কলেজ বা ইউনিভার্সিটিতে পড়াকালীন অনেকের সঙ্গে এমন ঘটনা ঘটেছে যে, ক্লাসে পড়ানো বিষয় মাথার ওপর দিয়ে বেরিয়ে গিয়েছে। বন্ধু বা সিনিয়রদের থেকেও মেলে না কোনও সাহায্য। তবে তাঁর উপায়ও ছিল! অফ-পিরিয়ডে প্রফেসরদের শরণাপন্ন হওয়া। তাঁরা কিন্তু সেই ‘মাথার ওপর দিয়ে উড়ে যাওয়া’ বিষয়টিকে সানন্দে বুঝিয়েও দিতেন। তবে কলকাতা বিশ্ববিদ্যালয়ে চলছে উলট পুরাণ! সেমেস্টারের পরীক্ষার আগে ভার্সিটির বিভিন্ন বিষয়ের পড়ুয়াদের পাঠ্যসূচি বোঝানোর উদ্যোগ নিয়েছে ছাত্র সংগঠন এসএফআই। তবে এই ‘অল্টারনেটিভ ক্লাসরুম’ তৈরির উদ্যোগকে রাজনৈতিক উদ্দেশ্যপ্রণোদিত বলে মনে করছেন অন্তর্বর্তী উপাচার্য শান্তা দত্ত দে। আর এই নিয়ে দানা বাধছে নতুন দ্বন্দ্ব।
এ বিষয়ে কলকাতা বিশ্ববিদ্যালয়ের এক এসএফআই নেতার সঙ্গে যোগাযোগ করা হলে তিনি জানান, এই বিকল্প ক্লাসরুমে তাঁরা খুব ভাল সাড়া পাওয়া যাচ্ছে। বিভাগীয় সিনিয়র মেধাবী পড়ুয়ারা, জুনিয়রদের গ্রুপ ডিসকাশন, ইন্টারঅ্যাকটিভ সেশনের মাধ্যমে পাঠ্যসূচি নিয়ে কোনও ধন্দ থাকলে তা পরিষ্কার করে দিচ্ছেন।
এসএফআইয়ের আরেক নেতার অবশ্য বক্তব্য, বিশ্ববিদ্যালয়ে শিক্ষার্থী-শিক্ষকের অনুপাত সঠিক নয়। কিন্তু তা-ও শিক্ষকেরা চেষ্টা করছেন। কিন্তু ভর্তির কয়েক মাসের মধ্যে পরীক্ষায় বসতে গিয়ে দেখা যাচ্ছে, অনেকেরই সিলেবাস যথাযথ ভাবে সম্পূর্ণ হয়নি বা পুরো বিষয়টি শিখে ওঠা হয়নি। ক্লাসের সংখ্যাও কম হচ্ছে।
জুনিয়রেরা সিনিয়রদের কাছে শিখবে এ নিয়ে কিসের দ্বন্দ্ব প্রশ্ন করা হলে, কলকাতা বিশ্ববিদ্যালয়ের অন্তর্বর্তী উপাচার্য শান্তা দত্ত দে এ দিন বলেন, ‘এ কথা সত্য যে শিক্ষকের সংখ্যা অপ্রতুল। তবে নতুন নিয়োগের চেষ্টা চলছে। বর্তমানে যে শিক্ষকেরা রয়েছেন, তাঁরা আপ্রাণ চেষ্টা করছেন। আর জুনিয়রেরা সিনিয়রদের কাছে শিখবে, এ তো খুব ভাল কথা। কিন্তু যেভাবে এরা বিষয়টি প্রচার করছে, তাতে এ কথা এক্কেবারে স্পষ্ট যে, এই উদ্যোগ মোটেই সাধু নয়। এর পেছনে কোনও রাজনৈতিক উদ্দেশ্য রয়েছে।’
তবে বাদানুবাদের মাঝে ছাত্র সংগঠন এসএফআই-এর এই উদ্যোগকে অনেকেই সাধুবাদ জানিয়েছেন। তাদের কথায়, শিক্ষকেরা শিক্ষকদের মতো পড়াচ্ছেন। পড়ুয়ারাও যদি আলাদাভাবে কোনও উদ্যোগ নেয়, তাতে আপত্তির কী আছে? যাই হোক, ‘অল্টারনেটিভ ক্লাসরুম’ এখন কতটা সাফল্য পায়, তা সময়ই বলবে।