স্কুলের স্টাফ রুমে ঢুকে শিক্ষক ও শিক্ষিকাদের মারধর করে তৃণমূল আশ্রিত একদল দুষ্কৃতী। বেলাগাম চড় - কিল – ঘুসির সঙ্গে চলে অশ্রাব্য গালাগালি। স্কুল চলাকালীন এই ঘটনায় ছাত্রছাত্রীদের মধ্যেও আতঙ্ক ছড়ায়। লন্ড ভন্ড হয়ে যায় স্টাফ রুম। সেই ঘটনায় প্রধান শিক্ষক ও স্কুলের পরিচালন সমিতির এক সদস্যসহ ৪ জনের বিরুদ্ধে FIR করেন আক্রান্ত শিক্ষকরা। ঘটনার পরদিন রবিবার ২ জনকে গ্রেফতার করা হলেও তাদের নাম FIRএ ছিল না। অভিযুক্তদের তালিকায় নাম রয়েছে বনহুগলি ২ নম্বর গ্রাম পঞ্চায়েতের তৃণমূলি সদস্য আকবর আলিরও। অভিযোগ, প্রধান শিক্ষকের বিরুদ্ধে হাইকোর্টে দুর্নীতির মামলা করায় আক্রান্ত হতে হয়েছে শিক্ষক শিক্ষিকাদের।