ভারতে টেস্ট ক্রিকেটের ৯১ বছরের ইতিহাসে হায়দরাবাদে প্রথম বার প্রথম ইনিংসে ১০০-এর বেশি লিড নেওয়ার পরেও, হেরে যায় টিম ইন্ডিয়া। স্বাভাবিক ভাবেই এই হার ভারতের জন্য বড় ধাক্কা ছিল। ১৯০ রানের লিড নেওয়ার পরেও, ২৮ রানে হারটা হজম করা রোহিত শর্মাদের জন্য মোটেও সহজ বিষয় নয়।
তার পর আবার ঘরের মাঠে ইংল্যান্ডের বিরুদ্ধে সিরিজের প্রথম টেস্টে ভারতের খারাপ পারফরম্যান্স এই প্রথম নয়। ২০২১ সালে ভারত সিরিজের উদ্বোধনী ম্যাচে চেন্নাইয়ে বড় পরাজয়ের মুখোমুখি হয়েছিল। পরের তিনটি টেস্টের পিচগুলি স্পিনকে আরও বেশি সাহায্য করেছিল এবং ভারত সবকটি ম্যাচ জিতে সিরিজ ৩-১ পকেটে পুড়েছিল। ২০১৬ সালে আবার প্রথম টেস্ট ড্র হয়েছিল। পিচগুলি ২০২১-এর মতো ব্যাপক ভাবে পরিবর্তিত হয়নি। তবে ভারত দুরন্ত পারফরম্যান্স করে বাকি চারটি টেস্ট জিতে নিয়েছিল।
এই পরিসংখ্যানগুলো থেকেই আশা করা হচ্ছে, ভারতীয় দল আগের ২ বারের মতোই প্রত্যাবর্তন করবে। এবং তারা ঘরের কন্ডিশনে প্রত্যাবর্তন করতে জানে। তবে দ্বিতীয় টেস্টে বিরাট কোহলিকে যে পাওয়া যাবে না, তা আগে থেকেই জানা ছিল। সেই সঙ্গে চোটের জন্য বিশাখাপত্তনম টেস্ট থেকে ছিটকে গিয়েছেন কেএল রাহুল এবং রবীন্দ্র জাদেজা। সেই দিক থেকে বলা যায়, সাম্প্রতিক কালে ভারত তাদের সবচেয়ে অনভিজ্ঞ ব্যাটিং লাইন আপ নিয়ে খেলতে নামছে।
দ্বিতীয় টেস্টের জন্য ভারতের স্কোয়াডে সর্বোচ্চ রান সংগ্রহকারী অধিনায়ক রোহিত শর্মা। তাঁর সংগ্রহ ৩৮০০ রান। দ্বিতীয় সেরা রবিচন্দ্রন অশ্বিনের। তাঁর সংগ্রহ ৩২২২ রান। যশস্বী জয়সওয়াল, শুভমন গিল, শ্রেয়স আইয়ার এবং কেএস ভরতের মধ্যে শুধুমাত্র গিলই হাজারের বেশি টেস্ট রান করেছেন।
আরও পড়ুন: ইংল্যান্ডের আগ্রাসনকে দমানোর পরিকল্পনা আমাদের তৈরি- চাঁচাছোলা দাবি শ্রীকর ভরতের
এখন এমন পরিস্থিতি দাঁড়িয়েছে যে, ছন্দে না থাকা সত্ত্বেও শুভমন গিল বা শ্রেয়স আইয়ারকে বাদ দেওয়ার কথা ভাবতেও পারছে না টিম ম্যানেজমেন্ট। এই দুই তারকা তাদের শেষ ১১টি টেস্ট ইনিংসে কোনও হাফসেঞ্চুরি করতে পারেননি।
শুক্রবার সরফরাজ খান বা রজত পতিদারের মধ্যে একজনের টেস্ট অভিষেক হবে। কিন্তু তারা কি পরিবর্তন আনতে পারে? ভারতীয় এ দল এবং ঘরোয়া ক্রিকেটে ব্যাপক ভাবে সফল হয়েছে এই তারকারা। কিন্তু সিনিয়র জাতীয় দলের হয়ে টেস্ট-ম্যাচ খেলা একেবারে অন্য বিষয়। স্বভাবতই অভিষেকেই যে তাঁরা সাফল্য দিতে পারবেন, এমনটা একেবারেই বলা যাবে না।
বোলিং লাইন আপ সম্পর্কে বলতে গেলে, জাদেজার অনুপস্থিতি তিন বিভাগের জন্যই ধাক্কা। তিনি শুধু মিডল অর্ডারে একজন লিঞ্চপিনই নন একজন লিড স্পিনার এবং দলের সেরা ফিল্ডারও। তাঁর শূন্যতা পূরণের জন্য, কাকে দলে নেওয়া হবে, তা নিয়ে চিন্তা করতে গিয়ে ঘুম উড়েছে টিম ম্যানেজমেন্টের। তাঁর জায়গায় কুলদীপ যাদবকে একজন বিশেষজ্ঞ বোলার হিসেবে হয়তো খেলানো হতে পারে। কিন্তু তার মানে হবে, ব্যাট হাতে রান করার জন্য অক্ষর প্যাটেল এবং অশ্বিনের উপর চাপ বাড়বে।
আর একটি বিকল্প আছে। অর্থাৎ মহম্মদ সিরাজের জায়গায় ওয়াশিংটন সুন্দরকে বেছে নেওয়া। হায়দরাবাদে ভারতের সিরাজের এতটা প্রয়োজন ছিল না, এবং পিচ দেখে মনে হচ্ছে বিশাখাপত্তনমেও সিরাজের প্রয়োজন হবে না। একমাত্র পেসার হিসেবে কাজটা করে দিতে পারেন জসপ্রীত বুমরাহ।
ওয়াশিংটন সুন্দর একাদশে ঢুকলে, ভারতের ব্যাটিং লাইন আপে কিছুটা হলেও গভীরতা বাড়বে। এবং বলের ক্ষেত্রেও আর একটি বিকল্প যোগ হবে। সুন্দর শেষ বার কোনও টেস্ট ম্যাচ খেলেছিলেন ২০২১ সালে। ইংল্যান্ডের বিরুদ্ধেই। যে ম্যাচে তিনি একটি উইকেট তুলে নিয়েছিলেন এবং ৯৬ রান করেছিলেন। এটিই লালবলের ক্রিকেটে তাঁর সর্বোচ্চ স্কোর।
ইংল্যান্ডের বিরুদ্ধে দ্বিতীয় টেস্টের জন্য ভারতের সম্ভাব্য একাদশ: রোহিত শর্মা, যশস্বী জয়সওয়াল, শুভমন গিল, শ্রেয়স আইয়ার, রজত পতিদার/সরফরাজ খান, ওয়াশিংটন সুন্দর, কেএস ভারত, অক্ষর প্যাটেল, রবিচন্দ্রন অশ্বিন, কুলদীপ যাদব, জসপ্রীত বুমরাহ।