যুবকের দাবি যে আঠারোশো শতাব্দীর একটি প্রাচীন মুদ্রা আছে। তা ঘিরেই হুলুস্থুল কাণ্ড বেধে গেল খাস কলকাতায়। ঘটনার জেরে অপহরণ হতে হল যুবককে। ২০ লক্ষ টাকা মুক্তিপণ দাবি করা হল অপহৃত যুবকের পরিবারের কাছে। অবশেষে ওই যুবককে উদ্ধার করতে আসরে নামল পুলিশ। পাতা হল মুক্তিপণের ফাঁদ। সেই ফাঁদে পা দিতেই ধরা পড়ল ৫ জন অভিযুক্ত। তবে তদন্তে জানা গেল যে যুবকের কাছে আদপে কোনও দামি কয়েন ছিল না। সে লোক ঠকাতেই এই দাবি করে। কিন্তু তারপর নিজেই বিপাকে পড়ে।
অপহরণকারীদের কাছ থেকে উদ্ধার করা হল অপহৃত ওই যুবককেও। তথাকথিত অ্যান্টিক কয়েনকে ঘিরে হওয়া এই অপহরণের ঘটনায় ৫ অভিযুক্তকে গ্রেফতার করেছে পুলিশ। ঘটনাটি ঘটেছে দক্ষিণ শহরতলীর সোনারপুরে।
পুলিশ সূত্রে জানা গিয়েছে, সোনারপুরের বাসিন্দা অপহৃত যুবকের নাম পঙ্কজ সর্দার। তিনি মোমিনপুর এলাকার বাসিন্দা শীতল আগারওয়াল ও শাহনওয়াজ মোল্লার কাছে দাবি করেন যে ১৮৩০ সালের একটি রৌপ্য মুদ্রা তাঁর কাছে আছে। অভিযুক্ত ওই দুই যুবকও অ্যান্টিক কয়েন সংগ্রহ করে বলে জানা গিয়েছে।
জেরায় ধৃত শীতল পুলিশকে জানিয়েছে, পঙ্কজের কাছে যেই মুদ্রাটি রয়েছে, তার বাজার মূল্য ৫০ কোটি টাকা। পুলিশি জেরায় ধৃতেরা আরও জানিয়েছে, তারা জানতে পারে ওই যুবকের কাছে বহুমূল্য মুদ্রাটি রয়েছে। সেটি হাতানোর উদ্দেশ্যে প্রথমে তারা পঙ্কজের সঙ্গে বন্ধুত্ব করে। প্রথমে পঙ্কজ ওই মুদ্রা শীতলদের বিক্রি করবে বলে জানিয়েছিল। কুড়ি হাজার টাকাও নেয় সে। সেই কারণে পঙ্কজের খাওয়া-দাওয়ার পিছনে বিপুল টাকা খরচও করে অভিযুক্তরা। কিন্তু শেষ পর্যন্ত ওই মুদ্রাটির শীতলদের দিতে অস্বীকার করে পঙ্কজ। তখনই তাঁকে অপহরণের ছক কষে শীতল ও শাহনওয়াজরা। সেই পরিকল্পনা অনুযায়ী গত তিনদিন আগে পঙ্কজকে অপহরণ করে বাঁশদ্রোণীর একটি ফ্ল্যাটে আটকে রাখে অভিযুক্তরা।
এই ঘটনার পর পঙ্কজের বাড়িতে ফোন করা হয়। তার পরিবারের কাছে প্রথমে মুদ্রাটি চাওয়া হয়। তবে পঙ্কজের পরিবারের লোকেরা অপহরণকারীদের স্পষ্ট জানিয়ে দেন যে, তাঁরা ওই মুদ্রার ব্যাপারে কিছুই জানেন না। এরপরই পঙ্কজকে ছাড়াতে ২০ লক্ষ টাকা মুক্তিপণ দাবি করে বসে অপহরণকারীরা। সেই মুক্তিপণের টাকা সূর্যসেন মেট্রো স্টেশনের কাছে হাত বদল হওয়ার সিদ্ধান্ত নেওয়া হয়।
অবশ্য বুধবার দুপুরে সোনারপুর থানায় গিয়ে ছেলের অপহরণের অভিযোগ দায়ের করেন পঙ্কজের পরিবার। অভিযোগ পেয়ে তদন্তে নামে সোনারপুর থানার পুলিশ। পূর্ব পরিকল্পনা অনুযায়ী ২০ লক্ষ টাকা নিয়ে সূর্যসেন মেট্রো স্টেশনের সামনে হাজির হন পঙ্কজের পরিবারের সদস্যরা। অবশ্য তার আগেই সাদা পোশাকের পুলিশ স্টেশন চত্বর ঘিরে ফেলে। ওত পেতে অপহরণকারীদের অপেক্ষা করতে থাকেন তদন্তকারীরা। মুক্তিপণের টাকা নিতে এলে প্রথমেই ঘটনাস্থল থেকে শীতল ও নান্টু ভট্টাচার্য নামে আরেক যুবককে গ্রেফতার করে পুলিশ। ধৃতদের জেরা করে সূর্যসেন স্টেশনের কাছেই একটি ইনোভা গাড়ির মধ্যে থেকে পঙ্কজকে উদ্ধার করে পুলিশ। ঘটনাস্থল থেকে আরও তিনজন অভিযুক্তকে গ্রেফতার করা হয়।