রাজকোটে ইংল্যান্ডের ব্যাজবলের হাতে হ্যারিকেন ধরিয়ে ৪৩৪ রানের বিশাল ব্যবধানে তৃতীয় টেস্ট জিতে নিয়েছেন রোহিত শর্মারা। মাত্র ৪ দিনেই ব্রিটিশদের বধ করেছে ভারত। ব্যাটে, বলে দাপট দেখিয়েই বড় জয় ছিনিয়ে নিয়ে সিরিজে ২-১ এগিয়ে গেল টিম ইন্ডিয়া। দ্বিতীয় ইনিংসে দুরন্ত দ্বিশতরান করেন যশস্বী জয়সওয়াল। ৫৫৭ রানের লক্ষ্যে ব্যাট করতে নেমে ধরাশায়ী হয় ইংল্যান্ড। মাত্র ১২২ রানে শেষ হয়ে যায় তাদের ইনিংস। টেস্টের ইতিহাসে এটিই ভারতের সর্বোচ্চ ব্যবধানে জয়। এর আগে নিউজিল্যান্ডের বিরুদ্ধে ৩৭২ রানে জয় পেয়েছিল ভারত। সেটাই এত দিন তাদের রেকর্ড রানে জয়ের নজির ছিল।
তবে রাজকোটে দ্বিতীয় দিনের শেষে কিন্তু অবস্থাটা মোটেও এমন ছিল না। বরং বেন ডাকেটের ঝোড়ো ব্যাটিং কিছুটা চাপেই পড়ে গিয়েছিল ভারত। টস জিতে প্রথম ইনিংসে ব্যাট করতে নেমে রোহিতরা ৪৪৫ রান করেছিলেন। দ্বিতীয় দিনের শেষে বেন ডাকেটের সেঞ্চুরির হাত ধরে ইংল্যান্ডের স্কোর ছিল ২ উইকেটে ২০৭ রান। সেখান থেকে তৃতীয় দিন সকালে ভারত ঘুরে দাঁড়ায়। এবং ইংল্যান্ডকে ৩১৯ রানে অলআউট করে দেয়।
আরও পড়ুন: ইংল্যান্ডকে যশবল! সুইং কিং অ্যান্ডারসনকে পরপর ৩ বলে ছক্কা যশস্বীর, মিস করে থাকলে দেখুন ভিডিয়ো
তবে দ্বিতীয় দিনের শেষে রোহিত শর্মার বিশেষ বার্তাতেই মোটিভেট হন দলের প্লেয়াররা। কী বলেছিলেন হিটম্যান? রাজকোট টেস্ট জেতার পর নিজেই খোলসা করলেন ভারত অধিনায়ক। বললেন, ‘যখন টেস্ট ক্রিকেট খেলা হয়, তখন সেটা ২-৩ দিনে হয় না। ৫ দিনের খেলার গুরুত্ব আমরা বুঝি। ওরা (ইংল্যান্ড) দ্বিতীয় দিন ভালো খেলে আমাদের চাপে ফেলেছিল। আমাদের বোলিংয়ের মানও অত্যন্ত ভালো। আসলে দ্বিতীয় দিনের শেষে বার্তাটি ছিল, শান্ত মেজাজে থাকতে হবে। এবং আমি সত্যিই গর্বিত যে, তৃতীয় দিন ম্যাচে আমরা অসাধারণ ভাবে প্রত্য়াবর্তন করি এবং ইংল্যান্ডকে চাপে ফেলে দিই।’
টস জিতে ব্যাটিং নিলেও, প্রথম ইনিংসে ভারতের শুরুটা মোটেও ভালো হয়নি। ৩৩ রানে তারা ৩ উইকেট হারিয়ে বসেছিল। সেই চাপের মাঝে অভিষেক হওয়া সরফরাজ খানকে না নামিয়ে, পাঁচ নম্বরে রবীন্দ্র জাদেজাকে নামানো হয়। সেই প্রসঙ্গে রোহিত বলেন, ‘আমাদের মনে হয়েছিল, এই ফর্ম্যাটে জাদেজার এত অভিজ্ঞতা আছে এবং ও অনেক রানও করেছে। আমরা বাম-ডান কম্বিনেশন চেয়েছিলাম। সরফরাজ তো সরফরাজই। আমরা ওর গুণাগুণ জানি, আমরা চেয়েছিলাম, আমরা ওকে কিছুটা সময় দিতে। আমরা দেখেছি, ও ব্যাট দিয়ে কী করতে পারে। ব্যাটিং অর্ডার নিয়ে এটি কোনও ভাবেই দীর্ঘ সময়ের পরিকল্পনা নয়। আমরা প্রতিটি টেস্ট ম্যাচ ধরে চলব, যে ম্যাচের জন্য যেটা সঠিক, সেই কাজটাই করব। প্রতিপক্ষের বোলিং আক্রমণ এবং বাকি সবটা হিসেব করেই আমরা অবস্থা বুঝে ব্য়বস্থা নেব।’
আরও পড়ুন: ব্যাজবল জমানায় প্রথম বার ডিক্লেয়ার, ১৫ বছর পর দুই ইনিংসেই ৪০০ পার, ঝামা ঘষে দিলেন রোহিতরা
এই ম্যাচে টার্নিং পয়েন্ট কি ছিল? রোহিতের দাবি, ‘প্রচুর টার্নিং পয়েন্ট রয়েছে। প্রথমটা আমাদের টসে জেতা। এই ম্যাচে টস জেতাটা গুরুত্বপূর্ণ ছিল। আমরা জানি ভারতের মাটিতে রান করাটা খুবই গুরুত্বপূর্ণ। লিডও আমাদের জন্য গুরুত্বপূর্ণ ছিল। ইংলিশ ব্যাটারদের আক্রমণের পর, আমরা যেভাবে বল করতে এসেছি, সেখানে শান্ত মেজা রাখাটাও গুরুত্বপূর্ণ হয়... বোলাররা সত্যিই দুরন্ত পারফরম্যান্স করেছে। ভুলে গেলে চলবে না, আমাদের সবচেয়ে অভিজ্ঞ বোলারও ছিল না। বোলারদের জন্য আমি গর্বিত। তার পর আমাদের দ্বিতীয় ইনিংসে, আমরা জানতাম অর্ধেক কাজ হয়ে গেছে। আমরা লিড বাড়াতে চেয়েছিলাম, এবং দুই তরুণ তাতে সাহায্য করেছে। এবং তার পর অবশেষে জাদেজা বাকি কাজটা করেছে।’
এত কিছু বললেও, যশস্বী জয়সওয়ালের দ্বিশতরান নিয়ে কিন্তু উচ্ছ্বাস শোনা যায়নি রোহিত শর্মার গলায়। তিনি বরং বলেন, ‘আমি ওর সম্পর্কে অনেক কথা বলেছি। আমি নিশ্চিত যে, দলের বাইরেও ওর সম্পর্কে নানা কথা চলছে। আমি ওকে নিয়ে আর কোনও কথা বলতে চাই না। শুধু বলব, ও ওর ক্যারিয়ারটা শুরু করেছে একটা নির্দিষ্ট উচ্চতায়।’ আসলে রোহিত চান না, ক্যারিয়ারের শুরুতেই যশস্বীর মাথা ঘুরে যাক। যশস্বী যেন মাটিতে পা রেখেই চলেন। কারণ তাঁর যে প্রতিভা রয়েছে, সেটা তাঁকে অনেক দূর নিয়ে যেতে পারে, যদি যশস্বী মাটিতে পা রেখে চলেন।